খাপছাড়া আড্ডাপ্রবন্ধ

বই পর্যালোচনাঃ শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’

লেখকঃ রুমান শরীফ

শহীদুল জহিরের জন্ম ১৯৫৩ সালে, ঢাকার নারিন্দার ভুতের গলিতে এবং মৃত্যু ২০০৮ সালে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে। তাঁর সার্টিফিকেট নাম শহীদুল হক। লেখক হিসেবে এই নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর। কিন্তু একই নামে সমসাময়িক আরো কয়েকজন লেখক থাকায় তিনি তাঁর লেখক-নাম পরিবর্তন করে শহীদুল জহির রাখেন। পেশায় তিনি ছিলেন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁর প্রায় গল্প-উপন্যাসেই বারবার ফিরে আসে এই ভুতের গলি, নারিন্দা অঞ্চলসহ আরো কয়েকটি এলাকা।

sz1986
কথা সাহিত্যিক শহীদুল জহির

‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। এটি তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস। এ প্রসঙ্গে হাসান আজিজুল হক লেখেন, ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা একবারে প্রদীপ্ত যৌবনের রচনা। না কোন বোকামি, না কোন বালখিল্যতা, প্রখর পরিণত লেখকের লেখা উপন্যাস”। শহীদুল জহিরের অপরাপর লেখার সাথে এই উপন্যাসটির তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “বলতে ইচ্ছে হয় এই লেখাটি তিনি আর অতিক্রম করতে পারেননি। (ছোটগল্পের কথা এখানে হিসাবেই ধরছি না)। এমনই সুপরিণত, এমনই আবেগ আর বুদ্ধির টান টান ভারসাম্যে তা বাঁধা, লেখক হিসাবে জন্মেই টলমলে পায়ে হাঁটা নয়, একেবারে সেই মুহুর্ত থেকেই ঋজু মেরুদণ্ড, খাড়া ঘাড়, খরদৃষ্টি। এভাবেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শহীদুলের। না শহীদুলের নয়, তার রচনার। লেখক নামে যে মানুষটি থাকে, জীবন যাপন করে, কাজ যায়, কাজে আসে, সেই মানুষ শহীদুল কোনদিন আত্মপ্রকাশ করেননি। সঙ্গোপনে জীবন যাপন করেছেন তিনি, চলেও গেছেন প্রায় সবার অজান্তেই। শুধু তাঁর লেখাগুলো যেভাবে নিঃসংকোচে আত্মপ্রকাশ  করেছিল, বিনা আড়ম্বরে একটা শক্ত মজবুত আসন দাবি করেছিল, সেই দাবি এখন অনপেক্ষ প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।’ তাঁর তিনটি গল্পগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, গ্রন্থিত, অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা, ডায়েরি, সাক্ষাতকার নিয়ে পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে ‘শহীদুল জহির সমগ্র’’। আমরা এখানে আলোচনা করবো ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসটি এবং এর সাথে এই উপন্যাসের পেক্ষাপট।

শহীদুল জহিরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লেখেন,‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা উপন্যাসটিকে অনেকে প্রবন্ধের বই ভেবে কিনেছেন।’ কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান শহীদুল জহিরকে জিজ্ঞেসা করেছিলেন, ‘উপন্যাসের এমন একটা বিরস নাম দিলেন কেন?’ লেখক শহীদুল জহির হেসে বলেছিলেন,‘যখন উপন্যাসটি লিখছি তখন দেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা ভয়ংকরভাবে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে, আমি ভীষন উদ্ধিগ্ন, আতঙ্কিত ছিলাম, আমি মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়ংকর সময়টির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম। নাম নিয়ে কোন কাব্য আর রস করবার মানসিকতা ছিল না।’

আরেক সাক্ষাতকারে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে ভাবনা বা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লেখক জানান, ‘আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেশের রাজনৈতিক আবহ এবং এই সময়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রকাশিত ‘একাত্তরের দালালরা কে কোথায়’ পড়ে আমার মনের এমন একটা অবস্থা হয় য়ে, আমাকে জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বইটি লিখতে হয়। আমার কাছে এই রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ভালো লাগে নাই। তখন আমি বইটি লিখি। মার্কেজের ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউড’ পড়ে ফেলায় তাঁর কাছ থেকে জাদু বাস্তবতার রচনা পদ্ধতি নিই। আমার মনে হয় যে, আমি আমার কাহিনী তৈরীর অনেক দূর পর্যন্ত স্বাধীনতা নিতে পারি, আমার কল্পনাকে সম্ভব্যতার প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি।’

আর এভাবেই নির্মোহভাবে লিখে ফেলেন ৫৩ পৃষ্ঠার এই অসামান্য উপন্যাস, যা আসলে উনিশশ একাত্তর থেকে উনিশ পঁচাশি সালের বাংলাদেশের দলিল। এক মহল্লার বাস্তবতা বলা হলেও যা ছিল গোটা দেশের বাস্তবতা।

‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসে আমরা জানি ঢাকা শহরের এক মহল্লার কথা। যে মহল্লার মানুষজন যুদ্ধের সময়কালে নির্মমতার, খুনের, ধর্ষণের শিকার হন। তারা বাস্তুহারা হয়ে পড়েন। ‘যখন ২৫ শে মার্চের রাতে নয়াবাজারের কাঠের গোলা পুড়তে ‍শুরু করে তখন ভুতের গলি তার বাইরে থাকে না, ভূতের গলিতে অবধারিতভাবে একাত্তর সন নেমে আসে।’ এই ভুতের গলি বাংলাদেশের অন্যান্য মহল্লার মতই একটি মহল্লা আর এই মহল্লায় শুরু হয় যে নির্মমতা, ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড তা চলতে থাকে নয় মাস জুড়ে। একই চিত্র সারাদেশের। পাকিস্তানি আর্মিদের সহায়তা করার জন্য মহল্লায় মহল্লায় তৈরী হয়ে বদু মাওলানারা। মুক্তিযুদ্ধে সীমাহীন সব হিংস্রতা দেখায় পাকিস্তানি আর্মি এবং রাজকার, আলবদর, আল শামস তথা বদু মাওলানারা। এই বদু মাওলানারা কেবল একাত্তরে বাঙালিদের হত্যা, নির্যাতন করেই যে থেমে ছিলো এমন না, এরা বাংলাদেশে রাজনীতির সুবিধে নিয়ে টিকে আছে এখনো।

‘উনিশ শ পঁচাশি সনে লক্ষীবাজারের শ্যামপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আবদুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ফট করে ছিঁড়ে যায়।’ আবদুল মজিদের স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাওয়ার সংবাদ দিয়ে শুরু হয় উপন্যাসের। এটি কোন গুরুত্বপুর্ণ সংবাদ ছিল না, কিন্তু আবদুল মজিদের জুতো ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে আমরা জানতে পারি আবুল খায়ের নামের এক মাওলানা হরতাল পালন করায় মহল্লাবাসীকে ধন্যবাদ দেয় এবং ভাই বলে সম্বোধন করে। এতে আবদুল মজিদ হত বিহব্বল হযে পড়ে – সে আর জুতা সারাই করতে যায় না, অস্থিরতায় ঘরে ফিরে আসে।

আমরা জানতে পারি এই মাওলানা আবুল খায়েরের পরিচয়। আবুল খায়েরের সাথে কাকদের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার কথা। কাকদের সাথে পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার কথা জানাতে গিয়ে লেখক আমাদের জানান ‘আবদুল মজিদ যখন তার দৃষ্টি আবুল খায়েরের দীর্ঘ এবং তরুণ শ্মশ্রু আর নীল রঙের জোব্বার উপর রাখে তার মনে হয় আকাশে যত কাক ওড়ে সেগুলো আবুল খায়েরের জোব্বার ভেতর থেকেই যেন বের হয়ে আসে।’ কারণ একাত্তর সালে মহল্লায় কাক ওড়ানো শুরু করে মাওলানা বদু, আবুল খায়েরের পিতা।

‘লক্ষীবাজারের মানুষের মনে পড়ে একাত্তর সনে বদু মাওলানা নরম করে হাসত আর বিকেলে কাক ওড়াত মহল্লার আকাশে। এক থালা মাংস নিয়ে ছাদে উঠে যেত বদু মাওলানা আর তার ছেলেরা। মহল্লায় তখনো যারা ছিল, তারা বলছিল, বদু মাওলানা প্রত্যেক দিন যে মাংসের টুকরোগুলো আকাশে ছুড়ে দিত, সেগুলো ছিল মানুষের মাংস।’ আর আমরা এভাবেই জানতে পারি কাকেরা কোন মাংসের টুকরো ধরতে ব্যর্থ হলে সেগুলো গিয়ে পড়তো পাশের প্রতিবেশীদের ঘরের ছাদে, রাস্তায়, পরিপার্শ্বে। এমনই একটি মাংসের টুকরো পড়েছিলো মহল্লার প্রাচীন মুসলমান পরিবার প্রধান খাজা আহমেদ আলীর ছাদে। তিনি দেখতে পান এই মাংসের একপাশে মসৃণ চামড়া এবং সেটার গায়ে ছোট্ট মসুরের ডালের মত পাথরের ফুল।তিনি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেটিকে দাফন করেছিলেন।

আমরা এক সময়ে দেখি খাজা আহমেদ আলীর তার পুত্র সমতে নিহত হন ।শুধু খাজা আহমেদ আলীই সপুত্রক নিহত হননি, নিহত হয়েছে মহল্লার প্রচুর মানুষ, যারা মহল্লা ছেড়ে যায়নি যুদ্ধের সময়ে। আসলে যাবার কোন জায়গা ছিলো না। নিরাপদ শব্দটাই তখন আর নিরাপদ ছিলো না। যখন খাজা আহমেদ আলীর ছেলেকে হত্যা করা হয়, তখন তিনি ছাদের সিঁড়িতে উঠে আজান দিতে থাকেন। যে আজান মুসলমানরা বিপদে দিয়ে থাকেন মহল্লাবাসীর সে আজান বিলালের কন্ঠস্বরের মত মধুর মনে হয়। তিনি শেষে দুইবারে জায়গায় চারবার আল্লাহু আকবার বলেন। তিনি ঘোষণা দিতে থাকেন আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, কিন্তু আল্লাহ তাকে সাহায্য করে না, আজানরত অবস্থায় গুলি করা হয়। গুলি করার পরে বদু মাওলানা খাজা আহমেদ আলীকে কাফের বলে গালি দেয়।

বদু মাওলানাকে মহল্লার একমাত্র মুসলমান মেয়ে মোমেনাকে অশ্লীল গালি দিতে শোনা যায়, যুদ্ধের নয় মাসের ভেতরে মোমেনাকেও বদু মাওলানার দল হত্যা করে। মোমেনা ঘরে পালিয়েও নিরাপদ থাকতে পারেনি। বদু মাওলানার কাছে মোমেনার দোষ ছিল, মোমেনা খ্রিষ্টান মেয়ের সাথে গীর্জায় গান বাজনা করতে যেত ।ফলে বদু মওলানার রাজাকারের দল মোমেনাকে নিয়ে ধর্ষণ এর পর নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই লাশের অবস্থা এতোটা বীভৎস যা গোসল করিয়ে দাফন দেয়া যায়নি। এই মহল্লায়ই খুন হয় আলাউদ্দিন নামের এক এক নাবালক মুসলমান। মহল্লায় মিলিটারি এলে সে-ই এই মহল্লায় প্রথম নিহত হয় এবং সেই মৃত্যু থেকে শুরু করে সকল মৃত্যু কিংবা হত্যাকাণ্ড ঘটে বদু মাওলানার নেতৃত্বে। এই আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ড মহল্লাবাসী টের পায় জমির ব্যাপারীর কিশোরী কন্যার মাধ্যমে। বদু মাওলানা ও তার ছেলেরা কাকদের যে মাংস বিলাতো তার ‘অন্য আর এক  টুকরো পড়েছিলো জমির ব্যাপারীর কুয়োতলায়, বিকেলে ভাতের চাল ধোয়ার সময়, হাড়িরা ভেতর। এটা ছিল একটি কাটা পুরুষাঙ্গ। হাড়ির ভেতর এসে পড়তেই জমির ব্যাপারীর কিশোরী কন্যাটি চমকে উঠেছিল, কিন্তু হাড়ির ভেতর থেকে বের করে এনে সে বস্তুটিকে চিনতে পারেনি। সে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলে স্ত্রী তার অভিজ্ঞতার কারণে জিনিসটা চিনতে পারে। কাটা লিঙ্গটি খতনা করানো, মুণ্ডিত। ব্যাপরীর স্ত্রী সেটা দেখে বিমুঢ় হয়ে পড়ে।’ কাটা লিঙ্গটিকে ন্যাকরায় প্যাঁচিয়ে বদু মাওলানাকে ফেরত দিয়ে আসে। বদু মাওলানার বউ সেটি মুসলমানের চিহ্নিত করলেও বদু মাওলানার কোন ভাবান্তর হয় না, বরং সে স্ত্রীকে তালাক দেয়।

মহল্লার সবচাইতে নৃশংস দুটো মৃত্যু মোমেনা আর আলাউদ্দিনের। বদু মাওলানা এই দুটো হত্যাকাণ্ড ঘটায় ধর্মকে কেন্দ্র করে।

এই উপন্যাসে এমন সব ভয়াবহ নির্মম সব সহিংসতার কথা বলা হয়েছে, যা ঘটেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, যা নিয়ে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র। এইসব জঘন্য অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলে এরা ফিরে আসে গর্ব নিয়ে। শেয়ালের মত ধূর্ত আদতে এই কাকতাড়ুয়ারা আবার প্রকাশ্য চলাফেরা করে। আমরা দেখি এই  বদু মাওলানারা ফিরে এসে ক্ষমা চাওয়ার ভান করে, সেখানে নেীকা প্রতীকের নেতা বদু মাওলানাকে বলে তার নেতা যেহেতু তাকে ক্ষমা করেছে, তার কোন হিংসা বা রাগ নেই তার প্রতি। তারপরই বদু মাওলানা অবার মহল্লায় চলাচলের সুযোগ পায়, রাজনৈতিক সুযোগ নেয়। যুদ্ধাপরাধীর দল তাকে আমির সংবর্ধনা দেয়। এমনকি মহল্লার লোকদের ভাই বলে সম্বোধন করে বেদুর ছেলে খায়ের। এতে আর সকলের মত আতঙ্কিত হয় আবদুল মজিদ, কারণ তার সন্তান আছে, সেই সন্তানের নাম তিনি রেখেছিলেন বদু মোল্লার হাতে নিহত তার বোনের নামে। বদু মাওলানা রাস্তায় তাকে ইঙ্গিত দেয় যে সে একাত্তরের কথা ভোলে নাই, সে মজিদের বোনকে ভোলে নাই! এটা ছিল একধরণের হুমকি, যে হুমকিতে আবদুল মজিদ তার মেয়ের ভবিষৎ নিয়ে শকিংত হয়, সে ভাবতে পারে না তাদের পরিবার এখন নিরাপদ কিনা। সে ইত্তেফাক পত্রিকায় বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়। তার পূর্বপুরুষের বাড়ী বিক্রয় করে সে চলে যায়। মহল্লা হয়ে ওঠে ফের বদু মাওলানাদের।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ নানান জটিলতায় পড়েছিল। তার ভেতর অন্যতম একটি সমস্যা হল –স্বাধীনতা বিরোধীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা, তাদের ক্ষমতায় আসা এবং রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িকতায় নিমজ্জিত হওয়া। অঘোষিতভাবে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত তথ্য আড়াল করে রাখা হয়েছিল। স্কুল,কলেজের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখায় পাকিস্তানি আর্মিদের কথা লেখা হতো না; তাদেরকে বলা হতো হানাদার বাহিনী। হুমাযুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে ‘আগুনের পরশমনি’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে সেন্সর বোর্ড থেকে তাকে বলা হয় ‘শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকন্ঠ’ বাদ দিতে হবে; নগ্ন করে দুটি মানুষকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, সেটা বাদ দিতে হবে; পাকিস্তানি মিলিটারী কথাটা বাদ দিতে হবে। সেন্সর বোর্ডের অযৌক্তিক দাবি, ‘আমরা সার্কভুক্ত দেশ, আমরা এমন কিছু করতে পারি না যা সার্কের চেতনা ক্ষুণ্ন করে।’ আমাদের দেশের মানুষকে নির্য়াতন করেছে পাকিস্তানিরা, আর তা এদেশের সিনেমায় দেখাতে পারবে না। বলতে পারবে না স্বাধীনতার সেই ইতিহাস! এভাবেই নানান উপায়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতেই শহীদুল জহির লেখেন ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’, যেখানে ফুটে উঠেছে উল্টে যাওয়া রাজনৈতিক বাস্তবতায় মানুষের হাঁসফাঁস করা জীবনের চিত্র। জাদুবাস্তবতায় লেখা হলেও আমরা দেখি উপন্যাসটি আসলে কোন জাদু নয়, নিখাঁদ সত্যি ঘটনার এক প্রামাণ্য দলিল।

……….

মেসেঞ্জারভিত্তিক সাপ্তাহিক পাঠচক্র ‘খাপছাড়া আড্ডা’র জন্য প্রবন্ধটি লিখেছেন রুমান শরীফ। প্রবন্ধটি গত ৭মে পাঠ করা হয়।

Leave a Comment