1971খাপছাড়া আড্ডাগল্পবাংলাদেশ

ছোটগল্পঃ দুলাল স্যারের অলৌকিক প্রত্যাবর্তন

পয়তাল্লিশ বছর পর নন্দদুলাল স্যার ফিরে এসেছেন। ‘এসেছেন’ না বলে বলা উচিত ‘এসেছিলেন’। আবার ‘এসেছিলেন’ বলাটাও কতটা যুক্তিসংগত, তা আমরা বুঝতে পারছি না, কারণ তিনি চলে যাননি; তিনি আছেন। কিন্তু তিনি যে আছেন, এটাও পুরোপুরি সত্য নয়, কেননা তিনি আসলে নেই। এ এমন এক জটিল সমস্যা যে আমরা বুঝতেই পারছি না তিনি আছেন কি নেই।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে শিমুলতলা হাটে স্যারকে আবিস্কার করেছিল আমার বন্ধু আশরাফ। নন্দদুলাল স্যার—যাকে আমরা দুলাল স্যার বলে সম্বোধন করতাম—ছিলেন আমাদের গ্রামের সরস্বতী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। পয়তাল্লিশ বছর পূর্বে স্ত্রী, পুত্র ও দুই কন্যা নিয়ে তিনি যখন গ্রাম ছেড়েছিলেন, তখন এটিই ছিল আমাদের ইউনিয়নের একমাত্র নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তো প্রশ্নই ওঠে না। দুলাল স্যার কেবল বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন গণিত ও বিজ্ঞানের একমাত্র শিক্ষকও। গ্রাম ছাড়ার পরে স্যারকে আর কোথাও দেখা যায়নি। তারপর দেশ ও রাজনীতির ইতিহাসে কত পরিবর্তন ঘটলো, কিন্তু স্যার আর ফিরলেন না।

দুলাল স্যার নিরুদ্দেশ হবার কয়েক মাস পরে, যখন সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে, বাংলাদেশে ও ভারতে তাঁর যতো আত্মীয়-স্বজন ছিল, সবখানে খোঁজ নিয়েও তাঁর কোন হদিস মেলেনি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, গ্রাম ছাড়ার পূর্বে তাঁর পরিবারে ঘটা দুর্ঘটনাটি তিনি ভুলতে পারেননি। হয় তো ভেবেছেন, পরিচিত মানুষের মাঝে বাস করলে ওটি তাঁকে সারজীবন লজ্জা দিবে। কিন্তু সে লজ্জা তো স্যারের একার ছিল না, ছিল গ্রামবাসীর সবার।

আশরাফ যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। পয়তাল্লিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া কোন ব্যক্তিকে অবিকল পুরোনো চেহারায় দেখলে কে না অবাক হবে? লোকটা একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে একবার বামে ও একবার ডানে তাকাচ্ছিল। আশরাফের মনে হলো সে কাউকে খুঁজছে, হয় তো কারো আসার কথা ওখানে।  আশরাফ বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে টের পেলো লোকটার থেকে সে চোখ ফেরাতে পারছে না, যেন কোন এক সম্মোহনী ক্ষমতা আছে তার। সে এটাও বুঝতে পারছে না তার কী করা উচিত। তাকে কি জিজ্ঞেস করবে সে স্যারের ছেলে কিনা? সে মনে মনে স্যারের ছেলের বয়স হিসেব করে দেখলো। হ্যাঁ, এরকমই তো হওয়ার কথা- ঊনপঞ্চাশ কি পঞ্চাশ।

আশরাফ খেয়াল করলো, লোকটার মুখ-চোখে এক উদভ্রান্তিক বিস্ময়—অনেকটা আশরাফের মতোই—যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার চারপাশকে। আশরাফ তার দিকে নজর রেখেই একটা সিগারেট জ্বালালো । তারপর ধীর পায়ে লোকটার দিকে এগুলো এবং মাত্র তিন কি চার ফুটের দূরত্ব রেখে থামলো। তার হঠাৎ মনে হলো, এ স্রেফ পাগলামী। লোকটা হয় তো স্যারের মতোই দেখতে অন্য কেউ হবে, অথবা এ তার মনের ভুলও হতে পারে—এতো বছর পরে স্যারের মুখটাই হয়তো মনে নেই তার। কাকে কী ভেবে অযথাই সময় নষ্ট করছে – এই ভেবে পিছনে ফেরার চিন্তা করতেই লোকটার সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেলো। দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো আশরাফ এবং লুৎফরের চায়ের দোকানে রওয়ানা হলো।

আমার মতো বিদেশে না থাকলেও গ্রামে আশরাফের খুব একটা আসা হয়ে ওঠে না। বাবা-মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন ঈদ-কুরবানীর যে কোন একটায় আসা হতো। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর পরে দু’একবার যা এসেছে, সে আমার অনুরোধে। এবারেও ঘটেছে তাই। আমিও এসেছি প্রায় তিন বছর পরে। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরে এখানে এসেছি মূলত একটু চাঙা করে তুলতে। আশরাফের সংস্পর্শে সেটা আরো ভাল হবে বলেই ওকে গ্রামে ডাকা। আশরাফ সরকারী চাকুরে। বেশিদিন ছুটি পায়নি। আর ওর স্ত্রী তো গ্রামে গিয়ে ঈদ করতে একদমই রাজী ছিলো না। তাঁকে বুঝানোর দায়িত্বটা অবশ্য আমাকেই নিতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আমার সফলতা একশত ভাগ। আশরাফের মতো শৈশবের বন্ধু না হলেও ওর স্ত্রী লতা আমার সহপাঠী। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যাচে ছিলাম আমরা এবং লতা আমার প্রতি একটু দুর্বলও ছিল। যাই হোক, গ্রামের সঙ্গে আশরাফের এই দূরত্বের ফলে আশেপাশের গ্রামের লোক তো দূরের কথা, নিজের গ্রামের লোকদেরও বেশিরভাগই চেনে না সে। আর এজন্যই সে দুলাল স্যারের মতো চেহারার লোকটিকে তার অপরিচিত কোন ব্যক্তি ভেবে লুৎফরের চায়ের দোকানে হাঁটা দিয়েছিল। কিন্তু তাকে অবাক করে দিল লোকটির হাক। “এই আশরাফ, দাঁড়া! পালাস কেন্? আর এই সন্ধ্যায় বাইরে বা কী করছিস?”

আশরাফ থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে যায় তার হাক শুনে। এ যে অবিকল নন্দদুলাল স্যারের কণ্ঠ! লোকটি দ্রুত হেঁটে এসে ধরে ফেলে আশরাফকে। আশরাফের হাতের দিকে বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে, “আরে, এইটুকু বাচ্চা ছেলে সিগারেট ধরেছিস! কাল স্কুলে আয় দেখবি!”

তার হুমকিতে সাতান্ন বছরের আশরাফ মাহমুদ যেন তের বছরের কিশোর হয়ে যায়। সে ধরেই নেয় লোকটি আর কেউ না, দুলাল স্যার। সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দ্রুত বলে সে, “স্যরি স্যার, আদাব।“ স্যারের পরিচয় সম্পর্কে সে এতোটাই নিশ্চিত হয়ে যায় যে, সে তাঁকে আদাব দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, তাঁর পা ছুঁয়ে সালামও করে এবং সেই কিশোর বয়সে পথে স্যারের সাথে দেখা হলে যে-রকম হাত দুটো পিছনে নিয়ে কাচুমাচু করতো, সে-রকম করতে থাকে।

কিন্তু চোখ ও মনের দ্বন্দকে কিছুতেই মিটাতে পারে না আশরাফ। মিটাবে কী করে সে? স্যারকে দেখতে যে তার নিজের চেয়েও তরুণ মনে হচ্ছে। অবিকল সেই বয়স ও চেহারা, যে বয়সে পয়তাল্লিশ বছর আগে তিনি হঠাৎ করেই গ্রাম থেকে অন্তর্ধান হয়ে গিয়েছিলেন। লোকটি এবার ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে, “তোরে কতবার বলেছি না আমার সাথে স্যরি বলবি না! বাংলা ভাষাকে কবে তোরা সম্মান করতে শিখবি বল! তোরা আমার শিক্ষক-জীবনের কলঙ্ক। দুঃখিত বল!”

আশরাফ একইরকম পিছনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের পিঠে চিমটি কাটে। ব্যথাবোধ তাকে নিশ্চিত করে দুলাল স্যার কোন স্বপ্ন নয়। তিনি সত্যিই তাকে শিশুকালের মতো ধমকাচ্ছেন। অথচ আশরাফ তো শিশু নয়; কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে আর দুই বছরের মধ্যেই অবসর গ্রহণ করবে সে। বিস্ময়-মাখা দৃষ্টি নিয়ে অনেকটা রোবটিক স্বরে সে বলে, “দুঃখিত স্যার।“

আশরাফ বুঝতে পারে, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। কিন্তু ভুলটা যে কী, তা সে ধরতে পারে না। কী বলবে ভেবে না পেয়ে, সে জানতে চায় দুলাল স্যার চা খাবেন কিনা। “লুৎফর খুব ভাল লেবু চা বানায়,“ সে বলে।

স্যার আগের মতোই ধমকের সুরে বলেন, “আরে বোকা, আমাকে লেবু চা খেতে দেখেছিস কখনো?” তারপর গলার স্বর একটু নামিয়ে যোগ করেন, “সুশীল ময়রার দোকানে চিনি ছাড়া দুধ চা খাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ওর দোকানটাই পাচ্ছি না। কী যে হলো বুঝতে পারছি না। সেখানে দেখি একটা দোতলা ঘর। আর সেটা একটা মুদি দোকান।“

আশরাফ ভাবছিল সে বলে দেয় যে সুশীল বেঁচে নেই। স্যার চলে যাবার কয়েকদিন পরে দোকানের মধ্যেই তাকে জবাই করা হয়। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা তার রক্তে দোকানে সাজিয়ে রাখা মিষ্টিগুলো পর্যন্ত লাল হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। কিন্তু সে বুঝতে পারলো স্যারের কাছে এসব বলে লাভ নেই; তার চেয়ে বরং তাঁর কথা মতো চলে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করাই ভাল।

দুলাল স্যার ফের বিড়বিড় করে বলেন, “কী হলো বুঝলাম না! মাত্রই তো চার দিন।“ তারপর আশরাফকে জিজ্ঞেস করেন, “আজ কি ৯ই সেপ্টেম্বর না, আশরাফ?”

“হ্যাঁ, স্যার।“

“তাহলে তো চার দিনই মাত্র। আমি এখান থেকে গিয়েছিলাম চার তারিখ রাতে। আমার স্পষ্ট মনে আছে ঐদিনই আমি সর্বশেষ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছিলাম।“

আশরাফ মনে মনে বলে, “স্যার, সেই চার তারিখ তো ছিল কয়েক যুগ পূর্বে।“ কিন্তু মুখে সে কিছুই বলতে পারে না। তার মনে পড়ে যায় যুদ্ধের সময়ে দুলাল স্যারের বলা কথাগুলো। অভিভাবক ও ছাত্রদের মিলিত এক মিটিংয়ে তিনি বলেছিলেন, “দেখুন, আমার স্কুলের ছেলে-মেয়েদের যা বয়স, তাতে ওরা যুদ্ধে যেতে পারবে না। ওরা এখন স্কুল ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকলে, যা শিখেছে তাও ভুলে যাবে। দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে ওদের তো ফের পড়াশুনা করতে হবে। তাছাড়া নতুন দেশের জন্য মেধাবী লোকবল তৈরি করতে হবে। এজন্য ওদের নতুন ধরণের শিক্ষা নিতে হবে। আমি স্কুল খোলা রাখতে চাচ্ছি। তবে ওদের ক্লাস কমিয়ে দেয়া হবে। সপ্তাহে প্রতি বিষয়ে অন্তত একটি ক্লাস হবে। আমি ওদের ইতিহাস শিখাবো।“ বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক নন্দদুলাল স্যার এবার ইতিহাস ও দর্শনের ক্লাস নিতে শুরু করলেন। স্কুলে উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। প্রতিদিন তিন ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রীদের এক কক্ষে নিয়ে তিনি পয়তাল্লিশ মিনিটের বিশেষ ক্লাসটি নিতেন। ইতিহাস-দর্শনের বাইরেও তাতে থাকতো স্বাধীন দেশে একজন নাগরিকের কর্তব্য বিষয়ক জ্ঞানদান। আশরাফ ও অন্যদের সারা জীবনের পাথেয় হয়ে আছে সে শিক্ষা।

আশরাফ এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ে যে সে অন্যদের কাছে স্যারের কী পরিচয় দিবে। তাঁকে নন্দদুলাল স্যার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে মোহাম্মদ পাগলা, যে সারাদিন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং মেয়েদের যেতে দেখলেই চুল ঢাকতে বলে, সে-ও যে বিশ্বাস করবে না, এটা নিশ্চিত। হ্যাঁ, স্যারের কথায়, চেহারায় ও আচরণে, যারা তাকে পূর্বে চিনতেন, তারা দুলাল স্যার বলে মনে করতে পারেন, তবে তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনা তাকে পাগল বিবেচনা করা। পয়তাল্লিশ বছর এক দীর্ঘ সময়। স্যার যদি এখন বেঁচে থাকতেন, তবে তাঁর বয়স হতো প্রায় একশ বছর। কিন্তু আশরাফ যাকে এখন চোখের সামেনে দেখছেন এবং যিনি কথায় ও আচরণে নিজেকে দুলাল স্যার বলে প্রতিভাত করছেন, তাঁর বয়স কোনভাবেই পঞ্চাশ-বায়ান্ন বছরের বেশি হবে না। সেপ্টেম্বরের নাতিশীতোষ্ণ বিকেলেও আশরাফ ঘামতে শুরু করে। সে আশেপাশে তাকায় কেউ তাদের দেখে ফেলছে কিনা। সে সিদ্ধান্ত নেয় আপাতত স্যারকে এই লোকসমাগম থেকে দূরে নিয়ে যাবে।

স্যার যে লেবু চা খেতে চায়নি এতে খুশীই হয় আশরাফ, কারণ লুৎফরের দোকানে সবসময়ই বেশ ভিড় থাকে। সে বেশ উৎসাহের সাথে বলে, “স্যার, সালামের দোকানে খুব ভাল গরুর দুধের চা পাওয়া যায়।” আসলে তার মাথায় কাজ করেছে অন্য চিন্তা- সালামের দোকানটি বাজারের আরেক মাথায় এবং দোকানটিতে এসময়ে খুব একটা ভিড় থাকে না। আশরাফের প্রস্তাবে দুলাল স্যার কোন সাড়া দেন না। তবে আশরাফ এটাকেই সম্মতি ধরে নেয় এবং সালামের চায়ের দোকানে হাঁটা শুরু করে। দুলাল স্যার তাকে অনুসরণ করেন। একটু যেতেই আশরাফ শুনতে পায় স্যার বিড়বিড় করে বলছেন, “অমল সাহার কাপড়ের দোকানটাও তো এখানে ছিলো। কী যে হলো বাজারটার! কিছু বুঝছি না।“

 

সালামের দোকানে চিনি ছাড়া গরুর দুধের চায়ের অর্ডার দিয়ে আশরাফ বাইরে বেরিয়ে আসে এবং আমাকে ফোন দেয়। “হালিম, তুই কোথায়? এদিকে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। আমি সালামের চায়ের দোকানে আছি। তুই তাড়াতাড়ি আয়।“

আমি তখন শিমুলতলা হাটেই ছিলাম। ঈদের পরপরই বাড়িতে কিছু কাজ করাতে হবে বলে আগেভাগেই সব গুছিয়ে রাখতে চাচ্ছিলাম, আর এজন্যই একজন রাজমিস্ত্রি ডেকে আনিসের হার্ডওয়্যারের দোকানে গিয়েছিলাম কী কী কিনতে হবে তার একটা তালিকা করতে। আশরাফের গলার স্বরে বুঝতে পারছিলাম অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে। ওর কোন বিপদ ঘটলে আমার নিজেকেই অপরাধী মনে হবে, কারণ ওকে ওর অনিচ্ছের বিরুদ্ধে গ্রামে নিয়ে এসেছিলাম আমিই। তাই ফোন পেয়ে তখনই ছুটে গেলাম সালামের চায়ের দোকানে।

 

আশরাফ আমার অপেক্ষায় বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে দৌঁড়ে এলো এবং সংক্ষেপে ঘটনাটি বললো। আশরাফের কথায় আমি এটুকু বুঝলাম যে, আশরাফ লোকটিকে সত্য সত্যই দুলাল স্যার মনে করেছে। সে তাঁর আচরণ সম্পর্কে যা ধারণা দিলো, তাতে আমিও ভিন্ন কিছু ভাবতে পারলাম না। আর দোকানে ঢুকে চায়ের কাপ হাতে যাকে দেখলাম, তাতে আমার যেটুকু সন্দেহ ছিল, তাও উধাও। এমন কী করে হয়! সেই পয়তাল্লিশ বছর আগে যে দুলাল স্যার শিমুলতলা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, অবিকল সেই মানুষটি। এমনকি যে পাঞ্জাবিটি পরে তিনি আমাদের বছরের পর বছর ক্লাস নিতেন, যা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, সেই পাঞ্জাবিটিই তিনি পরে আছেন। যেভাবে তিনি সুন্দর করে ধুতিটি পরতেন, অবিকল সেভাবেই তিনি ধুতিটি পরে আছেন। চুলের ছাটে পর্যন্ত এতটুকু পরিবর্তন নেই। এও কি সম্ভব!

আমি স্যারকে আদাব দিলাম। আগেও যেমন তিনি আদাবের উত্তর দিতেন এক গম্ভীর ‘হুমম’ শব্দে, এখনও তাই করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “বাসেত কোথায়? বাড়িতে ফিরেছিলো কি?”

আমি বুঝতে পারলাম স্যার কী বলতে চেয়েছেন। তাঁকে কী উত্তর দিবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি কি বলবো যে, স্যার, বাবা আর ফেরেন নি এবং কোনদিন ফিরবেনও না? আর তাঁকে এটাও কি জানাব যে, সরস্বতী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এখন শহীদ আব্দুল বাসেত মাধ্যমিক বিদ্যালয়? না, আমি এসবের কিছুই বলতে পারলাম না। তাঁকে বলতে পারলাম না যে স্যারের নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি থেকে তাঁর মায়ের নামটি মুছে সেখানে আমার বাবার নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি সত্য-মিথ্যার মাঝামাঝি একটি উত্তর দিলাম, “বাবা এখনো ফেরেননি স্যার।“

দুলাল স্যার তারপর দেশ নিয়ে, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে, প্রবাসী সরকার নিয়ে, যুদ্ধ নিয়ে কথা বলে চললেন। আমি ও আশরাফ বোকার মতো কেবল হা-হু করতে লাগলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, স্যারকে এখন আমাদের বাড়ি নিয়ে যাব এবং আজই কাউকে জানাবো না। গ্রামের যারা তাঁকে চিনতো, যদিও তাদের বেশিরভাগই এখন বেঁচে নেই, তারা স্যারকে এই অবস্থায় পেলে তাঁকে নিয়ে অলৌকিক বানিজ্যের পসরা বসাতে পারে।

স্যারের চা পান শেষ হতেই আমি বললাম, “স্যার, কাকি তো বাড়িতে নেই। আমাদের বাড়িতে চলেন।“

আমার কথাতে স্যার হঠাৎ কেমন দমে গেলেন। একবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর কিছু না বলেই আমাদের সাথে হাঁটা শুরু করলেন। আমরা একটা ভ্যান ভাড়া করলাম এবং ভ্যানওয়ালাকে এমন পথ দিয়ে যেতে নির্দেশ দিলাম যাতে পথে স্যারের পরিত্যক্ত বাড়িটা না পড়ে। এমনিতেও অন্ধকারে বাড়িটা খুব একটা দেখা যেতো না, আর দেখলেও স্যার চিনতে পারতেন কিনা সন্দেহ। তবুও ঐ ঝুঁকিটা নিতে চাইলাম না, কারণ বাড়িটাতে স্যারের কোন নিদর্শনই নেই এখন আর। তাঁর চলে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যেই সেটা আমির চাচা দখল করে নিয়েছিলেন এবং গাছপালা সব কেটে সেখানে দ্বিতল বাড়ি করেছেন।

 

আমরা যখন বাড়িতে ফিরি তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে খানিকটা রাত হয়ে গিয়েছিল। পুরোটা পথ আমরা ভ্যানে আসতে পারিনি। পথে ভ্যানটার একটা টায়ার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায় আধ কিলোমিটার পথ হেঁটে আসতে হয়েছিল। পথে স্যার একটাও কথা বলেননি। বেশ বাতাস বইতে শুরু করেছিল বলে আমি একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁর শীত লাগছে কিনা। তিনি হ্যাঁ-না কিছুই বলেননি।

বাড়িতে কেয়ারটেকার মোসলেম ছাড়া আর কেউ ছিল না। তবে গ্রামের বাড়িতে যে কেউ যখন তখন চলে আসতে পারে, এই ভয়ে আশরাফ ঘরে ঢুকেই দরজায় খিল লাগিয়ে দিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, আশরাফ দুলাল স্যারের পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে এতো ভয় পাচ্ছে কেন। পরেরদিন তো এমনিই সবাই জেনে যাবে। এদিকে স্যার সেই যে তাঁর স্ত্রীর কথা তোলায় কথা বন্ধ করেছিলেন, আর মুখই খুলছেন না। আশরাফ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু স্যার একদমই চুপ। তাঁর চোখে সেই বিস্ময়ভরা দৃষ্টিটাও আর নেই। ভাবলেশহীন চোখে তিনি আমাদেরকে ও ঘরের আসবাবপত্রগুলো দেখছেন আর বারবার দেয়ালে টাঙানো বাবার ছবিটার দিকে তাকাচ্ছেন।

আশরাফকে সে রাতে বাড়ি ফিরতে দিলাম না। স্যারের এভাবে ফিরে আসা, তারপর এভাবে চুপ হয়ে যাওয়া, বাড়ির পরিবেশটাকে কেমন ভৌতিক করে তুলেছিল। তাছাড়া অনেক প্রশ্ন ভিড় করেছিল আমার মাথায়। মনে হচ্ছিল আশরাফের সাথে কথা বললে কিছুটা ভারমুক্ত লাগবে। আশরাফের নিজেরও অবশ্য থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আসলে আমরা দুজনই দুলাল স্যারের অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের শেষটা দেখতে চাচ্ছিলাম।

লতাকে ফোন করে বুঝানোর দায়িত্বটা আবারও আমাকেই নিতে হলো। এসব ক্ষেত্রে আশরাফ সবসময় আমাকেই দায়িত্ব দেয়। সে জানে লতা আমাকে বিশ্বাস করে এবং আমি কিছু বললে তার বিপক্ষে খুব বেশি যুক্তি দেখাবে না। মোসলেমকে তিনজনের ডিনার প্রস্তুত করতে বলে আমি লতাকে ফোন দিলাম। আজ অবশ্য একটু বেগ পেতে হলো আমাকে। লতা বারবার আশরাফের থেকে যাওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছিল, আর আমার কাছে কোন উপযুক্ত কারণ ছিলো না। শেষ পর্যন্ত আমি একটি আধা-মিথ্যের আশ্রয় নিলাম। “আমাদের একজন কমন বন্ধু এসেছে। সে চাচ্ছে আজ আমরা একসাথে থাকি।“

 

খেতে বসে কোন কথা হচ্ছিল না আমাদের মধ্যে। আমরা দু’জন খেয়ে চললেও দুলাল স্যার একটা ভর্তা দিয়ে ভাতগুলো মাখতেই থাকলেন, একবারের জন্যও মুখে তুললেন না। একসময় সেটাও থেমে গেলো। তারপর এক অসহায় দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললেন, “হালিম, আশরাফ, আমার সব মনে পড়ে গিয়েছে।”

আমরা চমকে উঠলাম। আমাদের খাওয়া থেমে গেল। সমস্বরে বলে উঠলাম, “কী মনে পড়েছে স্যার?” আশরাফ আরো যোগ করলো, “বলুন স্যার।”

দুলাল স্যার একবার নড়লেন। তারপর বেশ নির্লিপ্ততার সাথে তাঁর জীবনের গল্প বলতে শুরু করলেন, যে গল্প আমরা বা আমাদের গ্রামের কেউ জানতো না। “চার তারিখ রাতে বাড়ি ছাড়ার পরে আমরা প্রথমে পিরোজপুরের দিকে হাঁটতে থাকি। বলেশ্বরের পারে একটা সুপারি বাগানে লুকিয়ে পার করে দিই দিনটা। রাত হলে ফের হাঁটা। একে তো অন্ধকার। তার ওপর ঝোড়-ঝোপ-জঙ্গল। কয়েক মিনিট হাঁটি, আবার জিরোই। এভাবেই কেটে গেলো রাতের প্রথম প্রহর। দ্বিপ্রহরের দিকে কৃষ্ণাষ্টমীর চাঁদ উঠলে পরে অন্ধকারটা একটু মিইয়ে আসে। আমাদের হাঁটার গতিও বেশ বেড়েছিল তখন। কিন্তু বেশিক্ষণ আর হাঁটা হলো না সে রাতে। মিনুকে সাপে কাটলো। মিনু, আমার ছোট মেয়ে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ও মারা যায়। আমরা ওকে সৎকার করবো কী, নিজেদের জীবন নিয়েই চিন্তিত। তবুও কমলা ওকে ওভাবে ফেলে রাখতে রাজি হলো না। শেষ পর্যন্ত মিনুকে বলেশ্বরে ভাসিয়ে দিই। হিন্দুমতে জলে সমাধিও গ্রহণযোগ্য। কমলা যে একটু কন্যাশোকে কাঁদবে, সেই সময়ও আমাদের হাতে ছিল না; আর শব্দ করে কান্নারও সুযোগ ছিল না। আমরা আবার হাঁটতে শুরু করি। তবে তখন প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছিল, তাই কাছাকাছি একটা সুপারী বাগানে আশ্রয় নিলাম। মশা-মাছির কামড় খেয়ে দিনটা কোনভাবে পার করে দিই। এদিকে সাথে যে মুড়ি-টুড়ি নিয়েছিলাম, তা ওখানেই শেষ হয়ে যায়। বাগানে এমন কোন ফলও পেলাম না যা ধ্রুবকে খাওয়াতে পারি। রাতে আবার হাঁটা শুরু করলাম। কিন্তু ধ্রুব এতো দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে আর হাঁটতে পারলো না।“

এ পর্যন্ত বলার পরে স্যার থামেন। আমাদেরকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেন, “ধ্রুব আমার ছেলে। তোরা তো চিনতিস ওকে। কতোই বা আর বয়স। পাঁচ পূর্ণ হয়ে ছয়ে পড়েছিল কেবল। ঘাড়ে নিলাম ওকে। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হলো না, বরং আমিই এগুতে পারছিলাম না আর। যুধিষ্ঠিরের স্বর্গযাত্রা পড়েছিস? পিছন থেকে তাঁর ভাইয়েরা একে একে পড়তে থাকে, কিন্তু যুধিষ্ঠির কেবলই সামনে এগুতে থাকেন। আমি সেই গল্প বললাম তোদের কাকীকে। বুঝতেই পারছিস কী হয়েছিল। আরো দু’রাত হাঁটলাম আমরা- আমি, কমলা এবং বিচিত্রা। ভেবেছিলাম সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লাম।“

আমরা উদ্বেগ-আশঙ্কায় দুজনেই বলে উঠি, “তারপর?”

দুলাল স্যার এক ঢোক জল পান করলেন। তারপর সেই পূর্ব নির্লিপ্ততায় বলতে শুরু করেন, “নিরাপত্তার কথা ভবে কমলাকে আগেই বলেছিলাম শাখা-সিঁদূর ব্যবহার না করতে। কিন্তু সেগুলো যে সে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলো, তা কে জানতো। অবশ্য ওগুলো না পেলেও যে আমরা রেহাই পেতাম এমন আশা ছিল না।“

আমি অবচেতনেই জিজ্ঞেস করলাম, “কেন স্যার?” প্রশ্ন করার পরে বুঝতে পারছিলাম, আমার প্রশ্নটা একটা স্টুপিড প্রশ্ন ছিল।

স্যারকে মনে হলো একটু হাসলেন। ব্যঙ্গের হাসি। তারপর বললেন, “আমার তো আর মুসলমানি করা ছিল না।”

“তারপর কী হলো স্যার?” আশরাফ জিজ্ঞেস করলো।

“তারপর আর কী! যা হবার তাই হলো। ওরা কমলাকে এবং বিচিত্রাকে ধরে নিয়ে গেলো। আর আমার পেট বরাবর চালিয়ে দিলো এক বিরাট রামদা।”

আমরা আর ‘তারপর’ বলতে পারলাম না। স্যারই বললেন, “তারপর মরে গেলাম।”

বিস্ফারিত চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা। কিছুক্ষণ কোন প্রশ্ন খুঁজে পেলাম না। ঘোর কেটে গেলে আশরাফ জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে এখানে এলেন কী করে স্যার?”

দুলাল স্যার বেশ জোরে হেসে উঠলেন। আমার মনে হলো স্যার যেন আবার সেই পুরোনো রূপে ফিরেছেন। তিনি বলতে শুরু করলেন, “আরে বোকা! ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু তাতে কি আমার গ্রামে ফেরা আটকানো যায়? আমার স্কুল আছে না? আমি না এলে তোদের পড়াবে কে? দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরে যারা দেশের জন্য কাজ করবে, তাদেরকে আমার গড়ে দিতে হবে না! বিদ্যালয় হলো গিয়ে সভ্যতার আতুরঘর।“

যদিও স্যারকে দেখতে পারছি, ছুঁতেও পারছি, তবুও সবকিছু কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছিল। আমাদের দু’জনের কেউই আত্মায় বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না অলৌকিকত্বেও। কিন্তু এর ব্যাখ্যা কী? আমার মনে হচ্ছিল স্যারের সাথে সাথে আমরাও বুঝি সময়ের পিছনে ফিরে গিয়েছি। দেশটা বুঝি এখনও পরাধীন এবং দুলাল স্যার বুঝি সত্যিই আগামীকাল আমাদের ইতিহাস ও দর্শনের ক্লাস নিবেন এবং দেশ গড়ার বক্তৃতা দিবেন। আমি ভাবছিলাম সে হলেও মন্দ হতো না; দেশটা যেভাবে সাম্প্রদায়িক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে, তাতে আরেকবার নতুন করে শুরু করাটাই সমীচিন।

স্যারকে গেস্ট রুমে শুতে দিয়ে আমি এবং আশরাফ ঘুমাতে গেলাম। ঘুম আমাদের একটুও হয়নি সে রাতে। দুই বন্ধু মিলে সারারাত স্যারের এই অসম্ভব প্রত্যাবর্তন নিয়ে ভাবছিলাম আর অতীতের গল্প করছিলাম—গত পয়তাল্লিশ বছরের গল্প—যে গল্পগুলো স্যারকে পরদিন বলতে হবে, কারণ বিগত পয়তাল্লিশটি বছরে যা যা ঘটেছে, স্যার সেগুলো সম্পর্কে আদৌ অবগত নন। স্যার জানেন না যে, দেশটা স্বাধীন হয়েছে, যদিও সে কেবল নামমাত্র স্বাধীনতা – সেদিন যেমন স্যারকে গ্রাম ছেড়ে পালাতে হয়েছিল, তেমনি আজও পালায় হিন্দুরা; যে লজ্জায় ও ভয়ে তিনি সেদিন দেশ ছেড়েছিলেন, তা আজও সমানভাবে বহাল। স্যারের বড় মেয়ে সূচিত্রাকে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে গিয়েছিল যে রাজাকারেরা, তারা খোলস পাল্টে সমাজহিতৈষী সেজেছে আজ; মুক্তিযোদ্ধাও বনে গিয়েছে দু’চারজন। আর নব্য রাজাকারদের হাতে একালের সূচিত্রারাও নিরাপদ নয়; নিরাপদ নয় এ ভূখণ্ডের একটিও অরাজাকার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। স্যার জানেন শেখ মুজিব এখনও পাকিস্তানের কারাগারে। তাঁকে আমাদের বলতে হবে মুজিবের সপরিবারে হত্যার কথা, দু’দুটো সামরিক স্বৈরাচারের কথা, জামাতে ইসলামীর রাজনৈতিক পূনর্বাসনের কথা, রাজাকারদের উত্থানের কথা, ইসলামিস্টদের আস্ফালনের কথা, এমনকি বঙ্গবন্ধু তনয়ার হেফাজত তোষণের কথা। এসব কি স্যার সহ্য করতে পারবেন? আশরাফ মত দিলো, এগুলো এখনই স্যারকে জানানো ঠিক হবে না। তিনি এসব সহ্য করতে পারবেন না। যদি কখনও জিজ্ঞেস করেন, তবেই বলবো আমরা।

ঘুম থেকে উঠে স্যারের রুমের দরজা বন্ধ দেখে আমি ও আশরাফ প্রাতভ্রমণে বের হয়েছিলাম। যখন ফিরে এলাম তখনও দরজাটা বন্ধ। আমার কেমন অস্থির লাগছিলো। দরজায় নক করে স্যারকে ডাকলাম। কোন সাড়া নেই। আশরাফও ডাকলো কয়েকবার, “স্যার, উঠুন। নাস্তা রেডি।”

ভিতর থেকে কোন উত্তর আসছে না দেখে আমরা দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম বিছানায় কেউ নেই। জানালাগুলো পর্যবেক্ষণ করলাম। না, কোথাও এতটুকু ভাঙাও নেই যে স্যার বেরিয়ে যাবেন। “তবে কি ওটা স্যারের আত্মা ছিল?” আশরাফ বললো। “নাকি আমাদের ইল্যুসন?

আশরাফের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিলাম আর বিছানাটা গুছাচ্ছিলাম। বিছানাজুড়ে বিছানো নকশী কাথাটি তুলতেই যা দেখলাম, তার কোন ব্যাখ্যা নেই। সেখানে রয়েছে একটি ক্ষয়ে-যাওয়া কঙ্কালের গুড়ো, যার মৃত্যু হয়েছিলো আরো পয়তাল্লিশ বছর আগে।

Leave a Comment