লিখেছেনঃ দূরের পাখি

প্রাচীন পৃথিবীর ধর্মচিন্তায় দেব-দেবতা আর অলৌকিক শক্তির কোনো পরিমাণগত সীমা ছিল না। সমস্তই ঐশ্বরিক, সমস্তই একইসাথে প্রাকৃতিক আবার অতিপ্রাকৃতিক। পূর্বে ছিল সনাতন, পশ্চিমে ছিল পৌত্তলিকতা। সম্ভবত সমস্ত কিছুর মূলে, সমস্ত ধর্মাচারের মূলে ছিল বোবাকালা আর মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরের নির্মোহ বাস্তবতা ও ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার দূরাশা। কোনো না কোনোভাবে কোনো না কোনো একটা অতিপ্রাকৃত শক্তিকে কিছুটা হলেও যদি পোষ মানানো যায়। যদি সেই পোষ মানানো দেবতার দয়ায় জীবনের অন্তত তুচ্ছ একটা কিছুতে হলেও নিজের পরিকল্পনামাফিক কিছু করা যায়।

প্রবন্ধটির অডিও শুনুন এখানে।

এমনিতে মানব-জীবন ছিল দোলনা থেকে কবর/দাহ/ভেসে যাওয়া পর্যন্ত একের পর এক দূর্ঘটনার উপাখ্যান। কখনো দূর্ভিক্ষের যন্ত্রণা কখনো মহামারী কখনো বন্যা আবার কখনো তীব্র তুষারপাতে পুরো দিগ্বলয় ঢেকে যাওয়া, হাড়ের ভিতরে বরফ হয়ে যাওয়ার মতো শীত। এত দিক থেকে এত এত রূপ ধরে রুদ্র প্রকৃতি মানুষকে মেরে সাফ করে দেয়ার আয়োজন তৈরী করে রেখেছে যা গুনে শেষ করার উপায় নেই। ফলতঃ প্রকৃতির রুদ্র রূপকে বশ মানানোর জন্য চেষ্টারও শেষ নেই, তাই দেবতার সংখ্যারও সীমা পরিসীমা নেই। তেত্রিশ কোটি দেবতা আদতে কল্পনাশক্তির প্রস্ফুটন নয় বরং মারা খাওয়ার তেত্রিশ কোটি ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও তাকে সামাল দেবার ভিন্ন ভিন্ন প্রচেষ্টা মাত্র।

সমাজ ও নৃতত্ত্বের বিজ্ঞানীরা কোটি কোটি দেবতা থেকে এক ঈশ্বরে মানুষের বিশ্বাস ও ধর্মাচার পরিবর্তীত হওয়ার অনেক রকমের গঠন-প্রক্রিয়ার কথা বলেন। এর কোনোটিই হয়তো পুরোপুরি সঠিক বলে প্রমাণ হচ্ছে না যদ্দিন না সময়-পরিভ্রমণের কোনো যন্ত্র বের হচ্ছে, আর তাতে চেপে মানুষ প্রাচীন পৃথিবীর প্রতিটি সময়ে প্রতিটি আনাচে কানাচে গিয়ে দেখে আসছে যে কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল। তার আগ-পর্যন্ত বহু ঈশ্বর থেকে এক ঈশ্বরে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটিকে সহস্র আঙ্গিক থেকে দেখার অভ্যাস চালু রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

এই রূপান্তরের কারণ নিয়ে আমার নিজস্ব একটু কপট একটা চিন্তা আছে। আমার মনে হয় এই রূপান্তর প্রক্রিয়া আসলে দৈবিক জগতকে বিন্যস্ত করার চেষ্টা থেকে আসেনি, যা অনেক নৃতাত্ত্বিক মনে করে থাকেন। আমার মনে হয় মানুষ আসলে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিল কোটি দেবতা দিয়েও যেহেতু কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না, কোনোভাবেই আশানুরূপ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য উপায়ে, তাহলে দেবতার সংখ্যা কমায়ে আনলেও বা ক্ষতি কিসে! অকর্মণ্যই যদি হয়, তাতে খোদা একশ না হয়ে বরং এক হলেই সুবিধা। আচারের পিছনে সময় কম নষ্ট করে সারা যায়।

বর্তমানের একেশ্বরবাদীরা যতখানি নাক উঁচু ভাব করে পৌত্তলিক ও বহুঈশ্বরবাদীদের থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ আলাদা দাবী করে, আদতে এই বিভাজন ও আলাদা দার্শনিকতা একদিনে হুট করে একটা সময় থেকে শুরু হয়ে যায়নি। মানুষের সমাজে রাষ্ট্রে রাজত্বে যেমন যতবড় স্বৈরাচারী, যত বড় স্বেচ্ছাচারী একনায়কই হোক, অধীনস্ত ও অনুগত বাহিনী ছাড়া ক্ষমতা ও শাসনের চর্চা করা কারো পক্ষে সম্ভব হয় না, তেমন করেই মানুষের কল্পনার ঈশ্বরদের জগতেও একেবারে সর্বেসর্বা সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতার মালিক একক ঈশ্বরের ধারণা বিশুদ্ধতম একেশ্বরবাদীদের কল্পনার দুনিয়াতেও নাই। না ইহুদি ধর্মে, না খ্রিষ্টান ধর্মে, না ইসলামে। সমস্ত একেশ্বরবাদীদের ঈশ্বরই ফেরেশতা, শয়তান ও এমনকি মানুষের মধ্যে থেকেও কাউকে কাউকে সামান্য পরিমাণ ঐশ্বরিক ক্ষমতার অংশীদারীত্ব দিয়েই ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকার্য চালনা করেন।

লিখিত ইতিহাসে সবচে প্রাচীন যে একেশ্বরবাদী ধারণার দেখা পাওয়া যায় ইহুদি ধর্মে তার উৎপত্তি হুট করে শুরু হয়নি। প্রথম একেশ্বরবাদী ইহুদিদের যে ঈশ্বর ইয়াওএহ বা বিকৃত উচ্চারণে জেহোভা, তিনিও শুরুতে এখনকার মতো করে নিজেকে একক ঈশ্বর দাবী করে বসেন নাই। প্রথমে তিনি ছিলেন কেবল ইহুদিদের একক ঈশ্বর।

ইহুদিদের প্রাথমিক ধর্মতত্ত্বে অন্যান্য জাতির অন্যান্য ঈশ্বরদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয় নাই, কেবল ইহুদিদের কঠোরভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে অন্যদের উপাস্যের কাছে প্রার্থনা করা ও তাদের ধর্মীয় আচারে অংশগ্রহণ করাকে। ধর্মদর্শনের এইসব ধারা যে দুর্লভ কোনো ঐতিহাসিক উৎস থেকে খুঁজে বের করতে হয়েছে এমন নয়, এখনকার মারমার কাটকাট একেশ্বরবাদী ইহুদিদের বর্তমানের ধর্মগ্রন্থ তোরাহ বা প্রাচীন পুস্তকের বিভিন্ন গল্পের মধ্যে পৌত্তলিক ও বহুঈশ্বরবাদী চিন্তার ছাপ রয়ে গেছে একেবারে চোখের সামনেই। তোরাহর আদিগল্পে ঈশ্বরের নিষেধ অমান্য করে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার পরে ইয়াওএহ তার সমকক্ষ অন্য ইশ্বরদের কাছে গিয়ে, ‘ওরা এখন আমাদের মতো হয়ে গেছে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে’ এই ভয় প্রকাশ করার গল্প রয়েছে। এখানের এই ‘আমাদের’ শব্দটিকে রাজকীয় প্রকাশভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার একটা খড়কুঁটো আঁকড়ে ধরার ধরণের চেষ্টা মাঝে মাঝে করা হয় বৈকি, কিন্তু অন্যান্য গল্পে এবং আদিপুস্তকের বাইরে ইহুদিদের প্রাচীন অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও শত শত ছোট ছোট প্রমাণ রয়ে গেছে বহুঈশ্বরবাদ ও একেশ্বরবাদের মাঝামাঝি গড়াপেটার সময়ের চিহ্ন নিয়ে।

পৌত্তলিকতা থেকে একেশ্বরবাদে উত্তরণের সময়ে ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিক ও ধর্মগুরুদের জন্য একটা বড় সমস্যা ছিল সাধারণ ধার্মিকদের মধ্যে একেশ্বরবাদের সত্যিকারের আগুন জ্বালানো ও নতুন চিন্তাকে নিজেদের ভিতরে স্বাভাবিক করে তোলা নিয়ে। পৌত্তলিকদের শত শত দেবতার নামে শত শত আচার আর উৎসবের জোয়ারে ইহুদিরা যাতে ভেসে না যায়, এজন্য নিজেদের ধর্মের ভিতরেও শত শত আচার ও হাজার হাজার খুঁটিনাটি নিয়ম-কানুনের তৈরী করা হয়। যেন তৃতীয়পক্ষের কেউ এক মুহুর্তের মধ্যেই বুঝে যায় কে পৌত্তলিক আর কে ইহুদি। এইসব আচার আর নিয়ম-কানুন খ্রিষ্টান ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যেও অনেকটা অক্ষতভাবেই রয়ে গেছে, মূলত দুইটা ধর্মই যে পুরাতনটির উপরে এবং পুরাতনটির প্রায় সমস্তকিছুকে নিয়ে একটু আধটু সংস্কার করে তৈরী করা হয়েছে তার প্রমাণ হিসাবে। তিনটা ধর্মই তাদের বর্তমানের দর্শনে যে পৌত্তলিকতাকে প্রাণান্তভাবে অস্বীকার করে, সেই পৌত্তলিকতার বড় একটা পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের অজান্তেই। মানুষের ঈশ্বর কখনোই তার কল্পনার সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। মানুষ কখনোই বিশুদ্ধ ক্ষমতা, বিশুদ্ধ একাকীত্ব আর বিশুদ্ধ পরম জ্ঞান কল্পনা করতে পারেনি। এজন্য মানুষের ঈশ্বর সর্বময় ক্ষমতা জ্ঞান ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার অধিকারী হয়েও কার্যনির্বাহের জন্য ফেরেশতা তৈরী করেন, বছর বছর শবে বরাতে ও ইয়াম কাপুরে পরবর্তী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন, দেবদূতের মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষের কাছে গোপনে খবর পাঠান যেন মানুষ তার উপাসনা করে ও তার কাছে ক্ষমা চায়। কী অদ্ভুত আধাখ্যাচড়া স্বয়ংসম্পূর্ণতা!

কার্যনির্বাহে ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে একক স্বয়ংসম্পূর্ণ ঈশ্বরের কল্পনা বরং তার দার্শনিক প্রতিবিম্বের চাইতে সহজ ছিল। কিন্তু মানুষ সহজতর বিষয়টিতেই নিজেদের ছাড়িয়ে কল্পনা করতে পারেনি, দুরুহতর দার্শনিক বোঝাপড়া তো আরো কষ্টকর। প্রকৃতির নানাবিধ দান আর ততোধিক নানাবিধ হঠকারীতার প্রত্যেকটির জন্য একটি অথবা একাধিক ঈশ্বরকে কল্পনা করে নির্মোহ প্রকৃতির সাথে একটা অর্থবহ কথোপকথনের চেষ্টা যতটাই নিরর্থক আর বারবার ব্যর্থ হওয়ার দরুণ যতটাই হতাশাব্যঞ্জক হোক, এই সমস্ত কিছুকে একটা একক ঈশ্বরের ভিতরে ঠেলেঠুলে ঢুকাতে গিয়ে যে নিদারুণ দার্শনিক মারপ্যাঁচের জন্ম হয়, তার কাছে পৌত্তলিকতার অর্থহীনতা আর হতাশা কিছুই নয়। এই দার্শনিক মারপ্যাঁচের জট খুলতে গিয়ে মানুষের যতখানি সম্মিলিত মস্তিষ্ক-ক্ষমতা আর কার্যঘণ্টা ব্যয় হয়েছে, তা এই উদ্ভট আকাট ঘোড়ার ডিমের পিছনে ব্যয় না করে বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক অনুসন্ধিৎসার পিছনে ব্যয় করলে ধার্মিকের কল্পনার স্বর্গ এর মধ্যে এই মর্তেই তৈরী করা সম্ভব হতো।

ঘটনা হচ্ছে আহারনিদ্রারতিনিষ্কাশনকর্ম সমস্তকিছুতে নিয়ম আর আচারের পর্বত তৈরী করে দিয়ে সাধারণ বিশ্বাসীকে না হয় পৌত্তলিকতার থেকে স্বাতন্ত্রতা দেয়া সম্ভব হলো, কিন্তু এই যে একক পরম ক্ষমতাশীল পরম দয়ালু আর সর্বজ্ঞানী ঈশ্বরের রাজত্বেও পৌত্তলিকতার ভিতরকার সেই আদি অর্থহীনতা আদি হতাশার কোনো সুরাহা হলো না, সেটা তো সামান্য সংবেদনশীলের মস্তিষ্কেও ক্রমাগত খোঁচাতেই থাকে, খোঁচাতেই থাকে। দয়ামায়াহীন প্রকৃতি তারপরও বিন্দুমাত্র রেহাই দেয় না। পৌত্তলিক না হয় দয়ার দেবীর সাথে রুদ্র দেবতার যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী নিজের ভালো-মন্দের এদিক সেদিক দোদুল্যমান অবস্থাকে কার্যকারণসম্পর্কিত করে কিছুক্ষণের জন্য নিজের মনকে স্বান্তনা দিতে পারে, একেশ্বরবাদীর সেই বিলাসিতাটুকুও হাতছাড়া হয়ে যায়। পরম দয়ালু দাবী করা ঈশ্বর কীভাবে লাখে লাখে বিকলাঙ্গ শিশুর অবর্ণনীয় কষ্ট আর লাখে লাখে হতভাগ্যের খুন হওয়া লাশের উপর দাঁড়িয়ে দুরাচারের ভোগ-বিলাস আর উম্মত্ততাকে সর্বভেদী দৃষ্টিতে দেখেও ঠায় বসে থাকেন?

প্রাচীন ইহুদিদের ভিতরে মরার পরে সব সুদে আসলে পুষিয়ে দেবেন পরম ক্ষমতাধর, এইটুকু মূর্খের সান্তনাও ছিল না। তাদের ধর্মতত্ত্বে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে তেমন খোলাসা কিছু ছিল না। মৃত্যুই সর্বশেষ। তাহলে এই যে একবার ব্যাবিলন একবার পার্সিয়া আর একবার রোমানরা তাদের কচুকাটা করে, ঘরদোরগবাদিপশু সহ তাড়িয়ে দেয়, ভেঙে চুরমার করে দেয় শত বছরের পরিশ্রমে গড়ে তোলা মন্দির, এইসবকিছু দেখে দেখেও কেনো মহান হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা জেহোভা কিছু করে না। ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিক অনেক ভেবেচিন্তে এর একটা অভাবনীয় সমাধান দেন। সমাধান হচ্ছে তোরা খারাপ, তাই জেহোভা তোদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন না। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে ইহুদিদের ভিতর থেকে নবীরা আসতে থাকেন। নবীদের প্রায় সকলেরই বার্তা হচ্ছে তোমরা ইহুদিরা জেহোভার দেয়া আচার আর নিয়মকানুন ঠিকমতো মানতে পারছো না, তার ধার্মিকতা ও উৎকর্ষের পরীক্ষায় তোমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছো, তাই তোমাদের দুর্দশা দেখেও সমস্ত ক্ষমতা, শক্তি ও জ্ঞান নিয়েও তিনি বসে আছেন। বটেক। আইন আর আচার যে-রকম লাখে লাখে তৈরী করা হয়েছে, তাতে কোনো মর্ত্যের মানবের একজনের পক্ষেও সমস্তগুলো মেনে চলা সম্ভব নয়। আর পুরো জাতির সবার পক্ষে তো অকল্পনীয়। তাই মারা খাও। সাত মণ ঘি যোগাড় করতে না পারলে রাধার কী দোষ? যুক্তি অকাট্য।

ইহুদিদের নীতি-স্খলন আর সীমাতিক্রমের কারণে জেহোভার ভিতরে তৈরী হওয়া ক্রোধের প্রশমনের জন্য ধর্মতাত্ত্বিকরা চালু করেন ইয়াম-কাপুরের আচার। বছরের একদিনে মন্দিরে ভেড়ার বলিদানের মাধ্যমে রক্ত দিয়ে ঈশ্বরের ক্ষোভকে এক বছরের জন্য একটু ঠান্ডা করা। কয়েকটি সহস্রাব্দ পরে এক নবীর ধারণা হলো, ভেড়ার রক্ত দিয়ে ঈশ্বরের ক্ষোভ এক বছরের জন্য শান্ত না করে ভেড়ার চাইতে মূল্যবান ও শক্তিশালী মানুষের রক্ত দিয়ে জেহোভাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা কেনো নয় ! শুরু হলো যীশুর আত্মবলিদানের ইতিহাস অথবা রূপকথা।

শুরুতে এই ধারণা ছিল যে একক যীশুর রক্ত দিয়ে জেহোভার ক্ষোভ প্রশমিত করে ইহুদিদের শত্রুদের দমন ও দুনিয়ার উপর ইহুদি জাতির এক কর্তৃত্ব দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি জেহোভা দিয়েছিলেন, তার সত্যায়ন হবে। কিন্তু মানুষের যে-কোনো ঘটনাপরিক্রমায় যা হয়, তাই হলো। যীশুর গল্প অথবা রূপকথায় বিশ্বাসীরাও দলে ও উপদলে বিভক্ত হয়ে গেল। এই বিভাজনের মূলেও সেই একেশ্বরবাদের আদিম সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে ‘কবে আসবে মনো-রঞ্জনের বাপ’?

যীশু তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর সামনে যেসব অনুসারী দাঁড়িয়ে আছে তাদের শেষ দিনের আগেই ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত শেষ দিন আসবে, যেদিন ঈশ্বর তাঁর বিচারদন্ড নিয়ে হাজির হবেন অনাচার অত্যাচারের এই দুনিয়া ধ্বংস করে যীশুর নতুর শান্তির রাজত্বের সূচনা করতে। রোমানদের অত্যাচারের শেষ তো হলোই না, বরং ৭০ সালে পুরো জেরুজালেম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে প্রধান মন্দিরকেও মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হলো। তার পরেও কেটে যাচ্ছে দশকের পর দশক। এর মধ্যে তুর্কীর মার্সিওন নামের এক খ্রিষ্টান পাদ্রী যীশুর আত্মবলিদান ও খ্রিষ্ট ধর্মতত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করলেন। তার মতে ইহুদিদের জেহোভা অতিরিক্ত বদরাগী রক্তলিপ্সু আর ক্রোধান্বিত একজন দেবতা। যীশুর বাপ আসলে অন্য একজন দয়ালু ঈশ্বর। তিনি ইহুদিদের সৃষ্টিকর্তা জেহোভার কাছ থেকে তথা জেহোভার ক্রোধের থেকে যীশুর অনুসারীদের দত্তক নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দত্তক নেয়ার মূল্য ছিল যীশুর জীবন ও রক্ত। তাই যীশুর অনুসারীদের জেহোভার প্রতিশ্রুতির আশায় বসে থাকার কোনো দরকার নেই। তাদের জন্য শান্তি ও আলোকের ধারা আসবে অন্য দিক থেকে।

মার্সিওনের এই ঝামেলাপূর্ণ ধর্মতত্ত্ব দাবানলের মতো ছড়িয়ে যেতে থাকলে মূলধারার খ্রিষ্টানরা তাকে ধর্মদ্রোহী বলে ত্যাজ্য করে নিজেদের ধর্মতত্ত্বকে গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেই গোছানোর প্রক্রিয়াতে জন্ম হয় বর্তমানের মূলধারার খ্রিষ্ট ধর্ম ও তার ধর্মতত্ত্ব। এই ধর্মতত্ত্ব তৈরীতেও প্রতিটি তাত্ত্বিককে সেই আদি ও আসল কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে যেতে হয়েছে প্রাণান্ত। এত ক্ষমতা, এত জ্ঞান, এত স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়েও ঈশ্বর কীভাবে মানুষের, এমনকি তার একনিষ্ঠ ভক্তদের উপর চলতে থাকা অনাচার, অত্যাচার, নির্যাতন খুন ও রক্তের নদী দেখেও কোনোরকমের প্রতিক্রিয়া ছাড়া বসে থাকতে পারেন? কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন এগুলো সবই ঈশ্বরের সাময়িক পরীক্ষা। কেউ প্রস্তাব করলেন এগুলো মানুষের কৃতকর্মের ফল। কেউ প্রস্তাব করলেন ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন এতকিছু দেখেও কারা ঈশ্বরের উপর আস্থা অটুট রাখতে পারে তাদের বের করে আনার লক্ষ্যে। কেউ প্রস্তাব করেন এগুলো সবই সর্বশক্তিমান ও পরম জ্ঞানী ঈশ্বরের সর্বময় পরিকল্পনার অংশ। অর্থাৎ ক্ষুদ্র একটা অংশ দেখেই প্রশ্ন করা উচিৎ হবে না। মৃত্যুর পরে একসময় মানুষ সত্যিকারভাবে সমস্তু কিছুর অর্থ বুঝতে পারবে। অর্থাৎ সমাধান সেই একই, সাত মণ ঘি যেদিন যোগাড় করতে পারবে, সেদিন বুঝবে।

এতসব ব্যাখ্যাতেও যে আসলে সমস্যার কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান তৈরী হয়নি, তা বুঝা যায় এই এতবছর পরেও সেই আদি সমস্যা নিয়ে হাজারে হাজারে নতুন দার্শনিকতা নতুন বই আর নতুন চিন্তার স্ফুরণ দেখে। পরম দয়া, সর্বময় জ্ঞান আর সর্বময় ক্ষমতা এই তিনটি গুণকে একক ঈশ্বরের মধ্যে ঠেলেঠুলে জোর করে ঢুকাতে গেলে এই সমস্যার আসলে কোনো সমাধান নাই।

মরুর অর্থনীতি, শৈল্য-মনোবিদ্যা আর খ্রিষ্ট-ইহুদি ধর্ম থেকে নেয়া বিভিন্ন অনুষঙ্গ, এই তিন ব্যঞ্জনের সমন্বয়ে রান্না করা নতুন ধর্ম ইসলামের প্রাথমিক সম্প্রসারণ আর দখলের দিন শেষে যখন সত্যিকারের ধর্মতাত্ত্বিকরা নিজেদের দর্শন ও তত্ত্বীয় কাঁটাছেড়ায় বসার সুযোগ পেলেন, তখন দেখা গেল পূর্বের ধর্মগুলো থেকে পাওয়া অন্যান্য তল্পিতল্পার সাথে সাথে সেই আদিম সমস্যাও থলে জুড়ে বসে আছে। ‘মনো-রঞ্জনের বাপ কবে আসবে’? অথবা এত ক্ষমতা, এত জ্ঞান, এত স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়েও ঈশ্বর কীভাবে মানুষের উপর চলতে থাকা অনাচার, অত্যাচার, নির্যাতন খুন ও রক্তের নদী আর নিষ্পাপ শিশুদের দগ্ধ লাশ দেখেও কোনোরকমের প্রতিক্রিয়া ছাড়া বসে থাকতে পারেন? একদল প্রস্তাব করলেন আল্লাহ সমস্ত কিছু একদিন পুষিয়ে দিবেন, তার আগ-পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া মানুষের কিছু করার নেই। আরেকদল প্রস্তাব করলেন আল্লার পরম জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দিয়ে দুনিয়াদারী যেইভাবে চলছে, এটাই মূলত সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থা। এর চাইতে ভালো কিছু সম্ভব নয়। এর বিপরীতে আরেকদল খেঁকিয়ে উঠলেন আল্লার পক্ষে কী সম্ভব আর কী সম্ভব নয়, তা নিয়ে স্বিদ্ধান্ত দেয়ার তুমি কে হে অর্বাচীন?

ইহুদি খ্রিষ্টান আর মুসলিম তিনপক্ষের দার্শনিক আর ধর্মতাত্ত্বিক একইসাথে চালিয়ে যেতে থাকলেন সেই পুরোনো পৌত্তলিক নিরর্থকতা ও হতাশার সমস্যার সাথে যুদ্ধ। ঘটনা এমন গুরুতর হয়ে দাঁড়ায় যে ঈশ্বর বা আল্লাহ কি এমন একটা পাথর বানাতে পারবেন যেটা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না বা পৃথিবী ও মহাজগত সৃষ্টির আগে তিনি কী করছিলেন, এরকমসব আপাত হাস্যকর ও ব্যঙ্গাত্নক প্রশ্নও আর হাস্যকর ও ব্যঙ্গাত্নক থাকে না। এগুলোর জবাব দেয়ার জন্যও সুস্থিরভাবে বসতে ও আলোচনা করতে হয় ধর্মতাত্ত্বিককে। কারণ ঈশ্বরের পরম দয়াকে জায়েজ করতে হলে, দুনিয়া ও বিশ্বজগতের সৃষ্টিকে ঈশ্বরের কল্যাণ-চিন্তা ও মহানুভবতার চিহ্ন হিসাবে দেখতে গেলে, ঈশ্বরের যে-কোনো কাজের সময়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয় বটে। ভালোই যদি দিয়ে থাকেন, তাইলে আরো আগে থেকে ভালো দিলেন না কেনো তিনি ? তবে কি ঈশ্বর কৃপণতা করে এসেছিলেন তার আগ পর্যন্ত?

এইসব জটিল প্রশ্নের বাণে জর্জরিত হয়ে খ্রিষ্টান এবং ইসলামি তাত্ত্বিকদের একাংশ চলে যান আরেক দার্শনিক নিরর্থকতায়। এই দলের তাত্ত্বিকরা সাফ বলে দিলেন, ঈশ্বর বা আল্লাহ কী করবেন না করবেন, তাতে মানুষের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার বা যৌক্তিকতা নাই। ঈশ্বর যা করেন, তাই মঙ্গল। মঙ্গল দিয়ে ঈশ্বরকে প্রশ্ন করা যাবে না, বরং ঈশ্বরের কাজ দিয়ে মঙ্গলকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ঈশ্বরের কাছে ভালোর জন্য প্রার্থনা করেও কেনো ভালো পাওয়া যায় না, কেনো মনোরঞ্জনের বাপ এখনো আসে না, এই প্রশ্নের জবাবে এই ধারার তাত্ত্বিকরা চলে যান একেবারে তাত্ত্বিক মেরুতে। যে মেরুতে দুনিয়া ও মহাবিশ্বের সমস্তকিছু, সমস্ত খুঁটিনাটি একেবারে শুরু থেকেই ঈশ্বর পরিকল্পনা করে রেখেছেন। কে কখন মারা যাবে, কোন শিশু কখন আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাবে, তার সবই মানুষের সমস্ত খোঁচাখুঁচির নিযুত বছর আগে থেকে ঠিক করা আছে। এই তাত্ত্বিক মেরু হয়তো ধর্মতাত্ত্বিককে কিছু সময়ের জন্য মাথা ফাটিয়ে দেয়া প্রশ্নবাণের স্রোত থেকে রেহাই দেয় বটে, কিন্তু সাধারণের কাছে এই সমাধান মূলত একেবারে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব বা ঈশ্বর নামক ধারণার একেবারে মূল থেকে উপড়ে ফেলে দেয়ার মতো। এজন্যই হয়তো এইসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করাকে সর্বোচ্চ ধর্মদ্রোহ এবং ঈশ্বরকে অস্বীকার করার পথে চলে যাওয়া বলে এ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন খ্রিষ্ট ও ইসলাম দুই ধর্মেরই বড় বড় তাত্ত্বিকগণ।

সমস্ত কিছুই পূর্বনির্ধারিত, এই ধারণা নতুন করে হাজার হাজার বছরের পুরোনো পৌত্তলিকতাকে সামনে নিয়ে আসে। সমস্ত কিছুই পূর্বনির্ধারিত হলে মানুষের আচার ও ধর্মীয় জীবন-যাপনের কোনো যৌক্তিক দরকার আর থাকে না। এইরকম অবস্থায় দুনিয়া নিয়ে মানুষ দুই রকমের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় যেতে পারে। এক হচ্ছে পুরোনো ভারতীয় পৌত্তলিক ধারণা যে ঈশ্বর সর্বভুতে বিরাজমান, অনন্ত নীহারিকা থেকে শুরু করে তুচ্ছাতিতুচ্ছ অণু ও পরমাণুতে। সেখানে মানুষের নিজেদের জীবনকে পাল্টানো বা আচারে বাঁধার আর কোনো সূত্র থাকে না। সমস্তই যদি ঈশ্বর হয় তাহলে কোনোকিছুকে পাল্টানোর চেষ্টা করা মানে ঈশ্বরের উপর ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা। দ্বিতীয় হচ্ছে খ্রিষ্টান ও ইসলামি ধর্মতাত্ত্বিকদের প্রস্তাবিত ধরা-ছোঁয়া কথপোকথন এমনকি কল্পনারও বাইরে এমন এক ঈশ্বর যার সাথে কোনোরূপ মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ নাই কারো। সেটাতো সেই আদিম সমস্যাই। কোনো রকমের দাগ বসানো যায় না যাতে, কোনোভাবেই সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ, সামান্যতম কার্যসম্পর্ক তৈরী করা যায় না যে বস্তু বা শক্তির সাথে, সেটাকে আর ঈশ্বর নাম দিয়ে লাভ কী? এই অমোঘ, কঠিন, নিয়ন্ত্রণ-অযোগ্য প্রকৃতির নিদারুণ নির্মোহতা থেকে বাঁচার জন্যই তো ঈশ্বর নামক ধারণার তৈরী। মাথা ব্যাথার সমাধান করতে গিয়ে যদি ঘাড়ের সামান্য নীচ মানে ধড় থেকে মাথাটাকেই আলাদা করে দেয়ার চিকিৎসা দেয়া হয়, সেই চিকিৎসা নিতে যাবে কোন পাগল!

ইহুদি খ্রিষ্টান আর ইসলামী ধর্মতাত্ত্বিকদের প্রস্তাবিত এই মানবিক ধরা-ছোঁয়া ও জ্ঞানকল্পনার বাইরের অর্থাৎ সহজকথায় কার্যত অস্তিত্বহীন ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে সাধারণ ধার্মিক সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। ফলত আপাত একেশ্বরবাদী এইসব ধর্মের ভিতরে পুরোনো পৌত্তলিকতা থেকে থেকেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কারণ মানুষের যে আধ্যাত্মিক ক্ষত, যেই ক্ষতের উপশমের জন্য সে পেলেপুষে নিজেদের রক্ত পানি করা শ্রমের ফসল দিয়ে ধর্মতাত্ত্বিকদের বসে বসে খেতে দিয়েছে, সেই ক্ষতের কোনো সুরাহা এরা এতগুলো সহস্রাব্দ পরেও দিতে পারেনি। যে ঈশ্বরের ধারণায় তারা এখন বিশ্বাস করতে বলছে, সেই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে বিন্দুমাত্র তার ক্ষতের উপশম নাই। নির্মোহ প্রকৃতির সাথে বোঝাপড়া করার মতো, জড় দেয়ালের সাথে কথোপকথনের মতোই এই সমাধান। তাই মানুষ থেকে থেকে আবার পীর মুর্শিদ মাজার আর যীশুর উপাসনাতে লিপ্ত হয়েছে। অকর্মণ্য ও সীমার অতীত ঈশ্বর, মানুষের থেকে এত দূরে চলে গেছে যে মানুষ নৈকট্যের জন্য আরেকজন মানুষ খুঁজছে। সে মানুষ মৃত হোক, সে মানুষ হাজার বছর আগের উপকথার কেউ হোক, অন্তত তার সাথে একটা সংযোগ তৈরী করা সম্ভব মনে হয়েছে ধার্মিকের কাছে। পরমেশ্বরকে তো ধর্মতাত্ত্বিকই তার সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে একেবারে ঘোড়ার ডিমে পরিণত করে ফেলেছে। এখন যদি মানুষ আত্মিক নৈকট্যের জন্য মুর্শিদের সাথে, দয়াল বাবার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, ধর্মতাত্ত্বিক সেখানে বাগড়া দিবে কেনো ?

ধর্মতাত্ত্বিক বাগড়া দিতে চায়, কারণ সে জানে এই প্রক্রিয়া সেই তেত্রিশ কোটি দেবতা সৃষ্টির প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া একেশ্বরবাদী নয়। এই প্রক্রিয়ায় দয়াল বাবার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় হাজার হাজার দয়াল বাবার তৈরী হওয়া কেউ ঠেকাতে পারে না। কিন্তু আধ্যাত্মিক ক্ষত বুকে নিয়ে কিছু একটাকে পরম প্রেমে জড়িয়ে ধরতে চাওয়া মোহগ্রস্থের কাছে ধর্মতাত্ত্বিকের বাগাড়ম্বরের কোনো বালাই নাই। দয়াল বাবার সাথে তার সম্পর্ক প্রেমের। অনেকটাই মানবিক যৌন প্রেমের মতোই। প্রেমে যে মজনুন সে তার প্রেমিক বা প্রেমিকা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের কোনোরকমের সমালোচনা, দোষারোপ এসবকে পাত্তা দেয় না। তার প্রেমের বস্তু পুরো মহাবিশ্বের থেকে আলাদা তার কাছে। এমনকি তৃতীয়পক্ষ তার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে পছন্দ না করলেই বরং সে কিছুটা খুশী। অযাচিত প্রতিযোগীতায় যেতে হবে না তাকে। পৌত্তলিক ঠিক একারণেই একেশ্বরবাদীর তুলনায় শান্তিপূর্ণ, উদার এবং সহনশীল। এমনকি একেশ্বরবাদ নিয়ে ফেনা তুলে ফেলা ধর্মতাত্ত্বিকও ঠিক আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে পারে না ভালো করে। এজন্যই কঠোর একেশ্বরবাদী সুন্নি ইসলামের ভিতরেও আল্লাহর চাইতে নবীকে নিয়ে উম্মাদনা, নবীর ব্যাপারে এত বেশি সংবেদনশীলতা। 

একেশ্বরবাদী ধর্মতাত্ত্বিক ভালো করেই জানে এই মুর্শিদপ্রেম মূলত পৌত্তলিকতার সদর-দুয়ার এবং এর মধ্যেই তার সমস্ত অচলায়তন ভেঙে পড়ার বারুদ লুকিয়ে আছে। এজন্যই সে ধরা-ছোঁয়ার ও কথোপকথনের অর্থাৎ সম্পর্ক তৈরী করতে পারা যায়, এমন কোনো আধ্যাত্মিকতার ধারণার বিরুদ্ধে এমন খড়গহস্ত। এটা তার অস্তিত্ত্বের ওপর আঘাত।

………..
একটি খাপছাড়া আড্ডা পরিবেশনা।

Leave a Comment