Norwayপ্রবাসের কথা

প্রবাসের অসুখ

ইতাক তোকে মানাইছে না রে
ইক্কেবারে মানাইছে না রে …

নরওয়েতের আসার পরে প্রাথমিক ধাক্কায় আমার স্পন্ডিলাইটিসের ব্যথা খুব বেড়ে গিয়েছিলো। উন্নত চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি নিতে নিতে সেটার অবস্থা এখন বেশ ভাল; দেশে থাকা দিনগুলোর চেয়েও ভাল। কিন্তু এখন বেশ কয়েকটা নতুন রোগ লেগেছে।

ফুড এ্যালার্জি আমার কোনকালেই ছিলো না। মাস তিনেক হলো এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে হাতে হয়েছে এ্যাকজিমা বা এ জাতীয় কিছু। যতই মলম লাগাই, ততই যেন বেড়ে চলছে। চামড়া বিশেষজ্ঞের এ্যাপয়েন্টমেন্ট একটা পেয়েছি, তবে তা প্রায় ছ’মাস পরে। (এদেশে এমনই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাবার পূর্বেই আপনার রোগ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বিরাট।)

এদিক থেকে অবশ্য বেশ দ্রুতই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। সে আবার আরো দুটি নতুন রোগের কারণে যাওয়া। প্রথমত টিনিটাস। টিনিটাস হলো এমন একটা অবস্থা যাতে আপনি ২৪/৭ কানের মধ্যে ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পাবেন। এর কোন চিকিৎসা নেই। তবে আশার কথা হলো, এতে আমার হিয়ারিং ক্যাপাবিলিটি নষ্ট হয়নি। তবে খুবই বিরক্তিকর। বসন্তের রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক ভাল লাগতে পারে, তাই বলে সারা দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর … শয়নে, স্বপনে, জাগরণে … সবসময়!

টিনিটাস ছাড়াও আরেকটা কারণে ENT বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া। কয়েকমাস হলো আমি নাক ডাকা শুরু করেছি। সে আবার যেমন-তেমন নাক ডাকা নয়। না, নাটক-সিনেমায় যেভাবে দেখেন সেভাবে নয় মোটেই। এ এক কিম্ভুতকিমাকার শব্দ। মানুষ মরার পূর্বে যখন শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখন যেমন শব্দ করে, অনেকটা ওরকম।

ডাক্তার সবকিছু দেখে শুনে একটা যন্ত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এক রাতের জন্য আমাকে ওটা বুকে বেধে ঘুমাতে হবে। সে যন্ত্রটা বুকে বেধে সুইচ অন করার পরে নিজেকে কেমন আইসিসের সুইসাইড উইংয়ের সদস্য বলে মনে হচ্ছিলো। নাকের মধ্যে দুটো ছোট পাইপ ঢুকাতে হয়েছিলো বলে রক্ষা। রাতে সেই বোমা বুকে বেধে ঘুমালাম এবং পরদিন ফেরত দিয়ে আসলাম। গতকাল মেসেজ পেলাম যে, আমার নাকি ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে, সাথে বলা হয়েছে যে আমার টনসিল অপারেশন করা লাগবে।

…………..
মাঝে মাঝেই ভূমি ব্যান্ডের এই গানটা শুনিঃ

অ তুই, লাল পাহাড়ির দেশে যা
রাঙামাটির দেশে যা
ইতাক তোকে মানাইছে না রে
ইক্কেবারে মানাইছে না রে …

Leave a Comment