খাপছাড়া আড্ডাজঙ্গিবাদপ্রবন্ধবাংলাদেশস্মৃতিচারণ

অনন্ত বিজয় দাশঃ আলো হাতে চলছিলো এক আঁধারের যাত্রী

লিখেছেনঃ মহিউদ্দীন শরীফ

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী , ‘ ভয় নাই , ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

আজ ১২মে, মুক্তমনা লেখক, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা  বিষয়ক ছোটকাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদক, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, মুক্তমনা ব্লগের অন্যতম কন্টিবিউটর অনন্ত বিজয় দাশের তৃতীয় বার্ষিকী।  ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে অনন্ত যখন বাসা থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন বাসার আশেপাশে ওৎপেতে থাকা ইসলামী সন্ত্রাসীরা অনন্ত বিজয় দাশকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

২০১৩ সাল থেকেই ইসলামী সন্ত্রাসীরা মুক্তচিন্তক ব্লগারদের তালিকা তৈরি করে সিরিজ হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। অনন্ত বিজয় ছিল সেই সন্ত্রাসের চতুর্থ শিকার। অনন্ত বিজয় লেখালেখি করতেন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে,  বৈষম্যের বিরুদ্ধে; মানবিকতার স্বপক্ষে,  বিজ্ঞানের স্বপক্ষে, মুক্তচিন্তার স্বপক্ষে, শোষণহীন এক সমাজের পক্ষে, তিনি চাইতেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান হয়ে এদেশ হয়ে উঠুক মানুষের বাসযোগ্য।

২০০৫ সালে সমমনা মেধাবী তরুণদের নিয়ে তিনি ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল’ গঠন করেছিলেন। অনন্ত ছিলেন একজন আপোষহীন কলমযোদ্ধা; যুক্তিই তার প্রধান অস্ত্র। লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল জীববিজ্ঞান ও বিবর্তনবাদ। চার্লস ডারউইন ছিলেন তাঁর অন্যতম অনুপ্রেরণা।  মুক্তমনা ব্লগের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। এর পাশাপাশি সামহোয়ারইন ব্লগ ও ফেসবুকেও লেখালেখি করতেন। মানবতা এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা এবং প্রসারে তার অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬  সালে তিনি মুক্তমনা র‍্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।

অনন্ত বিজয় দাশের পরিচিতি/জীবন বৃত্তান্ত :

অনন্ত বিজয় দাশ ১৯৮২ সালের ৬ অক্টোবর সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রবীন্দ্র কুমার দাশ এবং মাতার নাম পিযুষ রানী দাশ। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শৈশব থেকেই তাঁর বইপড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। টিফিনের টাকা জমিয়ে বই কিনতেন। তাঁর নিজের কক্ষটি ছিলো একটা লাইব্রেরীর মতন; বই সংগ্রহ ছিলো তাঁর নেশা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি। (সূত্র)

যেভাবে হত্যা করা হয় অনন্তকে:

২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ইসলামি  চাপাতি সন্ত্রাসীদের আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়, তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পরেই মূলত দেশের মুক্ত-চিন্তকরা আতংকিত হয়ে পড়েন। অনন্তের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় এবং  বাসায় অসুস্থ পিতামাতার দায়িত্বভার কাঁধে থাকার কারণে তাঁর পক্ষে চাকুরী ছেড়ে আত্মগোপন করা বা নিজের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা গ্রহণ করা সম্ভবপর ছিলো না। বাধ্য হয়ে দেশত্যাগের জন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে মেইল করেছিলেন।
‘আইকর্ন’ তাঁর এপ্লিকেশন এপ্রুভড্ করলেও দ্রুত সহযোগীতার কোন আশ্বাস দেয় নি। এমতাবস্থায় একজন সিনিয়র মুক্তমনা সদস্য সুইডিশ পেনের সাথে যোগাযোগ করে  ‘আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিবসে’ অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনন্ত বিজয়ের জন্য একটা  আমন্ত্রণ পত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুইডিশ সরকার ভিসা না দেওয়ার কারণে অনন্তের আর দেশছাড়ার সুযোগ হয় নি।  আর তাদের অবহেলার কারণেই অনন্ত বিজয়কে হতে হয়েছে পৃথিবী ছাড়া।
খুন হওয়ার সপ্তাহ তিনেক আগে থেকেই খুনীদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছিলে অনন্ত। এমনকি হুমকিদাতারা ফেরিওয়ালা সেজে অনন্তর বাসা ও আশপাশের রাস্তা গলি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছিলো। এটা টের পেয়েছিলেন অনন্ত। পরিবারের সদস্যদের না জানালেও কয়েকজন বন্ধুকে জানিয়েছিলেন ঘটনাটা। তবে হুমকিগুলো খুব একটা পাত্তা দিতেন না। বন্ধুদের কাছে বলতেন, ‘ধুৎ, কিচ্ছু হবে না… হুমকি দিয়ে আসলে কেউ কিছু করতে পারে না…।’

তিনি আসলে ইসলাম ধর্মের এই কালসাপগুলোকে চিনতে ভুল করেছিলেন। ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে অফিসে যাওয়ার পথে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে আনসার বাংলা নামধারী একটি ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠন।

একজন প্রত্যাক্ষদর্শী চা বিক্রেতা সুবহান আলী ঘটনাটির বর্ণনায় জানা যায় অনন্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে আসা মাত্র চারজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি মেইন রোড থেকে সুবিদবাজার তার বাসার দিকে দৌড় দেন। তবে বেশি দূর তিনি যেতে পারেননি তিনি। নূরানি দিঘিরপাড় এলাকায় যাওয়ার পর তাঁকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী ওই চার সন্ত্রাসী।
খুনী জঙ্গীগুলো পেছন দিক থেকে অনন্তের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথা থেকে মগজ বের হয়ে যায়। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমরা হারাই আমাদের মুক্তচিন্তার জগতের একজন উদীয়মান নক্ষত্রকে, একজন যুক্তিবাদী অসাধারণ মানুষকে। এ ক্ষতি অপুরণীয়। বাংলাদেশকে উলটোপথে হাটা থেকে ফেরানোর জন্য অনন্ত বিজয় দাশের মত লেখকের বড় প্রয়োজন ছিলো। (সূত্র)

অনন্ত হত্যা এবং ইসলামের দায়:

বাংলাদেশে যতগুলো ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে, প্রত্যেকটা হত্যার পিছনে রয়েছে, ধর্মের সরাসরি সংযোগ ও ধর্মীয় নির্দেশনা। হ্যাঁ- আমি ইসলামের কথাই বলছি। বাংলাদেশে যতগুলো মুক্তচিন্তক খুন হয়েছেন সবগুলোর পিছনেই রয়েছে ইসলামিস্টরা এবং খুনিদের পরিচয় তারা সব মুসলমান। এরা মানুষকে হত্যা করে ধর্মীয় কারণে,  তথাকথিত ধর্মের তথাকথিত বায়বীয় অনুভূতি ও সম্মান রক্ষার্থে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, এরা একইসাথে ব্লগারদের লেখায় ধর্মানুভূতিতে আহত হওয়ার অভিযোগ তোলে আবার বলে হত্যাগুলোর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আর প্রতিটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরপরই জোর গলায় চেঁচায়- ইসলাম শান্তির ধর্ম,  ইসলাম নিরাপরাধ কারো হত্যা সমর্থন করে না।

মডারেট তাকিয়াবাজ মুসলিমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসলামের সম্পর্ক অস্বীকার করলেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামক ইসলামী জঙ্গি সংগঠন এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়েছিল।

 অনন্ত বিজয়ের নির্মম হত্যার এক বছর পরে স্মৃতিচারণায় বন্যা আহমেদ লিখেছিলেন: ২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের উপর আক্রমণের পর অনন্ত প্রমিজ করেছিল, আমি পড়ি কি না পড়ি সে আমাকে প্রতিদিন একটা করে ইমেইল করবেই। আমাদের উপর আক্রমণের পরে আমার ব্যক্তিগত আইফোন আর পাওয়া যায়নি, কিন্তু আমার অফিসের ব্ল্যাকবেরিটা ছিল তখনও। কাজের ইমেইলেই প্রতিদিন একটা করে ইমেইল করত অনন্ত। স্কয়ারের আইসিউতে ওই চারদিন তো ইমেইল দেখার মতো অবস্থা ছিল না; কিন্তু তারপর আমেরিকায় মেয়ো ক্লিনিকের আইসিউতে থাকার সময় প্রতিদিন ‘দিদি কেমন আছ’ বলে ইমেইল করত অনন্ত। চোখে এখনও ভাসে সেই ইমেইলগুলো।

শুনেছিলাম, আক্রমণের কথা শুনে তখনই সিলেট থেকে ঢাকায় চলে এসেছিল, কিন্তু ডাক্তাররা দেখা করতে দেয়নি বলে স্কয়ারের দরজাতেই বসে ছিল সে। ওকে অনেক বার বলেছিলাম, “তুমি তো টার্গেট হবেই, কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাক, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’’ শোনেনি। বলেছিল, চাকরি ছেড়ে, অসুস্থ বাবাকে ছেড়ে কীভাবে যাবে সে।

গত বছর এই দিনে, ভাইবারে এক বন্ধু আমাকে খবরটা দিয়েছিল। আমি এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলিনি, আবারও স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। চোখে জল আমার এমনিতেই কম আসে, গত বছরের পর যেন তা হারিয়েই গেছে।

সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে মুক্তমনায় লেখালেখি করত অনন্ত; আমাকে দিদি ডাকত– ইউনিভার্সিটিতে পড়ার শুরু থেকেই মনে হয়। দেশে গেলে সিলেট থেকে দেখা করতে চলে আসত ঢাকায়। আমি জোর করে ওর পকেটে বাসের ভাড়াটা গুঁজে দিতাম; বলতাম, ‘‘পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পেলে শোধ করে দিও।’’
‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটা লিখতে লিখতে তিতিবিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, ‘‘পারব না আর ইনডেক্স তৈরি করতে।’’
অনন্ত ঢাকায় এসে, কদিন সেখানে থেকে ইনডেক্সটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল নিজ থেকেই।
কিছু কিছু সম্পর্ক আছে ব্যাখ্যা করা যায় না। জীবনে মাত্র কয়েকবার দেখা হয়েছে অনন্তের সঙ্গে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা সে রকমই ছিল। কী দেব এর নাম? বন্ধু, ভাই, কমরেড? জানি না। দরকারও নেই বোধহয়।
অনেকেই ব্লগে লেখালেখি করে, অনেকেই ফেসবুকে অনেক কিছু লেখে। কিন্তু মৌলিক চিন্তার অধিকারী খুব কম লেখকই হয়ে উঠতে পারে। ওর সঙ্গে আমার চিন্তার পার্থক্য ছিল অনেক কিছুতেই, কিন্তু ওর অমায়িকতা এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতায় মুগ্ধ হতাম সব সময়। এই বয়সেই সে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোট কাগজ ‘যুক্তি’ বের করত। ‘পার্থিব’, ‘ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা’, ‘জীববিবর্তন: সাধারণ পাঠ’সহ বেশ কয়েকটা বইও প্রকাশ করেছিল।

অভিজিৎ রায়ের চোখে অনন্ত বিজয়: অনন্ত বিজয় সম্পর্কে  অভিজিৎ রায় যুক্তির প্রথম সংখ্যায় লিখেছিলেন: “এর মধ্যেও আমাদের প্রিয় মুক্তমনা সদস্য অনন্ত বিজয় এক অভিনব কাজ করে ফেলেছে। ‘মৌলবাদীদের আখড়া’ হিসেবে পরিচিত সিলেট থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুক্তিবাদীদের সংঘটিত করে ‘যুক্তি’ নামের এমন একটি সাহসী পত্রিকা বের করেছে  এবারের (২০০৭)  বইমেলায়,  যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অভূতপূর্বই বলা যায়। এই পত্রিকাটি পড়লেই পাঠকেরা বুঝবেন যে,  বিষবৃক্ষের পাতায় পাতায় কাঁচি চালায়নি,  বরং কুঠারের  কোপ বসিয়েছে  একদম গভীরে,  বিষবৃক্ষের গোঁড়াতেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠা দৈনিকে ছোট্ট বইটি ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়েছে আর সেই সাথে পেয়েছে মহল থেকে হুমকি-ধামকি ও!!! এধরনের হুমকি-ধামকি তো  আমাদের মতো মুক্তমনাদের কাছে নতুন কিছু নয় অনন্ত তা এতদিনে জেনে গেছে।

অনন্ত বিজয়ের লেখালেখি :

অনন্ত বিজয় লেখালেখি শুরু করেছিলেন মূলত মুক্তমনা দিয়ে। ড. অভিজিৎ রায় তাকে মুক্তমনায় লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। মুক্তমনা তখন ওয়েব সাইট ছিল, সেখানে দেশ-বিদেশের অনেক লেখক নানাবিধ বিষয় নিয়ে লেখতেন। এর মধ্যে লেখালেখি শুরু করেন অনন্ত বিজয়ও। মুক্তমনার চিন্তা-চেতনা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
সংক্ষিপ্ত জীবনে অনেক গুণীজনের সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক পর্যন্ত অনেকের বিরাগভাজনও হয়েছেন। ‘যুক্তি’ প্রকাশের পর থেকে ফোনে, চিঠিপত্রে হুমকি-ধামকি কম পাননি। হুমকি এসেছিল হোমিওপ্যাথি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও, যারা কিনা মামলার ভয় দেখাতো।
অনন্ত বিজয়ের যে গুণটি অন্যদের থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছে, তা হলো তার প্রচারবিমুখতা, খ্যাতির প্রতি নির্লিপ্ততা। তিনি বেশ কিছু লেখককে গড়ে তুলেছেন নিজ হাতে। সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-বই তার হাত দিয়ে হয়ে উঠে উঁচু মানের। বাংলা অনলাইন জগতের অনেক খ্যাতিমান লেখক রয়েছেন, যাদের পাঠক-নন্দিত বেশ কিছু লেখার পেছনে অনন্ত বিজয়ের উৎসাহ ও প্রণোদনা কাজ করেছে।
(সূত্র)

অনন্ত বিজয় লিখিত বইসমূহঃ

(১) পার্থিব, (সহলেখক সৈকত চৌধুরী), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১১।
(২) ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, (সম্পাদিত), অবসর, ঢাকা, ২০১১।
(৩) সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব : লিসেঙ্কো অধ্যায়, শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১২।
(৪) জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল: ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ: অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর), চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৪

এই লিংকে গিয়ে সবগুলো বই ও যুক্তির সকল সংখ্যা ডাউনলোড করতে পারবেন।

অনন্ত বিজয় দাশ ও যুক্তিঃ

অনন্ত বিজয় দাশ ছিলেন সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোটকাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদক। মানবতা এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে তিনি মুক্তমনা র‌্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার সম্পাদনায় বের হয় ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল’ এর মুখপত্র ‘যুক্তি’ নামক ছোটকাগজ যা অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। ‘যুক্তি’ ম্যাগাজিনে সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে বিবৃত হয়েছেঃ আমরা চাই চিন্তার চর্চা ও প্রকাশের স্বাধীনতা। ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। চাই এই বেনিয়াবাজির সমাজ পরিবর্তন। আমাদের দর্শনে বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদ। গাহি মোরা সাম্যের গান।

আমরা মনে করি অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর চিরাচরিত প্রথার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যই মানুষের এগিয়ে যাবার পথে প্রধান অন্তরায়। আরো মনে করি, এই প্রশ্নহীন, যুক্তিহীন বিশ্বাস আর সংস্কারাবদ্ধ জীবনাচরণ কাটিয়ে উঠার একমাত্র পথ হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদের প্রসার।

আমরা মনে করিনা অলৌকিক বলে কিছু ছিল বা আছে। জানি এ নিয়ে আছে শুধু অতিকথন, মিথ্যাচার আর কিছু লৌকিক কৌশল। আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলন নয় কোন খেলা কিংবা প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই দায়িত্ব সরকার এবং প্রশাসনের।

আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে-কুসংস্কার, অপবিশ্বাস দূর করে যুক্তিবাদী-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ার আন্দোলন।

অতএব, আপনি যদি সহমত পোষণ করেন আমাদের ভাবনার সাথে, যুক্ত হতে চান আমাদের কর্মে, হতে চান আলোর দিশারী, তবে নির্দ্ধিধায় যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে। যুক্ত হোন আমাদের আন্দোলনে। সূত্র: ১

যুক্তি প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে অনন্ত বিজয় লিখেছিলেন:
আন্ধারে ভরা রাতি,  আলেয়া জ্বালায় বাতি।
বল না,  বল না,  কে যাবি আনতে ভোর—।।

মানুষ তার এই আপন মাতৃভূমিতে পদচারনার সময় থেকেই খুঁজে ফিরছে নিজের শিকড়। এই শিকড় খুঁজতে গিয়ে মানুষ বারে বারে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, উত্তর খুঁজেছে আপন মনে।  কখনো পেয়েছে কিছু কিছু উত্তর   প্রত্যক্ষ প্রমাণ- ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণের  মাধ্যমে আর কখনও বা হাতড়ে হাতড়ে চলছে, এখনও।  কেউবা উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে কিংবা স্বার্থের লোভে তৈরি করেছে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা,  আর নিয়মের নামে শোষণের কৌশল।   মনীষী  মার্কস বর্ণিত  আফিমে আসক্ত,  বিশ্লেষণী জ্ঞানচর্চায় উদাসীন শ্রেণীবিভক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তা মেনে নিয়েছে।  গুটিকয় সুযোগসন্ধানী সওদাগর সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাঁধে চেপে বসে আছে যুগ যুগ ধরে। ভৌতিকোপন্যাসের চরিত্র  ড্রাকুলা’র মত  রক্ত খেয়ে নিজের উদরপূর্তি করে চলছে ওরা!  কিন্তু আমরা দেখেছি, ইতিহাস সবসময়ই এই ড্রাকুলাদের বিপরীতে অবস্থান করে।  ড্রাকুলাদের হাত থেকে আপন ধরনী রক্ষার জন্য সবসময়ই কালোত্তীর্ণরা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন।  এই প্রথাবিরোধী বিরুদ্ধস্রোতের যাত্রী তালিকা কিন্তু নেহায়েতই কম নয়।  এই তালিকায় যেমন রয়েছেন  খ্রিস্টপূর্বের অনেক মনীষী তেমনি  বর্তমান তালেব অনেক জ্ঞানী-গুণী;  যেমন গৌতম বুদ্ধ,  চার্বাক,  বৃহস্পতি,  মহাবীর,  অজিত কেশকম্বল,  মক্ষলি গোশাল, কপিল, হেরাক্লিটাস, এনাক্সিগোরাস,  পিথাগোরাস ডেমোক্রিটাস,  সক্রেটিস, হাইপেশিয়া,  আল্লাফ আবুল হুজৈল আল আল্লাফ, নজ্জাম, জাহিজ, আবু হাসিব,  ওমর খৈয়াম,  ইবনে সিনা,  কোপার্নিকাস, ব্রুনো,  গ্যালিলিও,  নিউটন, ডারউইন, কার্ল মাক্স, মেরী ওলস্টোনক্র্যাফ্ট, সিমোন দ্য বোভোয়ার,  আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ,  কাজী মোতাহার হোসেন,  আব্দুল কাদির,  আবুল ফজল, আরজ আলী মাতুব্বর,  আহমদ শরীফ,  হুমায়ুন আজাদ,   তসলিমা নাসরিন প্রমুখ।  এভাবে ক্রমেই তালিকা দীর্ঘায়িত করা যায়। আমরা ঐতিহ্যগতভাবে  তাঁদেরই উত্তরসূরী।  বুদ্ধির মুক্তি এবং মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনে,  বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ বিনির্মাণে আমরা প্রেরণা পাই এই দৃঢ়চিত্ত মুক্তচিন্তার  মনীষীদের কর্মস্পৃহা থেকে।  আমাদের চেতনায় মুক্তমন, চর্চা করি বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদিতার।

মৃত্যুর এক দিন পূর্বে তিনি লিখেছিলেনঃ

অভিজিৎ রায়কে যখন খুন করা হয়, অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছিল। খুনিরা নিশ্চিন্তে খুন করে চলে গেল। পরে পুলিশ বলে তাদের নাকি দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। বড় জানতে ইচ্ছে করে তাদের দায়িত্বটা আসলে কী!

ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে যখন খুন করে খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পুলিশের কপাল খারাপ, তারা বলতে পারলো না— এক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কারণ, লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানবিক মানুষ খুনিদের ধরে ফেলেন। খুনিদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেন।

বর্ষবরণে হাজার হাজার মানুষের সামনে যখন নারীদের একে একে লাঞ্ছনা করা হচ্ছিল পুলিশ তখন নিধিরাম সর্দার। তারা তখন মূলত দায়িত্ব অবহেলা না করতে সচেষ্ট ছিল। যৌনসন্ত্রাসী গুলোরে পালিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিতেই তারা ব্যস্ত ছিল। তাইতো লিটননন্দীসহ আরো কয়েকজন মিলে কয়েকটা যৌনসন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন, পুলিশ কিছুসময় পরে এদের ছেড়ে দেয়। মিডিয়ায় এবিষয়ে যখন হৈচৈ, পুলিশ তখন সাফ অস্বীকার করে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি!! সিসিটিভির ফুটেজে যখন অপরাধীদের দেখা গেল, তখন তারা চুপ। পুরানো গিটার আবার বাজালো। কেউ তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। সোশাল মিডিয়ায় এতোদিনে কয়েকটা যৌনসন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করার পরও পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা নেই।
ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি বামসংগঠন ডিএমপি পুলিশের কাছে প্রতিবাদ লিপি দিতে গেল, অপরাধীদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, নিদেনপক্ষে কোনো উদ্যোগ কেন নেই…. পুলিশ তখন ঝাপিয়ে পড়ে। লাথি দিয়ে, বন্দুকের বাঁট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আহত করে!! এক্ষেত্রেও আমি শুনতে পাই… আসলেই পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা নেই! কিন্তু বড়ই জানতে ইচ্ছে করে …. পুলিশের দায়িত্বটা আসলে কী!!

অনন্ত বিজয় দাশের উক্তি সংগ্রহ :

১। ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলার এই বিভীষিকাময় ইতিহাস আর কতকাল গোপন করে রাখা হবে

২। জ্ঞানবুদ্ধি হবার আগেই একজন শিশুর উপর ধর্মীয় পরিচয় চাপিয়ে দেয়া এবং তাকে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করা ‘নির্যাতনের’ শামিল।

৩। বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে এই বোধটুকু অর্জন করা সবার জন্যই জরুরি, সবাই আপনার-আমার মতো হবে না, সবাই যার যার মতো হবে। তবে এই পৃথিবীটা সবার। কোনো একক ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা মতাদর্শের নয়।

৪। জীবন যদি আমার হয়ে থাকে তবে মৃত্যুটাও আমার হতে হবে। আমার মতো করে জীবনকে সাজাতে পারি তবে আমার মতো করে মৃত্যুকেও বেছে নিতে পারি। বেঁচে থাকার অধিকার যদি মৌলিক মানবাধিকার হয় তবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অধিকারও মানবাধিকার হতে হবে। কারণ আমার দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ আমারই থাকতে হবে।

৫।  সত্য কথা বলা আর প্রতিবাদ করা দুটোই এখন সমার্থক।

৬। জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ আর জোরপূর্বক সঙ্গম (ধর্ষণ) দুটোই সমতুল্য এবং একই ধরনের অপরাধ। অথচ ধর্ষণের বিচার আছে, শাস্তি আছে, কিন্তু আমাদের এ দেশে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে আইন নেই, বিচার চাওয়ার সুযোগ নেই।

৭।একসময় ধর্ম ছিল রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার আর কায়েমের হাতিয়ার, শাসন-শোষণ অব্যহত রাখার পন্থা। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় সেটা ততটা কার্যকর না হলেও ধর্ম এখন বাণিজ্যের উপকরণ মাত্র।

৮। এই দুনিয়ার যত আয়োজন, যত প্রয়োজন সবই আজ দানবের জন্য। দানবের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। মানুষের অধিকার এখানে ভূলুণ্ঠিত।

৯। কল্পিত ঈশ্বরের মূর্তি বানিয়ে পূজা বা আরাধনা করে উৎসব বা বিনোদন হতে পারে, কিন্তু বিদ্যা অর্জন বা জ্ঞান অর্জন কোনোটাই হয়ই না।

১০। ওইখানে আমিও আছি/যেখানে সূর্যোদয়, প্রিয় স্বদেশ পাল্টে দেব/তুমি আর আমি বোধ হয়…

১১। পাথরের আঘাতে শয়তান আহতও হয় না, মৃত্যুও ঘটে না। তবে কেন এই পণ্ডশ্রম?

অনন্ত বিজয় হত্যা  এবং রাষ্ট্রের দায়:

অনন্ত বিজয় হত্যার দায় পুরো রাষ্ট্রের। একাত্তরে যে বাংলাদেশের জন্য এদেশের মানুষ রক্ত দিয়েছিলেন সে বাংলাদেশ হবার কথা ছিলো অনন্ত বিজয়দেরই, ধর্মান্ধ খুনীদের নয়। সে রাষ্ট্র হবে মানবিক রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে থাকবে সকল মানুষের সমান অধিকার।  সবাই  মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে। এদেশটা আবার একাত্তরের মতো বধ্যভূমিতে পরিণত হবে না। কিন্তু যা হবার কথা ছিল, এখন দেখছি তার উল্টোটা । বার বার একাত্তরের সেই চেতনাকে হারিয়ে ধর্মান্ধদের কাছে নত হয়ে রাষ্ট্রকে একটা বধ্যভূমিতে পরিণত করেছি।  এদেশে অনন্তরা  যুক্তি প্রচারের জন্য খুন হয়, লেখালেখির জন্য খুন হয়, সত্য বলার জন্য খুন হয়।  লেখালেখির জন্য অসংখ্য মুক্তচিন্তককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পালিয়ে জীবন বাচাতে হয়। বিপদগ্রস্থ ব্লগারদের পাশে সব সময় রাষ্ট্রের থাকার কথা ছিল, কিন্তু রাষ্ট্র কখনোই তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা,  অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলয় নীল,  ফয়সাল আহমেদ দীপন, নাজিম উদ্দিন সামাদ, প্রফেসর রেজাউল করিম, জুলহাস মান্নান, মাহবুব তনয়- একে একে ঝরে গেছে এক ডজনেরও বেশি মুক্তচিন্তার মানুষ। এ যেন একাত্তরের মত দেশকে মেধাশূন্য করার পায়তারা! সেই একই প্যাটার্নে একই কায়দায়, বেছে বেছে দেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলোকে হত্যা। আর এই হত্যাকান্ডগুলো যখন একের পর এক সংঘটিত হচ্ছিল, সরকার, মদিনা সনদের নামে হেফাজতি দানবের কাছে আত্মসমর্পণ করে, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করার জন্য, খুনগুলোকে জাস্টিফাই করেছিলো। সরকারপ্রধান বলেছিলেন, লেখালেখির জন্য কেউ খুন হলে, তার দায় তিনি নিতে পারবেন না। কী জঘন্য! কী নিষ্ঠুরতা! এ যেন খুন হওয়া মানুষগুলোকে আবার খুন করা! অভিজিৎ রায় খুন হয় তিনি প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে পারেন না, অনন্ত খুন হয় তিনি মুখে কুলুপ এটে বসে থাকেন! এর বদলে  প্রতিটি খুনের পরে তিনি বারবার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়েছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম নিরাপরাধ কোন মানুষের হত্যা সমর্থন করে না। কিন্তু আইরনি হচ্ছে, প্রতিটি নির্মম হত্যাকান্ড উম্মেচন করে দিয়েছে ইসলামের নগ্নরূপ, ইসলামের সহিংস রূপ। ইসলামী বর্বরতা।  ইসলাম ধর্ম ভীতিকর ধর্ম। একই সাথে রাষ্ট্রের নিলজ্জ্ব আচরণ।

মামলার অগ্রগতি:

আজ বঙ্গবন্ধু -১ নামক স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়েছে!

উপসংহার :

আজ অনন্ত আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর কর্মের মাঝে, লেখনির মাঝে তিনি অমর হয়ে আছেন। অনন্ত বিজয়ের অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করার দায়িত্ব আজ আমাদের সবার ওপরে। মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতার জন্য তাঁর দেয়া রক্ত বৃথা যাবে না। অনন্তরা হারবে না।  নিকট ভবিষ্যতে কোটি তরুণের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে  অনন্ত বিজয় দাশদের রক্ত বৃথা যায় নি। ওরা বলবে আমরাই অনন্ত। যুক্তি মোদের মুক্তির পথ। অনন্তরা যে আলোর মশাল  জ্বেলে গেছে, সে আলোতে মোরা আলোকিত।  আমরা বরং দ্বিমত হয়েছি, আস্থা রেখেছি দ্বিতীয় বিদ্যায়।  জ্ঞানই আলো।  জ্ঞানের শক্তিতে মোরা উদ্ভাসিত।  ওরা বলবে,রাজীব মোদের গর্ব, অভিজিৎ মোদের গর্ব,ওয়াশিকুর আমাদের গর্ব,  নিলয় মোদের গর্ব,  অনন্ত মোদের গর্ব। তাদের দেখানো পথেই আমরা আলোকিত ।  তাদের দেখানো পথে হেটেই আমরা মুক্তিকে ছিনিয়ে এনেছি।  ধর্মীয় কুসংস্কারের শিকল ছিড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি । মুক্তচিন্তার আলোয় আলোকিত হয়ে, আমরা আজ সত্যিকার মানুষ।  সেদিনের প্রতীক্ষায়—

…………………

[প্রবন্ধটি লিখেছেন মহিউদ্দীন শরীফ। প্রবন্ধটি সাপ্তাহিক পাঠচক্র ‘খাপছাড়া আড্ডা’য় পাঠ করা হয়েছিল ১২.০৫.১৮ তারিখে।]।

Leave a Comment