ডিজিটালাইজেশনঃ দূর্নীতি দূরীকরণের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান

ফেসবুকে একবার একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম আমাদের সামগ্রিক নষ্ট-হয়ে-যাওয়া-রূপ নিয়ে। কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন যে এর থেকে মুক্তির কোন উপায় আছে কিনা। আমি মনে করি আছে। দেশের কয়েকটা ক্ষেত্রকে কমপ্লিট ডিজিটাইলাইজেশন করতে পারলেই দূর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় বলে আমি মনে করি।

প্রথম যে বিষয়টি আমাদের প্রয়োজন হবে তা হলো একটি ডিটেইল পপুলেশন ডাটাবেইজ, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তির স্থায়ী, অস্থায়ী, ব্যবসায়িক এবং প্রফেশনাল ঠিকানা থাকবে। ব্যক্তিটির তথ্যের সাথে তার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতার আইডির লিংকও থাকবে। যেমন, একজন ব্যক্তি বিয়ে করলে তার স্পাউস-এর যে আইডিটি আছে তার লিংক করে দিতে হবে, আবার সন্তান হলে সন্তানের জন্ম নিবন্ধনেই ডাটাবেইজে একটি আইডি তৈরি হবে, যা তার বাবা-মা দুজনের আইডিতে লিংক করে দিতে হবে। (লিংক বিষয়টি ব্যক্তিসাতন্ত্রতার পরিপন্থী হয় বলে অনেকে এর সাথে দ্বিমত করতে পারেন হয়তো। কিন্তু আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এ ব্যবস্থার কোন বিকল্প দেখছি না। পরবর্তীতে মানুষের মাঝে শুদ্ধতা এলে লিংকের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।)

দ্বিতীয় যে বিষয়টি প্রয়োজন হবে তা হলো ব্যাংকগুলোকে ডাটাবেইজে একটা লিমিটেড এ্যাকসেস দেয়া, যাতে একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে যা যা তথ্য লাগবে তা ঐ আইডিটির মাধ্যমেই নিতে পারে। কোন হিসাব খুলতে হলে আইডি বাধ্যতামূলক করা হবে এবং ব্যাংকগুলোও সেন্ট্রাল ডাটাবেইজের তথ্য ছাড়া কোন হিসাব খুলতে পারবে না। দেশের যাবতীয় কাজের জন্যই আইডিটি বাধ্যতামূলক করতে হবে, তবে ব্যাংকগুলোর জন্য অন্য কোন বিকল্প রাখা যাবে না। হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এই বাধ্যতামূলক আইডি ব্যবহারের ফলে একটা লিংক তৈরি হবে যাতে ব্যাংকের হিসাব নম্বরটি সেন্ট্রাল ডাটাবেইজে সংযুক্ত হয়ে যাবে। সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ থেকে ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাবে না, তবে হিসাব নম্বরটি সংযুক্ত হয়ে গেলে দুর্নীতির সন্দেহে কোন ব্যক্তির হিসাবের তদন্তের প্রয়োজন হলে সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ থেকে তদন্তকারী সংস্থা সহজেই তা পেয়ে যাবে এবং সেই সেই ব্যাংককে চিঠি দিয়ে তলব করতে পারবে। যেহেতু ব্যক্তির সাথে তার নিকট আত্মীয়দের আইডিগুলোও সংযুক্ত থাকবে তাই তাদের হিসাব তদন্তও খুব সহজতর হবে।

আরো কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করতে হবে। ব্যাংকগুলোতে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হবে। বিশেষ করে অনলাইনে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ক্যাশ লেনদেনের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। বিদেশে যেমন টাকা জমা দিতে গেলে তার উৎস দেখাতে হয় তা আমাদের দেশে এতো তাড়াতাড়ি প্রযোজ্য হবে না। তবে তার চেয়েও ভাল হয় যদি নগদ অনলাইন করতে গেলেও আইডি বাধ্যতামূলক করা হয় এবং ব্যাংকিং সফটওয়্যারে অনলাইন ক্যাশের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে  আইডির এন্ট্রি দিতে হবে। বিকাশ বা এ জাতীয় যে কোন লেনদেনের ক্ষেত্রেও মোবাইল সফটওয়্যারগুলোতেও আইডির বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সাথে প্রতিটি মোবাইল সিম কেনার জন্যও আইডি বাধ্যতামূলকভাবে এন্ট্রির ব্যবস্থা করতে হবে। সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ থেকে রিলিজ না করা পর্যন্ত মোবাইল সিম একটিভ হবে না এমন প্রভিশন রাখতে হবে। ফলে প্রতিটি ব্যক্তির কতগুলো সিম আছে এবং প্রয়োজনে সে এখন সিমটি কোথায় বসে ব্যবহার করছে তদন্তকারী সংস্থা সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে। বিদেশ থেকে কেউ দেশে প্রবেশ করলে তাদের জন্যও তার পাসপোর্ট নম্বর ও তার নিজ দেশের আইডি এন্ট্রির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সেন্ট্রাল পপুলেশন ডাটাবেইজের সাথে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের লিংক তৈরি করা যেতে পারে। দেশের উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত সকল প্রকৌশলী কার্যালয়গুলো এর মধ্যে অন্যতম। তবে আপাতত ব্যাংক এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর লিংক খুব বেশি জরুরী। একটা ডাটাবেইজ করতে পারলে তারপর সব প্রতিষ্ঠানের সাথেই সংযোগ স্থাপন করা তেমন কোন কঠিন বিষয় হবে না।

মোট কথা, আমাদের দরকার কেবল একটি সেন্ট্রাল পপুলেশন ডাটাবেইজ এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে তার সংযোগ সাধন। এই কাজটি করতে পারলেই আমাদের দেশের দূর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় বলে মনে করি।

Leave a Comment