খাপছাড়া আড্ডাগল্প

ছোটোগল্পঃ সাপ

লিখেছেনঃ বায়রনিক শুভ্র

বায়রনিক শুভ্র

‘বাল শীতটাও পড়ছে!’ মেসোয়াক দাঁতে ঘষতে ঘষতে এই কথাটাই বার বার ভাবছে সাকা।

চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা। এমন শীত সাকা তার জীবনে কোনোদিন দেখেনি; রাতে লেপের সাথে কাঁথা জড়িয়ে শুয়েও গায়ের কাপুনি থামাতে পারেনি সে। শীতের সাথে যুক্ত হয়েছে উত্তরে শীতল হাওয়া। রাতে প্রস্রাব করতে বের হয়ে মনে হয়েছিল সে ঠান্ডায় জমে যাবে, আর ঘরে ঢুকতে পারবে না। অথচ এখন পাছা উদলা করে ঝোপের মধ্যে বসে আছে প্রায় আধঘন্টা।

শীতকালে কিছুতেই পেট পরিষ্কার হয় না সাকার। তাই খালি পেটে দুই গেলাস জল পান করে একটার পর একটা বিড়ি ফুঁকে যাচ্ছে সে, যদি কাঙ্ক্ষিত পায়খানা একটু হলেও বের হয়ে আসে। কিন্তু এই বিশ মিনিটে তার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

খোলা জায়গায় পায়খানা করা সাকার শৈশবের অভ্যাস। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত বর্ষায় বাড়িতে একটা স্যানিটারি ল্যাট্রিন বানানো হয়েছিল, কিন্তু সে-ল্যান্ট্রিনে একদিনের জন্যও ঢোকেনি সে। শীতের মধ্যে ছনের ঝোপে পায়খানা করতে এসে সাকা বুঝতে পারে তার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। পাছায় হাত দিয়ে সে আতকে ওঠে। পাছা তো নয় যেন দিলিপ সাহার মাছের আড়তের বরফের চাই।

না, এভাবে বসে থাকা আর পোষাচ্ছে না; এখন উঠতে হবে। ধান লাগানোর মৌসুম, এখন সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। তাই প্রাণপণে দুই বার কোঁত দিয়ে সে উঠে দাঁড়ায়। যেহেতু পেট থেকে কিছুই নির্গত হয়নি, তাই পিছনে ঠান্ডা জল ঢালার ঝুঁকিটা আর সে নেয় না। মেসোয়াক দাঁতে ঘষতে ঘষতে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। বাড়ির বেড়ার একটি উঁচু বাঁশে বদনাটা উপুড় করে রেখে চাপ-কল থেকে জল নিয়ে হাত মুখ ধোয়। তারপরে রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে আশ্রিতা বিধবা মামাতো বোনটিকে খাবার দিতে বলে।

বেগুনভর্তা, আলুভর্তা, ওলকপি ভর্তা, সরিষার তেল ও মচমচে ভাজা শুকনো মরিচ দিয়ে ভাত মেখে খেতে গিয়ে সাকার মনে পড়ে গত তিনদিন ধরেই তার পায়খানা হচ্ছে না। এ কথা মনে পড়তেই তার পেট ভরে ওঠে গ্যাসে। তবুও জোর করে মুখে খাবার গুঁজে দেয় সে। সারাদিন মাঠে থাকতে হলে পেট ভরে খাওয়া দরকার।

সাকার খাওয়ার মাঝেই তার স্ত্রী আমেনা এসে জানায় সে পিঠা বানাবে, তার জন্যে বাজার থেকে গুড় আনা দরকার। শুনেই নাক-মুখ খেঁচে সাকা বলে ওঠে, “খানকি মাগি, টাকা কি বলদের গুয়া দিয়া পড়ে!”

আমেনাও কম যায় না। সেও খেঁকিয়ে বলে ওঠে, “বান্দির ছলের কথা শোনছো! ছল-মাইয়া বড় হয়ে গেছে, এহনো মুহে লাগাম দেওয়া শেহে নাই।”

সাকার মাথায় রাগ চড়ে যায়। সে ভাতের থালাটা সামনে ঠেলে দিয়ে উঠে আসে। কোনোরকমে হাত ধুয়ে মাঠের দিকে হাঁটা দেয়। পিছন পিছন বোনটা ছুটে এসেছিল তাকে ঠেকানোর জন্য, কিন্তু সাকা ফেরে না।

আমেনার ওপর রাগ করার যথেষ্ট কারণ ছিল সাকার কাছে। সে কোনোভাবেই গতরাতের প্রত্যাখ্যান ভুলতে পারছে না। প্রতিদিনকার মতো গতরাতেও সাকা চেয়েছিল দীর্ঘ না হোক, ক্ষুদ্র একটা সঙ্গম। কিন্তু সকালে উঠে হিমশীতল জলে স্নান করার ভয়ে আমেনা রাজি হয়নি। অন্য কোনোদিন হলে সাকা এইসব রাজি হওয়া না হওয়ার পরোয়া করত না। বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে মেয়ের দুই দেবর এসেছে, তারা শুয়েছিল সাকা যে চকিতে ঘুমায় তার পাশেই মেঝেতে। জামাই আসায় পিছনের বারান্দার চকিটা ছেড়ে দিতে হয়েছে মেয়ে-জামাইকে। ফলে সাকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে শেষ দুইটিকেও শোয়াতে হয়েছে তাদের চকিতে। আর তাই সে স্ত্রীর ওপর জোর খাটাতে সাহস পায়নি। আমেনা প্রতিরাতের অত্যাচার থেকে বেঁচেছে, কিন্তু সাকা সারারাত ছটছট করেছে কামানলে।

শীতের রাত নিঝুম হয়ে যায় মুহুর্তে। বাতাসের শব্দ, কুকুরের আউ আউ ডাক আর টিনের চালে টপ টপ করে পড়া শিশিরের শব্দ ছাড়া কিছুই কানে আসার কথা ছিল না। কিন্তু জেগে থেকে মাঝে মাঝেই চুড়ির টুং টাং, কাপড়ের ঘষ ঘষ শব্দ আর অস্ফুট স্বরে কথা-হাসি-শীৎকারের শব্দ কানে আসছিল সাকার। প্রথমে বেশ চমকে গেলেও তার বুঝতে বাকি থাকে না যে, এই শব্দের উৎস পিছনের বারান্দায়, মেয়ে-জামাইয়ের ঘরে। এসব শব্দের সাথে অন্য আর দশজনের চেয়ে সে একটু বেশিই পরিচিত। ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে, এখনই আদর-ভালবাসার সময়। এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাকা চেষ্টা করেছে কান বন্ধ করে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু আগে থেকে জ্বলতে থাকা কামের আগুন এই শব্দে আরও ঘি ঢেলে দেয়। সাকা হাজার চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে না; শত চেষ্টা করেও অস্ফুট শীৎকার, চকির মচমচ শব্দ এড়াতে পারে না। নিজের জামাইকে সাকার খুব ভাগ্যবান মনে হয় এই রাতে। সাকার মোটা শীতল স্ত্রী নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, অথচ সাকার একদম হাতের কাছে অন্য এক জোড়া নারী-পুরুষ শীতল রাতে কামের উষ্ণতায় ভেসে যাচ্ছে, এটা কোনোভাবেই সে মেনে নিতে পারে না। নেহাত নিজের মেয়ে জামাই, তাই সাকা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সাকার কামের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে সারারাত। ঘুম হয় না এক ফোঁটাও।

 হস্তমৈথুনের অভ্যাস সাকার  ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে বিবাহিত কোনো পুরুষেরই এই অভ্যাস থাকে না। কিন্তু সাকার কিশোর বয়সেও এই অভ্যাসটা খুব একটা ছিল না। তার বাবার ছিল তিন বিয়ে। বিশাল সংসার। সেই সাথে ছিল ধান-চালের ব্যবসা। ফলে বাড়িতে দাসী-বাদীর সংখ্যা কম ছিল না। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় সাকাকে এমনিতেই বাড়ির সবাই সমীহ করে চলত, এই ভয় কাজে লাগিয়ে বাড়ির এক কাজের মেয়ের সাথে নিয়মিত মিলিত হতো সে। দিনে রাতে যে-কোনো সময়ে। তখন এই গ্রামে এত মানুষ ছিল না, ফলে বাঁশ ঝাড়, পুকুর পাড়, ফসলের জমি, বর্ষাকালে নৌকায় বা গোয়ালঘরে, দিনে রাতে যে-কোনো সময় কাম জাগলেই সাকা তা চরিতার্থ করতে পারত। একদিন খড়ের গাদায় লুকিয়ে যৌনকার্য করতে গিয়ে তার প্রায় সমবয়সী ছোট মায়ের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় সে। সাকাকে কেউ কিছু বলতে না পারলেও কাজের মেয়েটিকে খুব মারধর করে এক কাপড়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। আর এই ঘটনার পনেরো দিনের মধ্যেই সাকার বিয়ে দেওয়া হয়, যখন সাকার বয়স মাত্র ষোলো বছর। আমেনার বয়স ছিল তেরো কী চৌদ্দ। ভদ্রলোকের বউ হলে আমেনার এখনও যৌবনে আকর্ষণ থাকত। কিন্তু পাঁচ সন্তানের জননী, তাতে আবার ধানের সময় ধান, পাটের সময় পাট, সবজি বাগান, গরু-ছাগল সবকিছুরই দেখাশুনা করতে হয় তাকে। শরীরে এখন তার কোনো আকর্ষণ নেই। দিন যাচ্ছে আর আমেনা কামে শীতল ও মেজাজে চড়া হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে সাকাকে মাঝে মাঝেই প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে তার কাছে। সাকার ইচ্ছা করে আরেকটা বিয়ে করার। পনেরো-ষোলো বছরের একটি মেয়েকে নিয়ে উষ্ণ শয্যা রচনার স্বপ্ন সাকার অনেকদিনের। কিন্তু আয়েশার ভাইয়েরা সাকাকে ছেড়ে কথা বলবে না, জেলের ভাত তো খাওয়াবেই, মারধোরের ভয়ও আছে। তার ওপরে  ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে। বড় মেয়েটাকে সদ্য বিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় বিয়ে করলে সমাজে তার মান-সম্মান বলে কিছু থাকবে না। তাই উদগ্র ইচ্ছা থাকলেও সাকা বিয়ের স্বপ্নটাকে বার বার চাপা দেয়।

রাতে কমপক্ষে একবার সঙ্গম না করলে তার ভালো ঘুম হয় না। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে মাসে তিনদিন অভুক্ত থাকতে হয়। এই তিনদিনই সাকার মন মেজাজ খুব খারাপ থাকে। রাতে একদমই ঘুম হয় না। বছর কয়েক আগে এরকমই এক নির্ঘুম রাতে সাকা বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চাচাতো ভাই ফরিদের ঘরের কাছে এসেছিল। গতরাতে মেয়ে-জামাইর ঘরে যেমন শব্দ শুনেছিল, সেদিন ঠিক তেমন শব্দ শুনতে পেয়েছিল ফরিদের ছেলের ঘর থেকে। প্রথমবার পতিতালয়ে ঢোকার মতো সাকার প্রচণ্ড আগ্রহ হয়েছিল ভিতরে কী হচ্ছে দেখার, আবার ভাতিজার শয্যায় চোখ দেবে বলে একটু সংকোচও হচ্ছিল। রাতের বেলা কেউ তো আর জানছে না, এই ভেবে টিনের ফুটো দিয়ে তাকিয়ে সে যা দেখেছিল তা অভাবনীয়। ঘরের মধ্যে হারিকেনের অল্প আলোতে ফরিদের বড় ছেলে আর তার বউ সঙ্গমে রত।

 প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার মতো এই দৃশ্য দেখে সাকা কেঁপে কেঁপে ওঠে। অজানা কারণে সাকার হাত পা অবশ হয়ে যেতে চায়। নিজের অজান্তেই সাকার হাত চলে যায় দুই ঊরুর মাঝখানে দৃঢ় ও শক্ত হয়ে থাকা ড্যাগারে। সাকা কোনোদিন কল্পনাও করেনি অন্যের সঙ্গম দৃশ্য এত আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাকর হতে পারে। পরপর দুই রাত সাকা ঘোর-লাগা মানুষের মতো চোখ রেখেছে ফরিদের ছেলে আর পুত্রবধূর শয্যায়। মেতে উঠেছে স্বমেহনে এবং তৃপ্তি পেয়েছে। এটাই শুরু, এরপরে সাকা এই নেশায় প্রত্যাখ্যাত হওয়া প্রতিটা রাতেই কোথাও না কোথাও উপভোগ করেছে আদিম ক্রীড়ার কসরত। তবে সাকা বুদ্ধিমান লোক। বাড়ির মধ্যে বারবার একই ক্ষেতে মুখ দেওয়ায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ধরা পড়লে মান-সম্মান যেমন যাবে, একই সাথে বার বার দেখার সুযোগটাও নষ্ট হবে। তাই সে এখন আশেপাশের বাড়ির সদ্য বিবাহিতদের ঘরে নজর দেয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। রাত্রিকালীন বিহারে সাকা বেছে নেয় গরীব ও ছোট বংশের মানুষদের। এতে ধরা পড়লেও সাকার বংশীয় প্রভাব আর অর্থজোর খাটিয়ে সহজেই মিটিয়ে ফেলা যাবে। গতরাতেও সে ভেবেছিল এরকম রাত্রিকালীন বিহারে নিজেকে সন্তুষ্ট করবে। আর গ্রামে কারেন্ট আসায় এখন দেখার সুযোগও বেড়েছে। কিন্তু ঠান্ডার ভয়ে সে বাইরে বের হতে সাহস পায়নি। গেলেই বোধ হয় ভালো করত। কামের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তাকে মাঠে যেতে হতো না। কাজে কর্মে মন দিতে পারত।

 অন্যের সঙ্গম দেখা ও নারী শরীর দেখার লোভ সাকাকে ক্রমশ জাকিয়ে বসেছিল।  ধান লাগানো বা পাট তোলার মৌসুমে মাঠেও যাতে সে তার ইচ্ছেটা মিটাতে পারে তার ব্যবস্থাও সাকা করে রেখেছে। কিষাণ হিসেবে তার প্রথম পছন্দ নারী শ্রমিক। কিন্তু আজ প্রায় দশ বিঘা জমিতে ধান লাগাতে হবে। তাই চেষ্টা করেও সবগুলো নারী কিষাণ যোগাড় করতে পারেনি সে। তবে তাতে অসুবিধার কিছু নেই। জমির যে-অংশে নারী শ্রমিকেরা কাজ করবে সাকা ঠিক তাদের পিছনে গিয়ে বসবে। আর্থিক সচ্ছলতার কারণে সে নিজে জমিতে নেমে কাজ করে না, কিষাণদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে আলের উপর ছাতা মাথায় বসে আর বিড়ি টানে। সেই সাথে চোখ দিয়ে চেটে চেটে পরখ করে নারী কিষাণদের শরীরগুলো। নারী কিষাণদের সামনাসামনি বসলেও বিনোদনের অভাব নেই। সামনে ঝুঁকে কাজ করায় আঁচলের তলা দিয়ে, ওড়নার ফাক গলে স্তনের যে শোভা দেখা যায়, তা-ই সাকার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সামনাসামনি বসায় সমস্যা আছে। কিষাণ মাগীগুলো কী করে যেন টের পেয়ে যায় যে সে তাদের দেখছে। তারা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে, কাজে ফাঁকি দেয়। তার ওপরে সাকার বড় ছেলেটাও এখন মাঠে আসে, তার সামনে খোলামেলাভাবে চোখের মাধ্যমে যৌনসুখ নিতে সাকার একটু বিবেকে বাধে। তাই সে পিছনেই বসে। ধান লাগানোর সময় দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে মাটিতে ধানের চারা পুতে দিতে হয় এবং এটা করতে হয় দ্রুত। ফলে পিছন দিকে নারী কিষাণদের নিতম্বগুলো ঠিকরে থাকে, গরুর মাথার মতো। দ্রুত রোপণ করা ও পাশ থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করার জন্য নিতম্ব এদিকে ওদিকে হেলে দুলে বেড়ায়, যা সাকা উপভোগ করে সারা শরীর দিয়ে। সাকার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। চোখে তীব্র কামনার সাথে কালো মুখে ফুটে ওঠে গনগনে ভাব। এরকম সময়ে সাকার ইচ্ছা করে কোনো একটা কিষাণকে জোর করে মাটিতে শুইয়ে জল কাদায় মাখামাখি করে  ইচ্ছেমতো উপভোগ করতে। বিশেষ করে হিন্দু পাড়ার খোড়া গণেশের বউটাকে দেখলেই তার মাথার মধ্যে দপদপ করা শুরু হয়। লুঙ্গি নিচে সাকার কেঁচোটা সাপ হয়ে ছোবল দিতে চায়। কিন্তু কিছু করার নেই। দেশের আইন অনেক কড়া, যদি মাগীটা সাকার শত্রু পক্ষের কথায় একটা কেস করে বসে, তাহলে জেলের ভাত খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সাকা এরকম অবস্থায় মনে মনে ভাবে এড়ে গরুগুলো বরং তার চেয়ে বেশি ভাগ্যবান; ইচ্ছে হলেই যে-কোনো গাভীর উপরে সওয়ার হতে পারে। কিন্তু এত অর্থ, এত প্রতিপত্তি নিয়েও সাকার সেরকম কিছু করার নেই, কেবলই গরম শ্বাস ছাড়া আর কামের আগুনে হাঁসফাঁস করা।

 সাকার বাপ-দাদারা অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে গেছে। তখন আইনের এত কড়াকড়ি ছিল না। সবাই তাঁদের ভয়ও করত অনেক। কিন্তু এখন কিছু হলেই পুলিশ এমন উৎপাত আরম্ভ করে যে পুরুষের কিছুটি করা জো নেই। এই জীবন কি কোনো জীবন! সাকার ধারণা ‘বিটি মানুষ’ ক্ষমতায় থাকায় পুরুষের হাত-পা বাঁধা আইনগুলো পাস হয়েছে। কোনো পুরুষ এমন আইন পাস করতে পারে না কিছুতেই।

 বেলা বাড়তে থাকলে সাকার রাগ কমে তা উদাসীনতায় রূপ নিতে থাকে। সেই সাথে কিষাণ মাগীগুলোর নিতম্ব দোলানো দেখতে দেখতে সে আরও উত্তপ্ত হয়। মেয়ে-জামাই সকালে সাকার বোনের বাড়ি গেলেও রাতে আবার ফিরে আসবে। এদিকে রাতের বেলা ফের যদি বউটা রাজি না হয় তাহলে সাকা কী করবে? জোর করার তো উপায় নেই। ঘরে মেহমান। সাকা মনে মনে স্থির করে ফেলে, সামনের গ্রীষ্মে মেজো মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলে সে নিজে আরেকটা বিয়ে করবে। টাকা থাকলে আইন-আদালত সব কেনা যায়; আইনের ভয় সে আর করবে না। আর আমেনার ভাইয়েরা যদি মারতে আসে, তাতেই বা কী? মুন্সিদের জোর আছে জানি, কিন্তু মোল্লারাই বা কম কীসে? সমানে সমানে ফাইট দেওয়া যাবে। এসব ভেবে সাকা তৃপ্তি পায়। কিন্তু ভিতর থেকে কামের আগুন তাকে ধীরে ধীরে ক্লান্ত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে। নিঃশ্বাসের সাথে আগুনের হলকা বের হয়ে আসে।

দেখতে দেখতে বেলা বাড়ে। অতৃপ্ত যৌনক্ষুধা নিয়ে সাকা প্রথমে ভীষণ রাগে। তারপর ধীরে ধীরে শান্ত উদাসীন হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সমস্ত কথা ভুলে সাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে মনে একবার ভাবে পাটকেলবাড়ির সেই বিশেষ বাড়িগুলো থেকে ঘুরে আসবে কিনা। এটা ভাবতে গিয়ে তার আরও মেজাজ খারাপ হয়, কারণ তার বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাটকেলবাড়ির কাছেই একটা গ্রামে। মেয়ের শ্বশুর ভাসুর এমনকি তার জামাই ঐ বাজারেই ব্যবসা করে। একবার কারো সামনে পড়ে গেলে মেয়ের বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। শ্বশুরগৃহে মাথা উঁচু করে কোনোদিন কথা বলতে পারবে না। সাকা ভাবে, আচ্ছা মান সম্মান এত গুরুত্বপুর্ন কেন? একটা মানুষ ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে মরছে, অথচ সমাজের ভয়ে, আইনের ভয়ে সে কিছু করতে পারছে না! আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা আগুন যখন দিয়েছেন তা নেভানোর উপায় এত কম রেখেছেন কেন? এসব ভাবতে ভাবতে তার সব রাগ গিয়ে পড়ে সৃষ্টিকর্তার ওপর। মনে মনে দিশেহারা হয়ে সাকা শেষ চেষ্টাটা করে দেখবে কিনা ভাবে।

উত্তরাধিকার সূত্রে সাকা একটা পুকুরের মালিক। এরপরেও সে বাড়ি থেকে একটু দূরে বেশ বড় রকমের একটা পুকুর খনন করেছে। সবাই ভেবেছিল সাকা বুঝি ওটাতে মাছ চাষ করবে, কিন্তু সাকার মনে কী ছিল তা কেউ জানত না। সে পুকুরটাতে খুব সুন্দর একটা ঘাটলা তৈরি করে দেয় যাতে কাছাকাছি বাস করা মানুষের স্নানের সুবিধা হয়। সবাই অবাক হয়েছিল, এত বড় অপচয় করার মতো মানুষ তো সাকা নয়। জিজ্ঞাসা করলে সাকা জবাব দিয়েছে, চৈত-বৈশাখ মাসে সারা গ্রাম প্রায় জলশূন্য হয়ে যায়, পুরুষেরা দুরের নদীতে স্নান করতে গেলেও নারীদের খুব অসুবিধা হয়, তাই এই পুকুর খনন করা। সাকার পক্ষের লোকেরা এই ঘটনায় ধন্য ধন্য করেছে। আর বিরোধীপক্ষের লোকেরা বলেছে, সাকা মনে অয় ইলেকশোন করবে। তবে মূল কারণটা সাকা একাই জানে। উঁচু পাড় দিয়ে ঘেরা পুকুরটিতে মূলত নারীরাই স্নান করতে আসে। যারা একটু বয়স্ক, তাঁদের লজ্জার অত আড় নেই, স্বচ্ছন্দে ব্লাউজ ছাড়াই গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু অল্পবয়সী নারীরা স্বাভাবিক বয়সজনিত লজ্জায় উঁচু পাড় ঘেরা আড়ালে এই পুকুরেই স্নান করতে আসে। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো বা বংশীয় পুকুর আছে, তারা না আসলেও ছোট বংশের ও দরিদ্র্য নারীরা স্নানের জন্য এখন সাকার পুকুরকেই বেছে নেয়। আর সাকা লুকিয়ে লুকিয়ে তা ভোগ করে, কখনো রসিয়ে রসিয়ে, কখনো উগ্রভাবে ভোগ করে। আর এই কারণে সাকা পুকুরের পাড়ের একটা অংশে কলাগাছের ঝোপ লাগিয়েছে। নিজে দা হাতে ঝোপের পাতা, আশেপাশের আগাছা এমনভাবে সে কেটে রেখেছে যাতে ভিতরে বসে সাকা যখন নারীদের চোখ দিয়ে ভোগ করে, তখন  স্নানরত নারীরা কিছুই বুঝতে পারে না। একসময় সাকা তার বাড়ির সাথে যে পুকুরটা ছিল, সেখানেও এভাবে বসত। কিন্তু বাড়ির কোলঘেষা হওয়ায় পুকুর পাড়ে মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি, আবার সাকার মেয়েরা বড় হওয়ায় বিষয়টা খুব অস্বস্তিকরও হয়ে উঠছিল দিন দিন। তাই নতুন ব্যবস্থা হিসেবে সে এই পুকুরটা খনন করেছিল। এখানে কোনো ঝামেলা নেই, তার পরিবারের সদস্যরা এই পুকুরে কেউ আসে না। ফলে সাকা নিশ্চিন্তে চোখের ক্ষুধা মেটাতে পারে।

সেদিন মাঠ থেকে ফিরে সাকা যখন তার নির্দিষ্ট কলা গাছের ঝোপের মধ্যে এসে বসল, তখন প্রায় দুটো বাজে। এ সময়ে পুকুরে নারীদের ভিড় লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু আজকে চৌধুরী বাড়ির কোবাতের মা ছাড়া ঘাটে আর কেউ নেই। কিন্তু বুড়ি কোবাতের মায়ের দিকে তাকানোর কোনো ইচ্ছা সাকার নেই। যে শীত তাতে কেউ স্নান করতে আসবে কিনা কে জানে! সাকা মনে মনে ভাবে অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকায়ে যায়।

কী কপাল নিয়েই না সাকা জন্মেছে! মানুষের কত চিন্তা থাকে। সব চিন্তার বড় চিন্তা পেটের চিন্তা। তার কিছুই সাকার নেই, অথচ চ্যাটের চিন্তায় সাকার দিন রাত সব এক হয়ে গেছে। এই ভাবতে ভাবতে সাকা আরেকটা বিড়ি ধরায়। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে বলে ভাবে সে। সে ভেবে দেখে আরেকটা বিয়ে করা বেশ ঝুঁকিপুর্ন। কচি অল্পবয়সী কাউকে বিয়ে করতে হলে অবশ্যই তাকে জমি লিখে দিতে হবে। আগের দিন তো আর নেই, টাকা-পয়সা খরচ করে বিয়ে করার পর কচি বউটা যদি ভেগে যায়! তখন তো তার আম ছালা দুটোই যাবে, আটি চোষা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তার ওপরে আমেনা আছে। আমেনাকে ছাড়া সাকার পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। তার ভাইদের যা হোক একভাবে না একভাবে প্রতিহত করা যাবে, কিন্তু সাকার ছেলেরা বড় হয়েছে, তারা যদি তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়! না, বিয়েটা করা যাবে না। তার চেয়ে শহরে একটা রক্ষিতা রাখলে কেমন হয়? খরচ একটু বেশি পড়বে, যাওয়া-আসাও সমস্যা, কিন্তু ঝামেলা তো একদমই নেই। আর সুবিধাও আছে, অপছন্দ হলে রক্ষিতা বদলানো যায়, কিন্তু চাইলেই বউ তালাক দেওয়ার সুযোগ তো আর এখন নেই। এটাই ভালো বুদ্ধি। দরকারে সে আবার পাটের দালালি শুরু করবে। পাটের দালালি করলে এমনিতেই শহরে যাওয়া-আসা করতে হয়। এই ব্যাপারে আজ রাতেই সে তার চাচাতো ভাই গঞ্জের মোল্লার সাথে কথা বলবে। গঞ্জেরকে টাকা দিলে সে সবই ঠিক করে দিতে পারবে।

এলোমেলো চিন্তায় বার বার সাকার খেই হারিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে কখন একটা মেয়ে স্নান করতে এসেছে সে খেয়াল করেনি। মেয়েটা ঘাটে না নেমে একটু পাশে স্নান করছে। কোমর সমান জলে নেমে মেয়েটি ভেজা চুলের জট ছাড়াচ্ছে। ভেজা জামাটি পিঠের চামড়ার সাথে লেপ্টে আছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নিচে অন্তর্বাস নেই। ঝোপের মধ্যে ঢুকে নড়াচড়া না করে যতটুকু সম্ভব গলা বাড়িয়ে সাকা মেয়েটির বুক দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু এমন জায়গায় বাঁকা হয়ে মেয়েটি স্নান করছে যে বুকের আভাসটুকু পর্যন্ত দেখার সুযোগ নেই। সাকা মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে, যদি মেয়েটা ডানে আরেকটু ঘুরত তাহলে গত রাত থেকে বয়ে আনা বিষ সাকা ঢেলে দিতে পারত এই জংলা ঝোপে।

চুলের জট ছাড়িয়ে মেয়েটি একটা ডুব দেয় ঘোলা জলে। তারপরে দুই হাত দিয়ে ভেজা চুলগুলো খোপা করে ঘাড়ে সাবান ঘষতে থাকে। সাকার উতপ্ত আগ্নেয়গিরিতে উদগীরণ শুরু হয়ে যায়। হাতের কাছে এরকম একটা কচি মেয়েকে পেয়েও কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় সে প্রতিটি শীরায় শীরায় কাটার খোঁচা অনুভব করে। বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো মেয়েটির সুগঠিত শরীর স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় স্তনগুলো কতটা সুডৌল, কতটা আগ্রাসি। পুকুরটি এমনিতেই ফাঁকা জায়গায়, তার উপরে যে শীত, স্নানের বেলাও পেরিয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে সাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যা হবার হবে, বিষ নামানোর এই সুযোগ সে হাতছাড়া করবে না। ঝোপের মধ্যে দাঁড়িয়ে চট করে পরনের লুঙ্গিটি খুলে ফেলে সে। এক লাফে জলে নেমে ডুব দিয়ে মেয়েটির কাছে গিয়ে যখন মাথা তোলে, তখন ভয় পাওয়া অবাক চোখের মেয়েটি বলে ওঠে, “আব্বা তুমি!”

মেজো মেয়ের প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে যায় সাকা। “সাপে ধাওয়া দিছিল,” সে বলে।

“শীতকালে সাপ!”

“হ রে মা, সাপ,” সাকা বলে। “গত রাইত থিকা আমারে তাড়ায় নিয়া বেড়াইতেছে।”

এই বলেই মেয়ের কাছ থেকে গামছা নিয়ে পরে দ্রুত পায়ে পুকুর থেকে উঠে চলে যায় সে। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যাওয়া সাকার মেজো মেয়ে অবাক চোখে তার বাবার চলে যাওয়া দেখে।

…………………
পরিবেশনাঃ খাপছাড়া আড্ডা

Leave a Comment