খাপছাড়া আড্ডাগল্পপ্রবন্ধ

সব চরিত্র কাল্পনিক ( শর্তাবলী প্রযোজ্য)

লিখেছেনঃ দীপাঞ্জনা মণ্ডল

কমলাকান্তের অহিফেন আর হযবরল-র দুপুরে ঘুম – মোদ্দা কথা ও সব ঘটে ওঠবার জন্য স্নায়ু শিথিল করবার লাগে। আরশির কাঁচা পোস্ত বাটা ভাল লাগে আর ভোরের ঘুম; সুতরাং ওর জীবনে কোনও পরা বা জাদু বাস্তব নেই। আরশি সকালে ঘুম ভাঙলে বিছানা ছাড়ে না, ল্যাজে-গোবরে হবার সম্ভাবনার আগ পর্যন্ত মাঠ কামড়ে পড়ে থাকে। ওই এপাশওপাশ করবার সময়টা যত দীর্ঘ করা যায় করে। প্রাতঃকৃত্যাদি নেহাত প্রক্সি দিয়ে হয়না! নচেৎ সকালের সমস্ত কাজেই আরশির আলসেমি। কলঘরের কাজ না হয় হল তারপরের এক মস্ত কাপের আমেজি চা! সেটাও নিজেকে করতে হয়, তাও আবার কেবলমাত্র নিজেরই জন্য। আরশি নিজেকে খুনসুটির সঙ্গে তুলনা করে খিটখিটে হতে থাকে। খুনসুটি ওর দরজার সামনে দিয়ে মোচড় তুলে হেঁটে যায়, লীলায়িত।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অর্পণ ঘোষ

সকালটা খুব এলায়িত হলে আরশি চায়ের কাপ হাতে ছাতের আলসেতে হেলান দেয়। খুনসুটি কাছেপিঠে থাকলে ত্বরিত এসে আনুগত্য জানিয়ে যায়। জানিয়ে যেতে থাকে। পেট একেবারে খালি থাকলে এক-আধ টুকরো বিস্কুটে আগ্রহী হয়, নইলে কার্নিশ বেয়ে পাশের মন্দির বাড়িতে হানা দেয়। সে বাড়ির তিনতলায় ছোটছেলে কবিতা লিখতে বসার আগে হাত মেরে নেবার সময় খুনসুটির ছায়া সরে যেতে দেখে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে। মনোযোগের বিচ্যুতিতে সে রেগে ওঠে; সমস্ত দিনটা একটা ব্যর্থতার মাসকাবারি ফর্দ হতে যাচ্ছে এমনটা বুঝে নির্দিষ্ট। মন্দিরবাড়ির বৌটি এরকম সকালে চারতলার মন্দিরঘরের সার্সি খুলে একটা বড় প্যাকেট ভর্তি বাসি ফুল-মালা টিপ করে নিচের রাস্তায় বসিয়ে দেয়। পলিথিন ফেটে আগেরদিনের পূজোপকরণ রাস্তার নেড়ির বর্জ্যের সঙ্গে কোলাকুলি সারে, অরাজনৈতিক।

পরের বাড়িটার একতলার নিচু ছাতটায় লাফিয়ে পড়বার আগে খুনসুটি বসে পড়ে জিভ দিয়ে ডান হাতের কনুই চেটে নেয়। দুটো ছোট্ট নিখুঁত লাফ দিয়ে দিয়ে নিচু ছাত থেকে উঠোনের কলতলায় নামে মাছের গন্ধে। ভদ্রজনোচিত দূরত্ব না রাখতে পেরে মনার কাছে ঝামটা খায় আর জলের ছিটে। ঘাম আর রোদের যুগলবন্দীতে থাকার সময় কিছু বেড়ে যায় বলে খুনসুটিকে খিস্তি করে মনা। খুনসুটির মনোযোগ মাছ আর আশপাশের কাকগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। দুদিক থেকে আক্রান্ত হবার আশংকা নিয়ে তাড়াহুড়োর মধ্যে মাছের পাত্র থেকে জল ঝরাতে গিয়ে টপ করে গাদার একটা টুকরো কলতলায় পড়ে, ‘দূর, বাঁড়া’র মধ্যে কিছুটা রাগ নামিয়ে দিয়ে মনোতোষবাবু পড়ে যাওয়া টুকরোটা আলাদা করে ধুয়ে জল ঝেড়ে বাটিতে করে নিয়ে রান্নাঘরে নামান। মাছের গায়ে-হলুদ হয়, জীবাণুনাশক।

খুনসুটি কলতলার খাঁজেখোঁজে লালচে জল চাটে, কাকগুলো ঠোঁটে করে দু-একটুকরো আঁশ তুলবে লক্ষ্যস্থির করে খুনসুটির সরে যাবার অপেক্ষা করে। একটা কাক অধৈর্য্য হয়ে খুনসুটির শিরদাঁড়ায় ঠোক্কর দেয়। গতিক বুঝে দুলকি চালে খুনসুটি রান্নাঘরের সামনে দিয়ে এক ঝলক চেয়ে দোতলায় ভাড়াটেদের দিকে যায়। আরশির চা শেষ হয়ে গেলে ছাত ছেড়ে ঘরে ফেরে ও। ঘরের জানলা দিয়ে দেখে রাস্তার উল্টোদিকের বাড়ির চিলেকোঠার ছাতে পায়রা ওড়াচ্ছে এক রোগাটে মাঝবয়েসী। লোকটা পায়রা ওড়ায়, যদিও তাকে কখনও বাজি পোড়াতে দেখেনি আরশি। কখনও কোনও অন্য কাজেও দেখেনি তাকে, একটা লম্বা কঞ্চির ডগায় কাপড় বেঁধে পায়রাদের ওড়ায় আর ঘরে ফেরায় সে, ছাত থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলে লোকটার মেরুদণ্ড খুব বেশিই ঝুঁকে পড়ে বলেই কি আরশি কখনও লোকটাকে ও বাড়ির আর কোথাওই খুঁজে পায়না ছাত ছাড়া, আধিভৌতিক।

ও বাড়িটায় দুটো পরিবার। একটা বোবা অন্যটা ঝগড়াটে। যে বউটার চিৎকারে পায়রাগুলো ছাতে ফিরে আসতে গিয়ে আবার আকাশে পালায়, সে ‘ম্যায় মর যাউঙ্গি’ বলে হনহন করে পাক্ষিক ব্যবধানে রাস্তায় ছুটে গেলেও তাকে কেউ ফেরায় না। তার ক্লাস নাইনের মেয়ে গ্যাসের ওপরে বসানো ভাতে মন দেয়, ক্লাস সিক্সের ছেলেটি পড়া ছেড়ে দৌড়ে টিভির রিমোট হাতে তুলে নেয়। আর লাল কার্ড দেখা চিমসে মদ্যপ পতিদেব পাশের ঘর থেকে বারান্দায় কাপড় মেলতে আসা তরুণীটির গায়ে আলগা জড়ানো কাপড়ের ছিদ্রান্বেষণ করে সামান্য হাঁফ ছাড়ে। রাস্তা দিয়ে উদ্‌ভ্রান্ত ছুটতে থাকা তার বউয়ের সঙ্গে খুনসুটির প্রায় ধাক্কা লাগে লাগে। ওপাশের বাইকের চাকার গা ঘেঁষে কোনওক্রমে খুনসুটি হতচকিত ব্যক্তিত্বহীন ফুটপাথে পৌঁছায়। বাইক থেমে যায়। বউটি ঝাপসা চোখে পাশের সরু থেকে সরুতর গলিতে ডুবে যায়, নিত্যনৈমিত্তিক।

রাস্তার ধারে বসে আবর্জনা বেছে আলাদা করছিল এ পাড়ার জমাদারের বউ। খুনসুটিকে দেখে সে একটা কুঁজোর টুকরো ছোঁড়ে। তার সহযোদ্ধাটি প্রায়ই গজগজ করতে করতে নেমে আসে বাড়িগুলো থেকে, খুনসুটিরা যত্রতত্র নোংরা করে। কেন যে এত বমি পায় ওদের! খুনসুটি একটা তুড়ুক লাফ মেরে সরে যায়। সামনের ফ্ল্যাটবাড়ির গ্যারাজের একটা গাড়ির তলায় সেঁধোয়। দুটো ছেলে জড়াজড়ি করতে করতে লিফটের দিকে যায়। ওদের মধ্যে যেটি নিম্নস্থ, খুনসুটিকে দেখে চুকচুক আওয়াজ করে হাতের আঙুলে হাই বলে যায়। কাল রাতে ওদের বিছানার জেগে থাকবার সময়ের একনাগাড়ে মিয়াঁও ওর সঙ্গীকে উত্যক্ত করেছিল মনে করে, আনুষঙ্গিক।

ফ্ল্যাটবাড়িটার চারতলা থেকে রুস্তম নামেন, সঙ্গে মুখে মাথায় স্কার্ফ জড়ানো তার গত রাতের সঙ্গিনী। একটি ছন্দময় রাতের পরে রুস্তম এখন গদ্যে ফিরেছেন। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে গত সন্ধ্যেতে ঘণ্টা পাঁচেক একটু বেশি আমানত করা হয়েছে, লাভ খুব যথেষ্ট নয়, লোকসান হয়নি এই যা। আর এখন যে তাকে মেট্রোর সামনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে সেটার বিরুদ্ধেও একটা বিদ্রোহ জমছে ভেতরে। কাল রাতে ঘুমনোর আগে কতকটা নেশায় কতকটা ভদ্রতার আবেগে মেয়েটিকে বলে ফেলেছিলেন সকালে তাকে মেট্রোর সামনে অব্দি সঙ্গ দেবেন, এখন আফসোস হচ্ছে না তা নয়। খুনসুটি রুস্তমের দ্বিধা দেখেও না দেখার ভান করে গ্যাঁট হয়ে তার গাড়ির নিচে বসেই থাকে। মেয়েটির মনে পড়ে যায় কিছু ঘণ্টা আগেই এক মোক্ষম মুহূর্তে বেড়ালের ডাক নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু জলতরঙ্গ জেগে উঠেছিল। এখন অথচ সে অনুষঙ্গের থেকে আলোকবর্ষ দূরে রুস্তম খুনসুটিকে লাথি মারতে গিয়ে বুড়ো আঙুলে চোট পেয়ে কাউকে বোকাচোদা বলেন, গাড়ি সচল করে মেয়েটিকে পিছনে উঠতে ইশারা করেন। মেয়েটি যেন অতিরিক্ত গায়ে উঠে পড়ে। তিনি একটু সামনে এগিয়ে ধীর গলায় ‘তোমার হয়েছে?’ জেনে গাড়ি রাস্তায় নামান। গতরাতের ভেজা ভেজা ‘তোমার হয়েছে?’-র সঙ্গে এর সুরের যে বিভিন্ন ভিন্নতা, তা অন্যতর কোনও এক অবস্থান মাত্রা থেকে মেয়েটিকে রাস্তায় টেনে আনে। খুনসুটি জুলজুল করে তাকিয়ে থাকে, ফ্যাচ ফ্যাচ করে হেসে বেড়া ডিঙনোর দিকে এগোয় সে মেয়েটির মাথায়। এমনকি এখন মেয়েটি আর নিজের মতো মেট্রো অব্দি পৌছনোর কথা বলবার পরিস্থিতিতেও নেই, বেকায়দা।

খুনসুটি সকাল থেকে খিস্তি খেতে খেতে কিছু বিরক্ত। খেয়াল করেনি হলদে-সাদা কুকুরটা, যাকে তার ফুটপাথবাসী মালিক অজ্ঞাত কারণে কালু বলে ডাকে, কাছেই চলে এসেছে খুব। খুনসুটি সামান্য দূরত্বে সরে যায়। খালি পেটে এখন আর তার একটা খেঁকির খ্যাঁকখ্যাঁক শুনবার সাধ নেই। কালু তার চড়া পড়া পেট চেপে বসে যায় খুনসুটি সচেতন বুঝে। খুনসুটিকে আশপাশের বাড়িগুলোর ছাতে আর কার্নিশে দেখলেই কালুর মাথায় আগুন জ্বলে। ও কি না সেসব বাড়ির ভিতরে ওর মালিকের মতোই অবাঞ্ছিত। অথচ এই ছেনালটা গা দুলিয়ে কেমন মাঝেমধ্যে ওদের বিছানাপত্রেরও সাময়িক অধিকারী হয়। সে সবের ওপরে এই অনভিজাতটার অপকর্ম করে আসার পরের চিৎকার ঘর ছেড়ে ফুটপাথে পৌঁছয় বলে কালু জেনেছে। কালু কক্ষনও ওর শতরঞ্চির কোণায় কোনও নোংরা করেনি। ওর মালিকও ফুটপাথ ঝাঁট দিয়ে বিছানা পাতে রোজ। ওদের যাপনের আভিজাত্য তবু যে কেন উপেক্ষিত। কালুর রাগ চড়ে। ঘেউ ঘেউ ডেকে ও নাক তুলে পাশের পাড়ায় ঘুরতে যায়। খুনসুটি গুটিগুটি আরশির ঘরের সামনে হত্যে দেয়। উদরনৈতিক।

আরশি স্নান-খাওয়া সেরে একমুঠো মাছভাত দেয় রোজ। খুনসুটি খেয়ে নিয়ে যথাবিহিত আনুগত্য ও নৈকট্য দেখিয়ে ছাতে গিয়ে টানটান হয়। সকালের আঁশটে জল পেটের ভেতরে সামান্য গুলিয়ে ওঠে কি! খুনসুটি ছাতের কোণের ঘাসে নাক ঘষে। দুপুর পাড়া জুড়ে ভেজা চুল মেলে দেয়। রাতের খাবারের আয়োজন, বিকেলের জলখাবারের প্রস্তুতি, হামানদিস্তার ঠুংঠাং, গুঁড়ো মশলার গন্ধ, ভ্যানরিকশাওয়ালার ঘুমন্ত ভুঁড়ির ওপরে সদাব্যস্ত মাছি দুপুরকে জাগিয়ে রাখে। পা টিপে টিপে একটা হুলো ছাতে আসে। কাল সারারাত সে গরম খেয়ে ঘুমোতে পারেনি। অনবরত অনুরোধ আর অনুযোগ আর দাবি জানিয়ে গেছে। আজ হয় এসপার নয় ওসপার। দুপুর ঢুলতে ঢুলতে চমকে ওঠে, রাস্তা দিয়ে ‘যা নেবেন তিরিশ টাকা’-র বিজ্ঞাপন যায়, খামোকা খেয়াল।

সন্ধ্যে আসে। রাত। রাত নিঝুম হয়। আরশি দরজা খোলা রাখে। খুনসুটি আসেনা। মন্দির বাড়ির বউ নিঃশব্দে দেওরকে দরজা খুলে দেয়। তার মধ্যরাতের ফুটপাথ বদলের ইতিহাস বাড়ির অন্যদের কাছে ঝাপসা। মনা আজও দোকানের হিসেব ফুরিয়ে নাক ডাকায়। কাকগুলো স্ট্রিট লাইটের আলোয় জেগে থাকে রোজকার মতো। ঝগড়ুটে বউটা ছেলে-মেয়ে আর বরকে ভাত খাইয়ে বিছানায় পাঠিয়ে এঁটোকাঁটা সামলায়। পাশের ভাড়াটেদের টিভি আর আলো বন্ধ হয়। কিছু পরে রাত ভোরের আগে আগে জমাদারেরা বস্তা নিয়ে ভ্যাটের পাশে গুছিয়ে বসে। সমকামী ছেলেদুটি অঘোরে ঘুমোয়, শান্ত। হেলমেটে ঠাসা ফোনের উদ্দেশ্যে হা হা হাসতে হাসতে এক বাইক ছুটে যায় অবাধ। রুস্তম দুপদাপ ঘরে ঢুকে স্কার্ফ দলা পাকিয়ে চেয়ারে ছোঁড়ে। সকালের মেয়েটি মেট্রোয় ঢুকবার আগে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আজ তার প্রেমিকা হিসেবে নিশানা করে রাখা মহিলার সামনে দুর্দান্ত উপস্থাপনা সত্ত্বেও তার প্রার্থিত মনোযোগ না পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। কাল রাতে যা কিছু সংগ্রহ করেছিলেন উদ্দীপনা, সন্ধ্যে বিলিয়ে, এখন তা আরও বেশি অপচয় মনে হয়। সমস্ত অনুষঙ্গ ষড়যন্ত্রী ও অপয়া বলে দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে তার। কালু তার মালিকের পাশে ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমে নেতিয়ে থাকে। ব্রাহ্মমুহূর্ত।

ভোরবেলা রক্তশূন্য হয়ে ওঠে খুনসুটির দলাপাকানো শরীর দেখে। চা, রান্না, অফিসের তাড়া সবকিছু মিয়ানো মতন। ঠাকুরঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে বউটি কাঁধে ওড়না টেনে কালশিটে ঢাকে, আজও কবিতা হবে না, কাক একটুকরো মাছ সাপটে নেয়, কালু একটা বিস্কুট চিবোয়, পায়রাবাবু নিশ্চিত হবেন কিনা সে নিয়ে দ্বিধায় পড়েন, রুস্তম বেরনোর সময় তাড়াহুড়োয় গাল কেটে রেজার আছড়ান মেঝেয়। কালকের ঝগড়ার পরে আজ সকালে শান্তিকল্যাণ ভাড়াটেদের। জমাদার লাঠি দিয়ে খুনসুটির শরীরটা ঠেলতে গিয়ে চমকে যায়। আরশি ছাত থেকে দেখে সদ্যকিশোরী খুনসুটির পায়ুনালিটা শরীরের বাইরে বেরিয়ে। সাঁ সাঁ গাড়ি ছুটতে থাকে। খুনসুটির মরে যাওয়াটা ধীরে ধীরে সমস্ত পাড়ার বুকের ওপরে চেপে বসতে শুরু করে। অহিফেন অথবা ভাতঘুমের স্নায়বিক শৈথিল্য ছাড়াই সকলের চোখে ঝিলমিল লাগে। সমস্ত পাড়াটার বাতাসে খুনির ভ্যাপসা গন্ধ চারিয়ে যায়। সবাই অন্যের মোডাস অপারেন্ডি আর নিজের অ্যালিবাই সুদৃশ্য মোড়কে সাজানোতে হাত লাগায়। যৌথখামার।

Leave a Comment