অনুভূতিসমগ্র

যাদের সাথে আমার নিত্যদিনের ওঠা-বসা তাদের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। তার সাথে প্রতিদিন বিকেলে কয়েকঘন্টা কাটাতে আমার খুবই ভাল লাগে। সন্ধ্যার পরে ছাদে বসে চা খেতে খেতে সে যখন তার ঘুষ গ্রহণ বিষয়ক গল্পগুলো খুব অবলীলায় বলে, তখন অর্থলোভে আমার চোখ দুটো চকচক করে জ্বলতে থাকে। তার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ বিষয়ক বেশ কিছু টিপস নিয়েছি। সেগুলো ফলদায়ক হবে বলেই মনে হচ্ছে। গতরাতে স্বপ্ন দেখেছি সামান্য ত্রুটির জন্য আমি যার ফাইল আটকে রেখেছি, সে আমার কাছে একটি খাকি খাম হস্তান্তর করছে এবং আমি মাথা নিচু করে তা গ্রহণ করছি।

আমার খুব কাছের এক ব্যক্তি স্থানীয় সাংসদের ভাই। সাংসদের অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টাও তিনি। ক’দিন আগে যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাতে প্রায় দুইশত নিয়োগপ্রার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সমানাধিকার প্রয়োগ করে তিন লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন। আমি তার এই কাজকে প্রশংসা না করে পারিনি। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে আমাদের দেশেও সমানাধিকার প্রয়োগ করা যায়। যদিও সবার চাকুরী হয়নি তবুও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন তার দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সবার চাকুরী দিয়ে দিবেন বলে। তার টাকায় আমি কয়েকদিন চাইনিজ-থাই ফুড খেয়ে ধন্য হয়েছি।

আমার খুব কাছের এক বন্ধু ধর্ষণকারী। তার জীবনে সে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ করেছে। আমি তার ধর্ষণের বর্ণনা ও কৌশলে মুগ্ধ হয়েছি। তার বর্ণনা শুনে শুনে আন্ডারওয়্যারের মধ্যে আমার শিশ্নটি ভিজে ওঠে। বন্ধুটির সাথে দেখা হলেই আমি তার ধর্ষণের গল্প শুনতে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি আমিও একদিন তার মত ধর্ষক হয়ে উঠব। বন্ধুটির সাথে আমি মাঝে মাঝে একত্রে রাত কাটাই। আমার দু’উরুর মাঝখানে বন্ধুটির উষ্ণ শিশ্নটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে দু’একদিন। আমি সরে যাই। পরদিন বন্ধুটিকে বললে সে জানায় যে রাতে ঘুমের ঘোরে সে কী করে তা সে বলতে পারে না। ভাবছি এরপর যেদিন আমি তার সাথে ঘুমাব ওর আগেই আমি বন্ধুর উরুতে সিধিয়ে দেব আমার ……।

ক’দিন আগে না জেনে এক রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়েছিলাম। সেদিন নিজের হাতটাকে খুব ঘৃণ্য মনে হয়েছিল। রাজাকারটি ইদানিং প্রায়ই ফোন দেয়। রাজাকারটিকে আমি এখন আর ঘৃণা করি না। বরং এক কোটিপতির ফোনে নিজেকে খুব দামী মানুষ মনে হয়। তার সাথে কথা বলার সময়ে আমি বিগলিত হয়ে যাই। ২-৩ মিনিট কথার মাঝে তাকে অন্ততঃ ৫-৭ বার ধন্যবাদ দিই। মাঝে মাঝে স্যার বলতেও ইচ্ছে জাগে।

গতকাল সন্ধ্যায় এশার নামাজ শেষে আমরা যখন প্রকৌশলী বন্ধুটির ঘুষ গ্রহণ বিষয়ক কৌশল শেখানোয় মজেছিলাম, তখন আমাদের আড্ডার মাঝে এক শুয়োরের বাচ্চা এসে হাজির হয়েছিল। শুনেছি শুয়োরের বাচ্চাটা নাকি নাস্তিক। মানবতা না কোন বালছাল নিয়ে কথা বলে আর ইহুদী-নাসারাদের বই পড়ে। নামাজ-রোজা তো করেই না, আবার আমার বন্ধুদের নৈতিকতা নিয়েও নাকি প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছে তাকে। কুত্তার বাচ্চা কাফিরটাকে দেখেই আমার ধর্মানুভূতি চাগাড় দিয়ে ওঠে। আমি ঠাস করে একটা থাপ্পর মারি তার গালে।

হাজার পীর-আউলিয়ার এই বাংলায় এই শুয়োরের বাচ্চা নাস্তিকের বিচরণে আমার খুবই কষ্ট হয়, আমার অনুভূতিরা আহত হয়।

One Response

  1. yousuf66

Leave a Comment