বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বেতনের ওপর ট্যাক্স আরোপ অপরিহার্য কি?

বাংলাদেশ সরকার বেসরকারী শিক্ষার বেতনের ওপর ৭.৫% ট্যাক্স (ভ্যাট) ধার্য করেছে। Value Added Tax (VAT)-এর নিয়মানুযায়ী এই অতিরিক্ত ব্যয়টা মূল ব্যয় বহনকারীকেই পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং এই অতিরিক্ত ৭.৫% টাকা ছাত্রদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।

সরকার পরিচালনা তথা দেশের উন্নয়নের জন্য ট্যাক্স আবশ্যক এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু সে ট্যাক্সটা কারা দেয়?

একটা দেশের ভিক্ষুক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ধনীটি পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ট্যাক্স প্রদান করে থাকে। দেশের প্রায় সকল পণ্যের ওপরই ভ্যাট আছে, তাই আমরা যখন নিজের বা পরিবারের খাবারের জন্য কোন খাদ্য বা পানীয় কিনি, বা কোন পোষাক, কসমেটিকস, ফ্যাশন সামগ্রী, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদি কিনি, প্রতিটির সাথেই আমরা ট্যাক্স প্রদান করে থাকি। এই ট্যাক্সগুলো দৃশ্যমান না বলে আমরা অনুধাবন করতে পারি না।

এর বাইরে আছে আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স। বাংলাদেশের কর আইনে বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমান আয়ের ওপরে ওঠলেই কেবল আয়কর দিতে হয়। বাংলাদেশে আয়কর একটা বিরাট ফাঁকির জায়গা। চাকুরিজীবি ছাড়া আর কেউ ঠিকমতো আয়কর দেয় না। ঠিকাদাররা নির্ধারিত ট্যাক্স দিতে বাধ্য হয়, কারণ, ট্যাক্সের টাকাটা উৎসেই কেটে রাখা হয় তাই। বাকি ব্যবসায়ীরা নাম-মাত্র ট্যাক্স দিয়ে, ইনকাম ট্যাক্স উকিল এবং ট্যাক্স কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিয়ে রাখে।

ব্যাংকে চাকুরী করার সুবাদে দেখেছি, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা এই নাম-মাত্র ট্যাক্সই পে করে থাকে। কেউ কেউ আদৌ কোন ট্যাক্স পে করে না। ট্যাক্স না-পে-করাদের হার গোপালগঞ্জেই আবার বেশি পেয়েছি। কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারির নিজ মালিকানা দোকান আছে, বাড়ি আছে, কিন্তু কোন ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট নেই, কোন কালে ট্যাক্স পে-ও করেন নি, এমনটা শুনে কেবল হা করে তাকিয়েই থাকতে পারি আমি।

আপনাদের মনে আছে কিনা কে জানে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলো, তখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান টাকা সাদা করেছিলেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যদি ঠিকমতো ট্যাক্স আদায় করা যেতো, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের বাজেটটা আরো বড় হতে পারতো এবং বিদেশের মুখাপেক্ষী হয়েও থাকতে হতো না।

পৃথিবীর অনেক দেশেই (আন্তজার্তিক ছাত্রদের জন্যও) শিক্ষা পুরোপুরি টিউশন ফি মুক্ত। বাংলাদেশে তা কখনোই সম্ভব নয় জানি, তাই বলে কি ট্যাক্স ফ্রিও রাখা যাবে না? বিদেশে ছাত্ররা ছাত্রজীবনে নিজেরা চাকুরী করে অর্থ উপার্জন করতে পারে, তা না হলে সরকার কর্তৃক সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হয়, যা কর্মজীবনে দীর্ঘমেয়াদের শোধের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে এরকম কোন সুযোগসুবিধাই নেই। এখন অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে সরকারের যা আয় হবে, তার চেয়ে ছাত্রদের ক্ষতিটা বেশি হবে, এটা কি মাননীয় অর্থমন্ত্রী বুঝবেন?

এমনিতেই সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় অযোগ্য ভিসি ও শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এবং শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতির চিপায় পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজানো হয়ে গেছে। অন্যদিকে সবকিছুর ইসলামিকীকরণের ফলে শিক্ষিত-জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে বের না হয়ে, শিক্ষা শেষে ভার্সিটি থেকে পাশ করাদের বিরাট একটা অংশ বের হচ্ছে জঙ্গি হিসেবে। এমতাবস্থায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করে শিক্ষা-ব্যবস্থার আরো ক্ষতি করবেন না মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। তরুণদের মাঝে আপনার সেই উচ্চ আসনও আর নেই, এটা কি শিক্ষামন্ত্রী টের পান? যদি পান, তাহলে এ ধরণের উদ্ভট কানুন থেকে বেরিয়ে আসুন।

আর প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, পারলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঠিকমতো ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা করেন এবং আপনার ঘুষখোর শুল্ক কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়া কমান। আপনি জানেন কি, বিসিএসে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পরেই দ্বিতীয় পছন্দ থাকে ট্যাক্স? কেন তা জানেন কি? ওখানে ঘুষ খাওয়ার অবারিত সুযোগ তাই। আপনার ঘুষখোর শুল্ক কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়া কমান, দেখবেন ছাত্রদের কাছ থেকে যে-টাকা কর আদায় করতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা সরকারের ইনকাম খাতে যোগ হয়েছে। আপনাদের সবার শুভবুদ্ধি উদয় হোক।

Leave a Comment