খাপছাড়া আড্ডাপ্রবন্ধ

দাম্পত্য কলহঃ সমস্যা ও সমাধান

একটা তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। প্রায় চার দশক ধরে ৩০০০০ দম্পতির ওপরে গবেষণা করে Marriage and Family Counselor Dr. John Gottman জানিয়েছেন, দাম্পত্য কলহের ৬৯%-এর কোন সমাধান হয় না। এর মানে হচ্ছে, তারা একই বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে ঝগড়া করেই চলে, করেই চলে।

ঝগড়া করেন না এমন দম্পতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এমনকি যে গবেষকের কথা ওপরে বলা হলো তিনিও তাঁর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। যে সকল থেরাপিস্ট বিয়ে এবং পরিবার বিষয়ে থেরাপি প্রদান করেন কিংবা উপদেষ্টার কাজ করেন, তারাও তাদের পার্টনারের সাথে ঝগড়া করেন। হ্যাঁ, সমাজ ও স্ট্যাটাস ভেদে এর পার্থক্য হয়। গ্রামের দিন আনা দিন খাওয়া মজুর দম্পতি হয় তো একে অপরকে অলেখ্য ভাষায় গালি দেন; আর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের স্ত্রী স্বামীর দিকে কোকের বোতল ছুড়ে মারেন। মোট কথা, স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া একটি ইউনিভার্সাল বিষয়। (অবশ্য আরবের ধনী গৃহস্বামীর হারেমের স্ত্রীরা ঝগড়া করার অধিকার রাখেন কিনা, এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়।)

দাম্পত্য কলহের কারণঃ
দাম্পত্য কলহ বিষয়ে একটা কমন কোট হলো- “পৃথিবীতে এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেন না।” আপনি টোস্ট খেতে গেলে শব্দ হয়? আপনি ড্রয়ার খুললে পুরোটা আটকান না? আপনি সোফায় বসে নখ কাটেন? আপনি ল্যাপটপে সাউন্ড দিয়ে গান শোনেন? ওহ, আপনি সাউন্ড দিয়ে শোনেন না? তাহলে হেডফোন দিয়ে শোনেন? আপনি ডিম ভাজতে গেলে বেশি তেল দেন? ভাত রান্না করলে হাড়িতে লেগে যায়? আপনি কাঁচা ঝাল খেতে পছন্দ করেন? আপনি মোবাইলে রিং টোন ব্যবহার করেন? ওহ, আপনি করেন না? তাহলে ভাইব্রেশন ব্যবহার করেন? আপনি খেলা দেখতে পছন্দ করেন? করেন না? তাহলে সিরিয়াল দেখতে পছন্দ করেন? আপনি বাথরুমে মোবাইল নিয়ে ঢুকেন? ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

যারা এখনও বিয়ে করেননি তাদের কাছে ওপরের প্রশ্নগুলো খুবই হাস্যকর মনে হতে পারে। সত্য বলছি, স্বামী-স্ত্রী এর চেয়েও তুচ্ছ হাজারো ইস্যুতে ঝগড়া করে থাকে। তবে আমি এই প্রবন্ধে এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা বলবো না, কিছু সিরিয়াস কিন্তু বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে বলবো।

স্থান ও সংস্কৃতিভেদে দাম্পত্য কলহের ইস্যুতে পার্থক্য থাকলেও কিছু বিষয় সব সমাজেই কমন। এগুলো হলো অর্থ, ঘরের কাজ, যৌনতা বা ফিজিকাল ইন্টিম্যাসি, সন্তান, বাবা-মা-ভাই-বোন তথা বর্ধিত পরিবারের সদস্য, পছন্দের অগ্রাধিকার, ঈর্ষা এবং অতীত। এছাড়া প্রাশ্চাত্য সমাজে আরেকটি বিষয় বেশ ওপরে অবস্থান করে। সেটি হলো অবসর যাপন। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দুই সমাজেই টেলিভিশন দেখা নিয়ে ঝগড়াও এই অবসর যাপনের মধ্যে পড়ে।

১. অর্থঃ এই বিষয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তারা টাকা-পয়সা আয় নিয়ে যতটা ঝগড়া করেন, তার চেয়ে বেশি ঝগড়া করেন অর্থ খরচ নিয়ে কিংবা সঞ্চিত অর্থ নিয়ে। আপনি আপনার সঙ্গীকে না জানিয়ে সংসারের কিংবা সন্তানের জন্য একটা পণ্য কিনে খুব খুশী মনে বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু ঘরে ফিরতেই আপনার আনন্দে জল ঢেলে দিলো আপনার স্বামী। তিনি এটাকে বেহিসেবী আচরণ বলে অভিমত দিলেন। শুরু হয়ে গেলো ঝগড়া।

পরিবারের ব্যয় নির্বাহের পরে আপনাদের কিছু টাকা জমলো। আপনার স্ত্রী দাবি তুললো, এটা কখনোই সম্ভব হতো না যদি না তিনি মিতব্যয়ী হতেন। তিনি এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে কোথায় কখন অফার দিলো, সেটা দেখে বাজার করেছেন বলেই তো টাকাটা জমেছে! আপনার মতো অমিতব্যয়ী হলে টাকা জমা তো দূরের কথা, উল্টো ঋণ করতে হতো। অথচ আপনার দৃষ্টিতে আপনি দেখছেন, আপনার স্ত্রী মূল্য-ছাড় পেয়ে ঘরে অনেক বাড়তি এবং অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে রেখেছে। সেগুলো না কিনলেই বরং আরো কিছু অর্থ সাশ্রয় হতো। শুরু হয়ে গেলো কলহ।

২. গৃহকর্মঃ পৃথিবীর অল্প কিছু দেশ বাদ দিলে গত তিন বা চার দশকে লিঙ্গ ইস্যুতে বেশ বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে। পূর্বে পরিবারের অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে পুরুষেরই প্রাধান্য ছিল। এখন বেশিরভাগ সমাজেই এটাতে নারীদের অংশীদারিত্ব বহুলাংশে বেড়েছে। পূর্বের বর্ধিত পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে তৈরি হয়েছে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে নিউক্লিয়ার পরিবার। গবেষকগণ দেখেছেন, সমাজের এই পরিবর্তনেও দাম্পত্য কলহের খুব একটা হেরফের ঘটেনি, কলহের ধরণ ও বিষয়ে পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।

পূর্বে যখন পুরুষই ছিল বেশিরভাগ সংসারে রুটি-রুজি উপার্জনকারী, তখন গৃহকার্যের প্রায় পুরোটারই দায়িত্ব ছিল নারীদের ওপর। কিন্তু বর্তমানে নারীও উপার্জনে অংশগ্রহণ করার ফলে রান্নাবান্নাসহ সব ধরণের গৃহকাজেই স্বামীকে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। এখানেই তৈরি হয়েছে কলহের নতুন ইস্যু।

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করার ফলে পূর্বে যেখানে পুরুষটি অফিস থেকে ফিরেই ডিনার রেডি পেতো, এখন আর তা হচ্ছে না। স্বামী-স্ত্রীর যে কোন একজনকে অফিস থেকে ফেরার পথে সন্তানকে ডে-কেয়ার থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে। অন্যজন সরাসরি বাসায় ফিরে ডিনার প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। এর মাঝে স্বামীটি হয় তো ঘরে ফিরে পায়ের মোজাটা খুলে রেখে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসেছেন, কিংবা ঘরটাতে ঝাড়ু দেয়া দরকার দেখেও ওভারলুক করে গেছেন। ক্লান্ত স্ত্রী রান্নাঘর থেকে এসে ফায়ার। “আমিও তো তোমার মতো অফিস থেকেই ফিরলাম। কই, আমি তো তোমার মতো সোফার ওপর পা তুলে দিয়ে টিভি দেখতে পারছি না! আর তোমার ঐ ময়লা মোজা কি আমি সরাবো! ইত্যাদি ইত্যাদি।”

Harvard Business School এবং University of British Columbia-এর যৌথ গবেষণাপত্রে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বিচ্ছেদের ২৫% শতাংশই হয় গৃহকর্ম নিয়ে ঝগড়ার কারণে। এই বিষয়ে গবেষকগণ অবশ্য একটা সহজ সমাধান দিয়েছেন। যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে যেসকল গৃহকর্ম অন্যদের দিয়ে মানে লোক দিয়ে করানো যাবে, সেগুলো নিজেরা না করাই ভাল। তারা দেখেছেন, এতে গৃহকার্য বিষয়ক দাম্পত্য কলহ এড়ানো সম্ভব। এটা আসলে এভাবে কাজ করে- আপনি টাকা দিয়ে সময় কিনছেন এবং সেই সময়টা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নিতে পারছেন।

(হ্যাঁ, টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়। গবেষণা বলছে, অর্থ একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আপনাকে সুখ দিতে পারে; তারপরে এর কার্যকারীতা ক্রমশ কমতে থাকে। এ ব্যাপারে দূরের পাখি ভাইয়ের সুখ বিষয়ক প্রবন্ধটি পড়তে পারেন।)

এ বিষয়ে Couples therapist Lori Gottlieb বলেছেন, “অনেক দম্পতি তাদের কাজকে খুব সুন্দরভাবে ভাগ করে নেন, কিন্তু যখন করতে গিয়ে দেখেন ঠিকমতো করতে পারছেন না, তখন সেটা তাদের জন্য স্ট্রেচফুল (stressful) হয়।” তাছাড়া অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও কোন কাজ করলে সেটাও মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু যাদের টাকা নেই, তারা কী করবেন? এ ব্যাপারে গবেষকগণ একটা প্রায়-হাস্যকর অথচ কার্যকর সমাধান দিয়েছেন – কিছু কাজ একেবারেই না করা। থাক না ঘরটা এলোমেলো; গাড়ির চাকায় কাদা জমেছে তো কী হয়েছে; বাথরুমের কোণা কাঞ্চিতে না হয় একটু ময়লাই জমলো। এখন ওভাবেই থাক; পরে যখন সময় হবে তখন কাজগুলো করা যাবে। এখন এলোমেলো রান্নাঘরে দু’জন এসব নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে রান্না সেরে খেয়ে ফেলেন, তারপর দুজনে মিলে একটা সিনেমা দেখে এসে গতকালের বিছানো এলোমেলো বিছানায় শুয়ে পড়ুন।

এটা আসলে কোন সমাধান নয়। বেশিরভাগ স্ত্রীই এটা মেনে নিবেন না। এজন্য অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরী। প্রতিটি ব্যক্তিকেই মনে রাখা উচিত এখন আর তিনি একা নন; সংসার বা সম্পর্কের খাতিরে তাকে কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতেই হবে।

৩. যৌনতা বা ফিজিক্যাল ইন্টিম্যাসিঃ বিয়ে বা ভালবাসার সম্পর্কের এক পর্যায়ে পার্টনারদের মধ্যে যে কোন একজনের কিংবা দু’জনেরই যৌনতায় আকর্ষণ কমে যেতে পারে। এর পিছনে সবচেয়ে কমন যে কারণটি দেখা যায়, সেটি হলো কাজের চাপ। অফিস, সন্তান পালন, গৃহকার্য, ইত্যাদির ভিড়ে আপনি নিজেকে খুব স্ট্রেসফুল মনে করছেন। আপনার সঙ্গীটি যে এর মাঝেও আপনার কাছ থেকে যৌনতা প্রত্যাশা করছেন, তা আপনার মাথায়ই আসছে না। ওদিকে আপনার সঙ্গীটি মনে মনে রাগ করছেন। তার রাগ তিনি অন্যক্ষেত্রে প্রকাশও করছেন, কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না যে তিনি আসলে আপনার ফিজিক্যাল ইন্টিম্যাসি চাচ্ছেন, এবং সেটিই পরোক্ষভাবে তার কাছে আপনার সবকিছুতে বিতৃষ্ণা রূপে প্রকাশিত হচ্ছে। আপনাদের মধ্যে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে এবং তা ঝগড়ায় রূপ নিচ্ছে।

যৌনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সম্পর্ক বা বিয়ের বয়স যত বেশিই হোক না কেন বেশিরভাগ মানুষই তার সঙ্গীকে সরাসরি যৌনতায় আহ্বান করে না বা করতে চায় না। এর প্রধান কারণ প্রত্যাখানের ভয়। যৌনতার আহ্বানে প্রত্যাখাত হলে আহ্বানকারী নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করেন।

দাম্পত্য সম্পর্কে যৌনতার ঘাটতি হলে, তা সে যে কারণেই হোক, অনেকেই মনে করেন তার সঙ্গীটি বুঝি তার সাথে প্রতারণা করছেন; বুঝি অন্য কোন সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এর থেকে শুরু হয় অবিশ্বাসের এবং একইসঙ্গে জন্ম নেয় রাগ ও বিতৃষ্ণা। যার পরিস্ফুটন ঘটে দাম্পত্য কলহে এবং সবশেষে ডিভোর্স।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি সেক্স কম করেন, তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ বেশি হয়। এখানে সেক্স বিষয়টা পরিস্কার করা আবশ্যক। কিছু দম্পতি এক দফা তীব্র ঝগড়ার অব্যবহিত পরেই একটি স্বল্পস্থায়ী তীব্র যৌনতায় লিপ্ত হন। এটা কোন সমাধান নয়। আবার অনেক দম্পতিই মনে করেন সেক্স ইজ জাস্ট সেক্স – ইন্টারকোর্স। Los Angeles-based therapist Vanessa Marin বলেন, “এটা সত্য নয়। এমন না যে তোমার পার্টনার তোমার কাছে একটা অর্গাজম চাচ্ছে। হ্যাঁ, অর্গাজম সেক্সের সবচেয়ে ফান পার্ট। কিন্তু সেক্স মানেই অর্গাজম নয়। সেক্স হলো এটার প্রমাণ যে, তুমি তোমার হাজারো অন্য বিষয়ের মধ্যেও তোমার সঙ্গীকে প্রাধান্য দিচ্ছো। তোমার সঙ্গীর এই অনুভবটা গুরুত্বপূর্ণ।”

মেরিনের মতে সেক্সকে কেবল ইন্টারকোর্স মনে না করে এটাকে আরো বৃহৎ পরিসরে দেখা উচিত। পার্টনারকে হ্যান্ড জব দেয়া বা তার মাস্টারবেশনের সময়ে ডার্টি টক করা, একসাথে পর্ন দেখা, কিংবা জাস্ট উদোম হয়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকা, ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় সেক্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ঝিমিয়ে পড়া দাম্পত্য সম্পর্কে এগুলো নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এবং এর ফলে দাম্পত্য কলহের নিরসন হতে পারে।

অনেক দম্পতি সংসারের সবকিছুই পরিকল্পনা করে নিলেও যৌন মিলনের ব্যাপারে কোন পরিকল্পনা থাকে না। কিন্তু যৌনতা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা বলেন যৌনতার ক্ষেত্রেও রুটিন করে নিলে এমন কিছু মজা নষ্ট হয় না।

৪. সন্তানঃ হ্যাঁ, সন্তান নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়। পাশ্চাত্যে এর রূপ কীরকম তা তেমন জানা নেই, তবে আমাদের প্রাচ্যের রূপটা ভালভাবেই জানা আছে। সন্তানকে বাবা-মা কেউই কম ভালবাসেন না। কিন্তু প্রাচ্যের বাবা-মায়েদের অনেকেই জানেন না সন্তানের সাথে তাদের কীরকম আচরণ করা উচিত। আর এখান থেকেই দাম্পত্য কলহের শুরু হয়। স্বামী মনে করেন তার স্ত্রী সন্তান কেয়ার করা ঠিক মত বোঝেন না, আর ওদিকে স্ত্রী মনে করেন তার স্বামী সন্তানকে প্রশ্রয় দিয়ে নষ্ট করছেন। এভাবে একে অন্যকে দোষারোপ করে না হয় সন্তানের মঙ্গল, না হয় নিজেদের লাভ। বরং দুই তরফ থেকেই ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

৫. বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্কঃ এই বিষয়ে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যে কোন ফারাক নেই। বাংলা সিনেমা কিংবা স্টার জলসার সিরিয়ালের বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্ব পাশ্চাত্যে সমাজেও রয়েছে। পার্থক্য কেবল মাত্রায় কিংবা মাত্রাজ্ঞানে।

আমার মনে হয় এমন কোন মধ্যবিত্ত বাঙালি দম্পতি পাওয়া যাবে না যাদের পরস্পরের শ্বশুরবাড়ির বিষয় নিয়ে অল্প-সল্প কলহ হয়নি। বাবার বাড়ির ব্যাপারে বাঙালি নারী খুবই স্পর্শকাতর। স্বামী বেচারা কৌতুক করে কিংবা স্ত্রীর জবাবেও যদি কখনো ভুল করে তার শ্বশুর বাড়ির নামে কিছু বলে বসেন, তাহলে এস্পার-ওস্পার অবস্থা হয়ে যায়।

(আমার মনে হয়, যখন যৌথ পরিবারের ব্যাপার ছিল, তখন স্বামীর বাড়িতে আসা নববধূটি যে দুঃসহ অবস্থা পার করতো, তাতে তার পক্ষে শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদকে আপন করে নেয়া খুবই মুশকিল ছিল। এমতাবস্থায় বাবার বাড়িটাই ছিল তার একমাত্র আপন আশ্রয়। আজ এই নিউক্লিয়ার পরিবারের যুগে এসেও পূরাতন যুগের গল্প-সাহিত্য পড়ে বড় হওয়া নারী সেই মানসিকতা থেকে বের হতে পারে না। একান্তভাবে স্বামীর সাথে বাস করেও বিয়ের পরে কয়েক বছর তার কাছে নিজের সংসারের চেয়ে বাবার বাড়িটাকে বেশি আপন মনে হয়। এটা আমার ধারণা মাত্র।)

এর বাইরেও কিছু সমস্যা রয়েছে। স্বামীর বাবার বাড়ি থেকে কেউ বেড়াতে এলে স্ত্রী যা কিছুই করুক, স্বামী মনে করেন তার স্ত্রী তার পরিবারের সদস্য/আত্মীয়কে অবহেলা করছেন। একইভাবে স্ত্রীর বাবার বাড়ি থেকে কেউ বেড়াতে এলে স্ত্রী মনে করেন তার স্বামী তার পরিবারের সদস্য/আত্মীয়কে অবহেলা করছেন। ঈদে/পূজায় কোন বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া হবে, এ নিয়েও বাধে কলহ। স্বামীর বাড়িতে টাকা পাঠানো হলে স্ত্রী কিছু না বলতে পারলেও মনঃক্ষুণ্ন হন; বিপরীতক্রমে এটি আরও বেশি সত্য।

৬. পছন্দের অগ্রাধিকারঃ স্বামী ও স্ত্রী দু’জন আলাদা মানুষ। তারা একে অপরকে ভালবাসতে পারে, কিন্তু তাদের পছন্দ-অপছন্দ যে একই হবে কিংবা কাছাকাছি হবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। একজন অবসরে বই পড়তে পছন্দ করেন তো আরেকজন সিনেমা দেখতে ভালবাসেন। একজন টিভিতে খেলা ও খবর দেখতে পছন্দ করেন তো আরেকজন নাটক-সিরিয়াল পছন্দ করেন। এর মাঝেই দাম্পত্য চলে।

সংসারে আপনার নিজের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া হলে আপনার সঙ্গী নিজেকে গুরুত্বহীন বা শক্তিহীন মনে করতে পারেন। বাস্তবতা কিন্তু উল্টো। দাম্পত্যে নিজের ক্ষমতা হারানো মানে দাম্পত্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। প্রতিটা দম্পতিরই এটা মনে রাখা জরুরী।

৭. ঈর্ষাঃ দাম্পত্য সম্পর্কেঈর্ষা হলো সঙ্গীকে হারানোর ভয় থেকে উদ্ভুত মানসিক প্রতিক্রিয়া। এই ভয়ের বাস্তব ভিত্তি থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর যত দম্পতি ম্যারেজ থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হন, তাদের এক তৃতীয়াংশই যান ঈর্ষা থেকে উদ্ভুত সমস্যা নিয়ে। ঈর্ষার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। আমি প্রধান কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করছি।
ক. বিয়ে বা দাম্পত্য সম্পর্কে অবাস্তব প্রত্যাশা
খ. কর্তৃত্বপরায়ণতা বা সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা
গ. অতীতের কোন সম্পর্কে খারাপ অভিজ্ঞতা থাকা
ঘ. নিরাপত্তাহীনতা
ঙ. সঙ্গী কর্তৃক পরিত্যক্ত কিংবা প্রতারিত হওয়ার ভয়
চ. হীনমন্যতা (inferiority complex)

ঈর্ষা যে সবসময় খারাপ, তা কিন্তু নয়। যৌন বিশেষজ্ঞ ও লেখক পলা হলের মতে ভালবাসার ক্ষেত্রে অল্প মাপের ঈর্ষা ধনাত্মক শক্তি (positive force) হিসেবে কাজ করে। এটি আবেগকে বেগ দেয় এবং যৌন মিলনকে কামময় করে দাম্পত্য সম্পর্ককে জিইয়ে রাখে। কিন্তু উচ্চমাত্রার ঈর্ষা ঠিক এর বিপরীত। অযৌক্তিক ঈর্ষা থেকে জন্ম নেয় রাগ, বিতৃষ্ণা, বিশ্বাসহীনতা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা, ডিপ্রেশন, এবং সর্বোপরি দাম্পত্য কলহ। ঈর্ষা থেকে উদ্ভুত দাম্পত্য কলহ সময়ের সাথে বাড়ে বৈ কমে না এবং এর পরিণতি হয় বিবাহ বিচ্ছেদ।

ঈর্ষা বা জেলাসি থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, এর জন্য প্রয়োজন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সব থেকে ভাল হয় ঈর্ষাকে বাড়তে না দেয়া। এর জন্য যা যা করা যেতে পারেঃ
ক. প্রথমেই এটা স্বীকার করে নিন যে আপনার জেলাস আচরণ আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে নষ্ট করছে।
খ. সঙ্গীর সাথে কলহ নয়, বরং তার সাথে আপনার ঈর্ষার কারণটি নিয়ে আলোচনা করুন।
গ. সঙ্গীর ওপর গুপ্তচরবৃত্তি না করে তার সাথে কথা বলুন। গুপ্তচরবৃত্তির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, আপনার আশঙ্কা ভুল হলে এবং আপনার গুপ্তচরবৃত্তি সঙ্গীর কাছে প্রকাশ হয়ে গেলে দাম্পত্য কলহের নতুন ইস্যু সৃষ্টি হবে।
ঘ. নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কিছু দাম্পত্য রুলস তৈরি করে নিন।
ঙ. সাধারণত ব্যক্তিক ও যৌন আচরণের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে আপনার সঙ্গী ধরে নিতে পারে যে আপনি তার সাথে প্রতারণা করছেন। এর থেকেই ঈর্ষার জন্ম হয়। তাই এক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সঙ্গীকে সত্যটা বলুন এবং আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করুন।

৮. অতীতঃ আপনার সাথে বিয়ে বা ভালবাসার পূর্বে আপনার সঙ্গীটির এক বা একাধিক সম্পর্ক থাকতে পারে। প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্য সবখানেই সেসব অতীত নিয়ে কিছু না কিছু দাম্পত্য কলহ ঘটতে দেখা যায়। আমাদের রক্ষণশীল সমাজে এটি কেবল কলহ ঘটিয়েই থেমে থাকে না, অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটিয়ে থাকে।
বিয়ের আগে আপনার সঙ্গীটি কী করেছেন, সেটা এখন কোন গুরুত্ব বহন করে না। যে বিষয়ে আপনার কাছে কোন সমাধান নেই, সে বিষয়কে ঘিরে একটা ইস্যু তৈরি করে দাম্পত্য কলহ তৈরি কোন বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে না।

অনেক দম্পতি নিজেদের অতীত নিয়ে আক্ষেপ করেন। “বিয়ের আগে তো তুমি এরকম ছিলে না! তোমার এই রূপটা কোথায় ছিল? আগে জানলে ….”
এ বিষয়ে একটা কথা মনে রাখলেই দাম্পত্য কলহ এড়ানো যায়। আপনি নিজে যেমন আগের মানুষটি নন, আপনার সঙ্গীটিও নন। আপনি হয় তো মনে করছেন যে আপনি একই আছেন এবং আপনার সঙ্গীর প্রতি একইরকম প্যাশন অনুভব করছেন, বাস্তবে এটা সত্য নয়। নিজেকে একটু গভীরভাবে খেয়াল করলেই এটি আপনার কাছে ধরা পড়বে। দ্বিতীয়ত, দাম্পত্য সম্পর্কের এই পর্যায়ে এসে আপনার সঙ্গীটির প্যাশন হয় তো বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এর কিছু অংশ গিয়েছে কাজে, কিছু সংসার ও সন্তান-সন্তুতির দায়িত্ব পালনে। সেই সংসারটাও কিন্তু আপনারই এবং সেই সন্তান আপনারই জিন বহন করছে। এগুলোর মূল্যায়ন করে দেখুন, দেখবেন আপনি অতীত নিয়ে যতটা হতাশ হচ্ছেন, ততটা হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

দাম্পত্য কলহের সমাধানঃ
দাম্পত্য কহলের সমাধান কি আদৌ জরুরী? এটা একটা বড় প্রশ্ন। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের এই যুগে দাম্পত্য থাকলে দাম্পত্য কলহও থাকবে। আমাদেরকে তাই খুঁজতে হবে দাম্পত্য কলহ বন্ধ নয়, কী করে এর গুণগত মান বাড়ানো যায়। ওপরে সমস্যার সাথে সাথেই বেশ কিছু সমাধানের পথ দেয়া হয়েছে। এখানে বাড়তি কিছু যোগ করা হলো।

১. বলো কম, শোন বেশিঃ অন্য ঝগড়ার মতোই দাম্পত্য কলহেও মানুষ নিজের কথাটাই কেবল বলতে চায়, সঙ্গী কী বলছেন বা বলতে চাচ্ছেন, তা শুনতে চায় না। আপনি যদি কলহ কমাতে চান বা কলহের গুণগত মান বাড়াতে চান তাহলে আপনার সঙ্গী কী বলতে চান, তা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে।

২. সমস্যা চিহ্নিতকরণঃ যখন কোন বিষয়ে বারবার ঝগড়া হতে থাকে তখন সেই বিষয়ে দুজন বসে ভেবে দেখা দরকার যে এই কলহের সূত্র কোথায়। অনেক সময় একই সূত্র ধরে ঝগড়ার নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হয়। সূত্রটি চিহ্নিত করতে পারলে ঐ বিষয়ে দু’জনের মতামত নেয়া জরুরী। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে একটা ডায়েরি নিয়ে বসে দু’পক্ষের মতামত লিপিবদ্ধ করে দেখা যেতে পারে। এতে হয় তো ইস্যুটির সমাধান হবে না, কিন্তু একজনের কাছে আরেকজনের জানা হয়ে যাবে যে এই ইস্যুতে প্রত্যেকের মতামত কী। ফলে পরবর্তীতে ঐ ইস্যুতে নতুন করে ঝগড়া হওয়ার খুব বেশি উপাদান থাকবে না।

প্রবন্ধের প্রথমেই দাম্পত্য কলহের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে অর্থের কথা বলা হয়েছিল। অর্থ ব্যয় বা সঞ্চয় নিয়ে ঝগড়ার ক্ষেত্রে এটি কাজ দিবে আশা করি। Penn State University-এর গবেষকরা দেখেছেন, যে সকল স্বামী-স্ত্রী সাংসারিক বা বৈষয়িক যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পরস্পরের মতামত নিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম ঝগড়া হয়ে থাকে। কারণ এতে তারা দু’জনেই সন্তুষ্টি বোধ করেন।

৩. সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ না করাঃ দাম্পত্য কলহে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে ‘তুমি সবসময়ই এটা করো,’ ‘তুমি কখনোই সেটা করো না,’ এই জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে থাকে। এটা দাম্পত্য কলহের অন্যতম খারাপ দিক। আপনার ভিতর যদি আপোষের মানসিকতা থাকে তাহলে ‘সবসময়ই’ ‘কখনোই’, এই জাতীয় শব্দগুলো পরিহার করতে হবে। পূর্বে কী হয়েছিল তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এখন যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে, সেটার সমাধান জরুরী।

পরিবারের বর্ধিত সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন ইস্যুতে দাম্পত্য কলহও বেশি হয় সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য। আপনার স্বামী/স্ত্রীর কোন দোষ বা সমস্যাকে তার বাবার পরিবারের দোষ কিংবা সমস্যা মনে করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. নিয়মিত সেক্সঃ এ বিষয়ে পূর্বেই লেখা হয়েছে। তারপরও গুরুত্ব বিবেচনা করে আরো কিছু যোগ করা হলো।

আপনাকে বুঝতে হবে আপনার সঙ্গী কখন আপনার কাছে শারীরিক মিলন প্রত্যাশা করছেন। পূর্বেই বলেছি, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে তিনি হয় তো আপনাকে আহ্বান করছেন না। কিন্তু তাকে পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে তার মানসিক অবস্থাটা বুঝে নিতে হবে।

পুরুষেরা সাধারণত বিয়ের কয়েক বছর পরেই যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এসময়ই দাম্পত্য কলহ বেশি হয়। যৌন মিলন মানুষের শরীরে এন্ড্রোফিন, ডোপামিন এবং সেরোটোরিন নামক তিনটি হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। এগুলোকে ফিল-গুড বা হ্যাপিনেস হরমোন বলে। আপনি যৌনতায় আগ্রহ হারালেও আপনার স্ত্রীর বিমর্ষ ভাব কাটাতে এই হরমোনগুলোর দরকার আছে। তাই যৌনতাকে একটা রুটিনে নিয়ে আসতে পারলে (সপ্তাহে অন্তত ১/২ বার) সবচেয়ে ভাল হয়।

নিয়মিত যৌনতার সাথে দরকার যৌনতায় ভ্যারিয়েশন আনা। প্রাসঙ্গিক কি অপ্রাসঙ্গিক জানি না, যৌনতার ক্ষেত্রে আমি বর্তমান সময়কে পর্ন-প্রভাবিত সময় মনে করি। নারীর থেকে পুরুষরা এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত। আমার এই ধারণা দৃঢ় হয়েছে পর্ন সাইটে কিছু হিডেন ক্যাম ভিডিও দেখে। আগে ভাবতাম পর্নগ্রাফিতে যৌনতার এত ভ্যারিয়েশন বুঝি কেবল দর্শককে বিনোদন দেয়ার জন্য। কিন্তু হিডেন ক্যাম ভিডিওতে নর-নারীর স্বতস্ফূর্ত যৌনতায় পর্নগ্রাফিক ভিডিওকে অনুকরণ করা দেখে আমার মনে হয়েছে বর্তমানে সুস্থ যৌনতার জায়গা দখল করে নিয়েছে পর্নগ্রাফি। এমতাবস্থায় দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ওগুলোরও প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। আর সেটা যে রয়েছে তা ওপরে যৌনতা সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে থেরাপিস্টের সাজেশন থেকেই বোঝা যায়।

৫. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনঃ Penn State University গবেষকগণ দাম্পত্য কলহ বিষয়ক গবেষণায় দেখেছেন, যেসব দম্পতি তাদের বিয়েকে আজীবনের জন্য মনে করেন, তাদের মধ্যে ছাড় দেয়ার প্রবণতা বেশি। তাই তাদের মধ্যে ঝগড়া অপেক্ষাকৃত কম হয়। আর যারা এমন মনে করেন যে, এই বিয়ে টিকবে কি টিকবে না নিশ্চিত না, তাদের মধ্যে কলহ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

গবেষকগণ এটা বলছেন না যে আপনাকে জোর করে বিয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের পথ তো আপনার জন্য খোলা থাকছেই, তবুও আরেকবার ভেবে দেখুন কেন আপনি আপনার স্বামী/স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন, আর কেন এখন তাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন। দ্বিতীয়/তৃতীয়বার যে আপনার সাথে একই ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটবে না, এ বিষয়ে তো আপনি নিশ্চিত নন। অবশ্য আপনার একার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে তেমন কিছু পরিবর্তন আসবে না, আপনার সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আবশ্যক। সেক্ষেত্রে আপনি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারেন।

৬. কিছু টোটকা সমাধানঃ
– রাগ নিয়েই ঘুমাতে যান। একজন না হয় সোফায়ই ঘুমালো। পরদিন সকালে কথা বলুন।
– ঝগড়ার মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে রাগ কমলে ফিরে এসে কথা বলুন।
– নিজেকে ঝগড়া থেকে সরিয়ে নিন। দুঃখিত বলতে শিখুন।
– ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে সঙ্গীকে বুকে জড়িয়ে ধরুন।
– ঝগড়ার মধ্যে কিন্তু শব্দটি কমানোর চেষ্টা করুন।
– ঝগড়ায় ‘তুমি’ এবং ‘তোমার’ শব্দগুলোর ব্যবহার পরিহার করুন। এটা যদি সচেতনভাবে করতে পারেন, দেখবেন সঙ্গীকে দোষারোপ করার জায়গা কমে গিয়েছে।
– নিজে ভাবুন যে এভাবে ঝগড়া করে কার কী লাভ হচ্ছে। আপনার সঙ্গীকেও এটা ভাবতে শিখান।

৭. অবশ্য কর্তব্যঃ আপনার স্বামী/স্ত্রী/সঙ্গীকে এই লেখাটি পড়ান। হাহাহা। আর তাতেও কাজ না হলে ম্যারেজ কাউন্সিলরের কাছে যান।

পরিশেষঃ
দাম্পত্য কলহ বিষয়ক গবেষণায় গবেষকগণ একটা বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। সেটি হলো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মাঝে ছাড় দেয়ার প্রবণতা বাড়ে। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই কোন প্রকার আলোচনা না করেই কিংবা সিদ্ধান্তে না পৌঁছেই তারা একে অপরকে ছাড় দেন। ফলে সমস্যাটা জিইয়ে থাকে, কিন্তু কলহের বিস্তৃতি কমে। বয়স বাড়ার সাথে একের প্রতি অপরের নির্ভরতা বাড়া এর একটা কারণ হতে পারে।

দাম্পত্য কলহ পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যতদিন আপনার দাম্পত্য আছে, ততদিন দাম্পত্য কলহও থাকবে। তারপর একদিন সঙ্গীকে হারালে লালসালু উপন্যাসের হাসুনির মার মায়ের মত অবস্থা হবে। বাক থাকতেও ঝগড়া করার মত কেউ না থাকায় বোবা হয়ে থাকতে হবে – ‘খেলোয়াড় চলে গেছে, খেলবে কার সাথে।’

Leave a Comment