খাপছাড়া আড্ডাপ্রবন্ধবই পর্যালোচনা

গোর্কির মা উপন্যাসটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কিছু কথা

লেখকঃ দীপান্বিতা দেবনাথ

ছোটবেলায় রবিনসন ক্রুশো , গালিভার্স ট্রাভেলস বা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স এর পালা শেষ হলে একটু গভীর চিন্তাভাবনার জন্য আমরা সকলেই  রুশ ভাষার সাহিত্য কম বেশি পড়েছি। আর রাশিয়ান সাহিত্যের কথা বললে আমরা কোনোভাবেই যাকে এড়াতে পারিনা তিনি হলেন  অ্যালেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ বা ম্যাক্সিম গোর্কি, এবং তাঁর যে বইটি কমবেশি আমরা সকলেই পড়েছি সেটি হলো মা।  সাহিত্যে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদ এর প্রচলনকারী আর কোনো লেখক গোর্কির মত এমন জীবনঘনিষ্ট ও প্রভাববিস্তারকারী লেখা লিখতে পেরেছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর এই প্রভাব বিস্তারের কথা বললে গোর্কির  মা উপন্যাসটির কথা প্রথমেই মাথায় আসে। ১৯০৬ সালে রচিত এ উপন্যাসটি বিশ্বের প্রায় সব ভাষাতেই অনুদিত হয়েছে এবং কোনো কোনো পাঠক জরিপে এটি সর্বাধিক পঠিত ও  বিক্রীত হিসেবে ও বিবেচিত হয়েছে। এটি কিছুটা আশ্চর্য হওয়ার মতো তথ্য বটে। কারণ, গোর্কি যে সময়ে এটি লিখেছিলেন সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি গোর্কির সবচেয়ে কম সাফল্য বা জনপ্রিয়তা পাওয়া বই। কিন্তু যতই দিন গেছে এটির পাঠকপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি! বর্তমানে এটি বিশ্বসাহিত্যের এক অন্যতম সম্পদ।

কিন্তু এমনটি কি হওয়ার কথা ছিল? মার্ক্সবাদ দিন দিন তার উপযোগিতা হারিয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে মার্ক্সবাদী সমাজের কথা ভাবা অনেকটা ইউটোপিয়ার সামিল। পুঁজিবাদ এখন বলতে গেলে প্রতিটি সমাজব্যবস্থার উঁচু থেকে নিচু সকল স্তরে বিদ্যমান। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা কোনোভাবেই বাড়ার কথা না।অথচ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ও পুঁজিবাদের দাসত্বে বন্দী পাঠকরা মার্ক্সবাদী আদর্শে রচিত এ বইটি কোনোভাবেই এড়াতে পারেননা। বরং অনেকে এটি বার বার ও পড়ে থাকেন।

উপন্যাসটির ব্যাপারে কোনো আলোচনা করার আগে আমাদের গোর্কির সম্পর্কে কিছুটা জানা  দরকার।

গোর্কি জন্মেছিলেন ১৮৬৮ সালের ১৬ মার্চ রাশিয়ার ভোলগা নদীর তীরে অবস্থিত নিজনি নোভগরদ শহরে। পারিবারিকভাবে তার নাম পেশকভ রাখা হলেও তিনি পরবর্তীতে গোর্কি নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছিলেন। গোর্কি নামটা তার নিজের দেয়া ছিল।রুশ ভাষায় যার অর্থ ছিল তেঁতো।

গোর্কির জীবন আক্ষরিক অর্থেই খুব মধুর ছিল না। তার বাবা ছিলেন কারখানার ছুতার যিনি গোর্কির চার বছর বয়সেই মারা যান। সহায় সম্বলহীন মা ভাসিলিয়েভনা পেশকভা দুই ভাইকে  নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হন।নানাবাড়িতে গোর্কির জীবন খুব একটা আনন্দে  কাটেনি। অর্থনৈতিক দৈন্য, মামাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি,মারামারি, খিস্তিখেউড়,মাতলামি, অনাচারে  ভরা এক পরিবেশে গোর্কিও হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন বখাটে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে পড়াশোনাটাও আর হয়ে ওঠেনি। তাই সে অর্থে গোর্কিকে স্বশিক্ষিত বলা যায়, অনেকটা আমাদের নজরুলের মতো। আর এজন্যে গোর্কির অপরিসীম জ্ঞানতৃষ্ণাকে ধন্যবাদ দিতে হয়, যেটা তার মাঝে না থাকলে গোর্কিও হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে যেতেন এক মাতাল, বখাটে,জীবনের কাছে প্রতিনিয়ত মার খাওয়া কোনো এক নাম না জানা যুবক হিসেবে।

এজন্যই  মা উপন্যাসে প্রথমদিকে যে পরিবেশটা আমরা দেখতে পাই সেটা আমাদের কাছে এতটা বাস্তব ও মেদহীন মনে হয়। কারণ পরিবেশটা যে গোর্কির হাতের তালুর মতন চেনা। শুধু পরিবেশ এর কথাই বা বলছি কেনো! মা উপন্যাসে আমরা যেসব চরিত্র দেখতে পাই সেসব চরিত্রের অধিকাংশই গোর্কির বাস্তব জীবনে পরিচিত কমরেডদের ছায়াবলম্বনেই আঁকা। গোর্কি যেমন একজন লেখক  ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন সক্রিয় আন্দোলনকারী ও। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো নামক লাল মলাটের বইটি গোটা রাশিয়ায় যে উথাল পাথাল পরিবর্তন এনেছিল, গোর্কি ছিলেন সেই সময়কার একজন প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও লেলিনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক।  রাশিয়ার তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের বাঁকগুলো এবং সেই বাঁকের নেপথ্যের নায়কদের গোর্কির খুব ভাল  করে চেনা। এমনকী রাশিয়ায় জারের শাসন চলাকালীন সময়ে তাঁকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ ও করতে হয়েছিল। এরকমই এক গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কারণে গোর্কিকে রাশিয়া ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে হয়েছিল। আর  মা উপন্যাসটিও রচিত হয়েছিল আমেরিকায় বসে।

যা বলছিলাম, গোর্কির উপন্যাসে আমরা যে পাভেল বা মা পেলাগেয়া নিলভনাকে দেখতে পাই তাদের সাথে  গোর্কির বাস্তবজীবনেও পরিচয় ছিল। উপন্যাসের পাভেল  চরিত্রটি যার কথা মাথায় রেখে লেখা তার নাম ছিল পিওতর জালোমভ। গোর্কি আর জালোমভের প্রথম দেখা ১৯০৫ সালে  পিটসবার্গে হলেও গোর্কি জালোমভকে আগে থেকেই চিনতেন এবং তার প্রতি এক আত্মিক টান অনুভব করতেন দুজনের আদর্শগত মিলের কারণে। জারের শাসনামলে পিওতর যখন পাঁয়ে হেঁটে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে যান, গোর্কি তখন তার জন্য টাকা পাঠাতেন। পাভেলের জীবনে যেমন ছিল সাশা, পিওতরের জীবনেও ছিল জোসেফিনা এদুয়ার্দোভনা গাশের, যিনি নিজেও ছিলেন একজন বিপ্লবী, পেশায় ছিলেন শিক্ষিকা। মা উপন্যাসে সাশা আর পাভেল ঘর বাঁধতে পেরেছিল কি না তা আমরা না জানলেও জালোমভ আর গাশের কিন্তু ঘর বেঁধেছিলেন। পিওতর যখন সাইবেরিয়ায় তার জীবনের দুঃসময়গুলো পার করছিলেন, হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জোসেফিনা গাশের ঠিকই পৌঁছেছিলেন জালোমভের কাছে। তাদের সংসার পাতার খবর শুনে গোর্কিও অর্থসাহায্য দ্বিগুণ করে দিয়েছিলেন।

গোর্কির সাহায্যেই পিওতরের নির্বাসন থেকে পালানোর ব্যবস্থা হয়। নির্বাসন থেকে পালিয়ে তিনি বলশেভিকদের গুপ্ত সঙগঠনে যোগ দেন। জীবনের শেষদিকে তিনি চাষীদের মাঝে প্রচুর কাজ করেছেন। তাদের পত্রিকা পড়ে  শোনাতেন, সহজ করে বোঝাতেন সরকারের বিভিন্ন দমনমূলক নীতিমালা ও আইন। চাষীদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন লাল অক্টোবর কলখোজ।  পিওতর এর জীবন নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে  আরও ভালো বোঝা যায় তার চিঠিগুলো পড়লে। আরেক বিপ্লবী বন্ধু গ্লেব ক্রজিজান্সকির কাছে এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,  আমার ধারণা যে গোলাম তার নিজের তুচ্ছ জীবনটা নিয়ে আর উদ্বিগ্ন নয়,নিজের স্বাধীনতার জন্যে যে সংগ্রামে কৃতসংকল্প, তার হাতে কখনো হাতকড়া ঝুললেও সে হয়ে উঠতে শুরু করেছে স্বাধীন মানুষ। আমি চাই গোলাম যেন না থাকে, গোলামদের আমি ভালোবাসি না , ভালোবাসি যোদ্ধাদের, ভালবাসি সেই লোকদের যাদের মধ্যে দেখি স্বাধীন মানুষের পৌরুষ।

পিওতরের মা আন্না কিরিলোভনা সম্পর্কে গোর্কি লিখেছিলেন, নিলভনা হল জালোমভের মায়ের প্রতিচিত্র, সরমভোয় ১৯০২ সালের ১লা মে’র বিচারের মিছিলের জন্যে পিওতর জালোমভের বিচার হয়। তার মা সংগঠনে কাজ করতেন, ছদ্মবেশে সাহিত্য পৌঁছে দিতেন।

নিলভনার মতই আন্নার জীবনটাও খুব সুখের ছিলনা। মুচি পরিবারে জন্ম, স্বামীর মৃত্যু, সাতটি ছেলেমেয়ের  একা হাতে লালন পালন সব মিলিয়ে যাকে খুব সুখের জীবন বলা যায় না।  তবে তাকে যারাই সামনাসামনি দেখেছে তাদের চোখে তিনি এক আশ্চর্য বৃদ্ধা যার সদা জীবন্ত চোখে সব সময় লেগে থাকত অমায়িক হাসি। ঠিক উপন্যাসে পাভেলের মা যেমনটা। আন্না কিরিলোভনা বিপ্লবী কাজের সাথে যুক্ত থাকাকালীন সময়েই ১৯৩৮ সালে মারা যান।

মা উপন্যাসটির বিষয়বস্তুসংক্রান্ত আলাপ গোর্কিরই একটা কথা দিয়ে শুরু করতে চাই। তিনি লিখেছিলেন, বীর-এই কথাটি মিথ্যে ও বানোয়াট; যা আছে তা হলো সাধারণ মানুষজন, মানুষ। এর বাইরে কিছু নেই।

আমরা সাধারনত সবাই ভাবি যে পৃথিবীর সব পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেন সমাজের অগ্রসর চিন্তার লোকজন, শ্রমিক শ্রেনীর লোকজন তাতে তাল মেলান শুধু। কিন্তু গোর্কির মা উপন্যাসে আমরা এই ধারনার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। আমরা দেখি কীভাবে এক সামান্য কারখানার শ্রমিক হয়ে ওঠেন  সমাজ পরিবর্তনের কারিগর, কীভাবে এক সামান্য হতভাগা গৃহিনী মা হয়ে ওঠেন বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত। পাভেলের মা থেকে তিনি হয়ে ওঠেন সবার মা, সব বিপ্লবীর মা। সবার সাহসের উৎস।

উপন্যাসে গোর্কি যেনো ইচ্ছে করেই পাভেল চরিত্রটার প্রত্যক্ষ ব্যাপ্তি একটু কম রেখেছেন। পাভেলকে তিনি দেখিয়েছেন সেই আলোকশিখারূপে যার স্পর্শে কয়লা পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়, পাভেলের জ্বালিয়ে দেয়া আলো পেলাগেয়াকে পরিবর্তিত করেছে এক নতুন মানুষে, যে মানুষ প্রতিনিধিত্ব করে পৃথিবীর সকল নির্যাতিত মানুষকে। নি্লভনা প্রতিনিধিত্ব করে সেই সমাজের যে সমাজটা আমাদের খুব চেনা; শ্রমিক শ্রেনি, সমাজের পোড় খাওয়া নির্যাতিত শ্রেনি। মদ্যপ স্বামীর মারের ভয়ে যে সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখত সেই মা যখন  গোপন ঈশতেহার প্রচারের  সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরও চিৎকার করে বলে ওঠেন “ এক হও, এক হও, সব মানুষ এক হয়ে এক বিরাট শক্তি গড়ে তোল। কিছুতেই ভয় পেয়োনা, আর বেশি ভয়ংকর কী আছে বল তো যে অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছ তার চাইতে!” তখন পাঠক হিসেবে আমাদের একটা তুমুল ঝটকা লাগে বৈ কি। কিন্তু সেইটুকু অবিশ্বাস্য নয়, বরং মনে হয় এমন টাই হবার কথা ছিল। সারাজীবন নির্যাতিত হওয়া মানুষগুলো যখন বিপ্লবের আলো খুঁজে পায় তখন তাদের আর কোনো আঁধার বা পিছুটান আটকে রাখতে পারেনা। মমতাময়ী মায়ের কাছে তখন নিজের জাদুধন ছেলেকে মিছিলের একদম সামনের কাতারে ঠেলে দেয়াটা আর ভয়ের কিছু না, গৌরবের।

গোর্কি মা চরিত্রটিকে এতটাই জীবন্ত করে তুলেছেন যার কারণে পাঠকরা খুব সহজেই নিলভনার বিপ্লবের পথে যাত্রার সাথে নিজেকে মেলাতে পারেন। এক মমতাময়ী মা, স্বামীর হাতে নির্যাতিত হবার পরে যার সবটা মনোযোগ কেন্দ্রীভুত হয় তার ছেলের উপর, ছেলের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যিনি ব্যাকুল, ছেলের মঙ্গল কামনায় যার মন সদা আর্দ্র, ছেলে আদর না করলে যিনি কপট রাগ ও দেখান এমন মা পৃথিবীর সব মুলুকেই দেখা যায়, আমাদের অধিকাংশ বাঙালি মা ই তো এমন। মায়ের মন যেমন সার্বজনীন, তেমনি নিল্ভনার মন ও চায় সবাইকে তার মাতৃস্নেহে ভরিয়ে দিতে। যার প্রমাণ আমরা পাই নিকলাই কে মা যখন তার মাতৃস্নেহে বাঁধতে চান তখন। পাভেল মায়ের আদর আর সবসময় কিছু করতে চাওয়ায় বিব্রত হয়। তাছাড়া সে যে এক পাহাড়ের মতন, বুক চিড়ে নদী বইয়ে দিলেও নিজে অটল, অভিব্যক্তিবিহীন। অন্যদিকে নিকলাই ঠিক যেনো পাহাড়ী নদী, সবসময় সে যেনো কলকল শব্দে বয়ে চলেছে। তাই মা চায় তার মাতৃসুলুভ ভালোবাসা দিয়ে সেই নদীকে বশে আনতে। কিন্ত এরকম একজন চিরাচরিত মা ই যখন হয়ে ওঠেন একদম অপরিচত এক মা, সবার থেকে আলাদা। একটু একটু করে কাজ করতে করতে, বিপ্লবী ছেলেপুলেগুলোর কথা শুনতে শুনতে অবচেতন মনেই সেই চিরপরিচিত মা যে হয়ে ওঠেন বিপ্লবের প্রতিমূর্তি তা আমরা ও টের পাইনে। সে জন্যই লেখার একদম প্রথমেই বলেছিলাম এ যুগেও কেনো মানুষ বারবার উপন্যাসটি পড়ে। কোথাও না কোথাও, কারো না কারো কাছে আমরাও ও তো নির্যাতিত, বিপ্লব শব্দটি তাই কখনোই যে তার উপযোগিতা হারায় না। আর তাই গোর্কির  নিলভনা, পাভেল, সাশা, নিকলাই,রীবিন আর লুদমিলারাও  সবসময়েই প্রাসঙ্গিক থাকে।

গোর্কি সবসময়ই মানুষকে তার করুণ অবস্থার জন্য সচেতন করতে চেয়েছেন তার লেখার মাধ্যমে। তিনি চেয়েছেন মানুষকে বোঝাতে যে তারা ঠিক কতটা বিশ্রী জীবন কাটাচ্ছে। তিনি সবসময়ই বলেছেন মানুষকে আগে বুঝতে হবে তার দৈন্যদশার কারণ সে নিজে। যতদিন না সে নিজে প্রশ্ন করা শিখছে ততদিন অত্যাচারীদের জুজু তাকে তাড়া করে ফিরবে। আগে প্রশ্ন করতে হবে তাহলেই পাওয়া যাবে সমাধান, যেমনটা পেয়েছিল মা। নিজের জীবন নিয়ে হাপিত্যেশ করার জন্য সে একজীবন ব্যয় করেনি। সে চেষ্টা করেছিল কারণ খুঁজতে। হয়ত সে আর কোনোদিনই পারেনি পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পেতে, হয়ত তাকেও দেয়া হয়েছিল নির্বাসন অথবা মৃত্যুদন্ড। কিন্তু তার জীবন পেয়েছিল এক  নতুন দিশা। সে শেষ পর্যন্ত জানতে পেরেছিল জীবনের  একমাত্র সত্য যে ,পুনরিজ্জীবিত আত্মাকে মারা যায় না কখনো। রক্তের সমুদ্দুর বইয়ে দিলেও সত্যকে ডুবিয়ে মারা যায় না।  

এজন্য এত বছর পরেও গোর্কির মা উপন্যাসটি আমাদের কোনোভাবেই এড়ানোর সু্যোগ নেই। সমাজতন্ত্রের সূর্য অস্ত গেলেও, ভোগবাদী চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপন  আমাদের ভিতরের দ্রোহী সত্তা কে ধীরে ধীরে মেরে ফেললেও আমাদের সবসময় আমাদের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করাটা জারী রাখতে হবে। যাতে কখনো বিপ্লব ডাক দিলে আমরা সচেতনভাবে সেই ডাকে সাড়া দিতে পারি; বিপ্লব যে কখনো মরে না তা তো আগেই বলেছি।

………………
অনলাইনভিত্তিক সাপ্তাহিক পাঠচক্র ‘খাপছাড়া আড্ডা’য় পঠিত।

Leave a Comment