খাপছাড়া আড্ডাগল্প

বিজ্ঞান কল্পকাহিনিঃ ইনোভ্যাশন

লিখেছেনঃ তাহসিব হাসান

তাহসিব হাসান

১৩ই মে ২০৩৩। পৃথিবীজুড়ে আলোচনা – মানুষের হাতে চলে এসেছে অসীম ক্ষমতা; বিজ্ঞানী ট্রিনা এবার নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন।

ট্রিনার মতে বিশ্বের সবচেয়ে সফল মেশিনের আবিষ্কারক তিনি, যার মাধ্যমে মাইক্রো ইয়ামো রশ্মি ও সুপার কম্পিউটার দিয়ে যে-কোনো প্রাণীর জিন পরিবর্তন করে ফেলা যাবে। খুব দ্রুত একটা প্রাণীর দেহের ডিএনএ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো প্রাণীর ডিএনএ পরিবর্তন করতে লাগবে মাত্র দুই থেকে তিন দিন। এমনকি সম্পূর্ণ ডিএনএ ডাটা সংগ্রহ করে তারপর নতুন করে একই ধরনের প্রাণী বানানো পর্যন্ত সম্ভব হবে! অদ্যাবধি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর চেয়ে সফল কোন আবিষ্কার নেই। মানুষের হাত-পা কেটে গেলে তা ফেরত আনা সম্ভব এখন।

তবে এ নিয়ে বিতর্কও কম নেই। মানুষ কি অমরত্ব পেতে যাচ্ছে! যত না আলোচনা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে সমালোচনা। খোদ বিজ্ঞানী নিনাদ এর কঠোর সমালোচনা শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন এ নিয়ে। ও হ্যাঁ, বিজ্ঞানী নিনাদ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি তিন বছর আগে ইয়ামো রশ্মি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, “ডিএনএ পরিবর্তনের মেশিন মানুষের ক্ষতিই বয়ে আনবে। আমি ইয়ামো রশ্মি আবিষ্কার করেছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং অক্ষতিকর রশ্মি হিসেবে। কিন্তু আমার আবিষ্কৃত রশ্মিই ক্ষতিকর হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। এতটা ক্ষমতা মানুষের থাকা উচিত নয়।”

নিনাদের এই বক্তব্যের পরে সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।    

***

১লা এপ্রিল। পৃথিবীর জন্য বিশেষ দিন। আজ বিজ্ঞানী ট্রিনা বিশ্ববাসীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সুপার পাওয়ার মেশিন, যার নাম তিনি দিয়েছেন ইনোভ্যাশন।

অনুষ্ঠান শেষে নিজের রুমে এসে কফি হাতে বসতেই তাঁর রুমে হাজির সাংবাদিক মারজুরি জু। রুমের মাঝখানে ছোট দুটি সোফা ও টি-টেবিল। মারজুরিকে বসতে দিয়ে আরেক কাপ কফি বানিয়ে আনলেন ট্রিনা। তাঁকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আগে থেকেই সময় ঠিক করা ছিল বলে সাংবাদিককে এড়িয়ে যাওয়া গেল না। কফির কাপ চুমুক দিয়েই বললেন, কী জানতে চান বলুন এবার।
সাংবাদিক:  কেমন আছেন?
ট্রিনা: এই মুহূর্তে ভালো আছি, তবে বেশ ক্লান্ত।
সাংবাদিক: আপনার আবিষ্কার ‘ইনোভ্যাশন’ সম্পর্কে জানতে চাই…
ট্রিনা: হ্যাঁ, অবশ্যই।
সাংবাদিক: কী কী করা যাবে এই ‘ইনোভ্যাশন’ দিয়ে!
ট্রিনা: একটা প্রাণীর পরিচয় হল তার জিন। আর জিন পরিবর্তন করেই প্রাণীর পরিচয় পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। ইনোভ্যাশন হলো প্রাণীর জিন পরিবর্তন করার মেশিন।
সাংবাদিক: কেন আপনি এটাকে সুপার ন্যচারাল মেশিন বলছেন?
ট্রিনা: মনে করুন কারো মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতার জিন রয়েছে। ইনোভ্যাশন দিয়ে সেগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় সব ধরনের জিন কোড-এর তথ্য রয়েছে আমাদের কাছে। তাই কাজটা খুবই সহজ।
সাংবাদিক: আপনি কি মনে করেন এটা দিয়ে অমরত্ব আনা সম্ভব?
ট্রিনা: সেটাও সম্ভব। বার্ধক্যের জন্য দায়ী জিনগুলো পরিবর্তন করে ফেলা যাবে এই মেশিন দিয়ে।
 সাংবাদিক: তাহলে পৃথিবীর সব মানুষ অমরত্ব লাভ করতে চাইবে না কি? ভারসাম্য হারাবে না কি এতে?
ট্রিনা: আমার তা মনে হয় না। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছা কোনো মানুষের হবে না; একটা সময় ক্লান্তি চলে আসবে। বর্তমান পৃথিবীতে বয়স্ক মানুষের সুইসাইডের সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
সাংবাদিক: তাহলে আপনি মনে করছেন অমরত্ব কেউ চাইবে না?
ট্রিনা: দেখুন, কিছু মানুষের হয়তো পৃথিবীতে বেশি দিন বেঁচে থাকা প্রয়োজন। তাদের জন্য ডিএনএর পরিবর্তন এনে বয়স কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে অমরত্ব বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ হবে না।
সাংবাদিক: আপনি কীভাবে বলতে পারেন যে কোন মানুষটি পৃথিবীর জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ?
ট্রিনা: এটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমার নয়। কোনো ব্যক্তি যদি তার কাজটা শেষ করার মতো সময় না পায়, তাহলেই হয়তো সে তার বার্ধক্য কমিয়ে নিতে পারে। সময় হলেই সব জানা যাবে।
সাংবাদিক: আপনার এই আবিষ্কারের পিছনে বিজ্ঞানী নিনাদের অবদান কতখানি?
ট্রিনা: নিনাদের ইয়ামো রশ্মির ওপরই দাঁড়িয়ে আমার এই মেশিন। বিজ্ঞান চলমান; প্রতিটা কাজের পিছনে তার পূর্বসূরি বিজ্ঞানীদের অনেক অবদান থাকে। সুতরাং আমার এই আবিষ্কার আমার একার, এই দাবি করা যাচ্ছে না।
সাংবাদিক: কিন্তু বিজ্ঞানী নিনাদ আপনার এই আবিষ্কারকে নেতিবাচক মনে করছেন।
ট্রিনা: নিনাদের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান রয়েছে। আশা করি উনিও এক সময় আমার সাথে একমত হবেন। কোনো শক্তিশালী ভাইরাসের আক্রমণ হলে এই ইনোভ্যাশন যখন মানুষের শরীরের  জিন পরিবর্তন করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার সক্ষমতা তৈরি করবে, তখন এর প্রকৃত গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারব। আমরা দেখছি অতীতে অনেক ভাইরাস সংক্রান্ত মহামারীতে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছে। ইনোভ্যাশন থাকলে সেটা সম্ভবত হত না। ভবিষ্যতে হয়তো আর ভ্যাক্সিনেরই প্রয়োজন পড়বে না।
সাংবাদিক: আপনি কি মনে করেন ইনোভ্যাশন আমাদের ইকোসিস্টেমে প্রভাব ফেলবে না?
ট্রিনা: প্রাণিজগতের বিবর্তন থেমে নেই। কৃত্রিমভাবে হলেই সেটা কেন খারাপ হবে? ভালো দিকে হলে সেটা তো ভালো হবার কথা।
সাংবাদিক: ইনোভ্যাশন দিয়ে মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর দেহের জিন পরিবর্তন করে বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিবর্তন করা সম্ভব কি? এরকম সম্ভাবনা কতটা?
ট্রিনা: প্রাণীর জিন পরিবর্তন করে তাকে বেশি বুদ্ধিমান প্রাণীতে রূপান্তর সম্ভব। তবে এই কাজ কেউ করবে না। আর সব প্রাণীই কম বেশি বুদ্ধিমান। মানুষকে একমাত্র বুদ্ধিমান ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রতিটা জিনিসের ভাল মন্দ দুটো দিক থাকে, শুধু ভালো দিকটার ব্যবহার করতে হয়।

সেই মুহূর্তে ট্রিনা কল্পনাও করতে পারেননি কত বড় বিপদ তাঁর সামনে। সংবাদ সম্মেলনের দুদিন পরে, ৩রা এপ্রিল, ল্যাব থেকে চুরি হয়ে যায় ইনোভ্যাশন; সিসিক্যামেরা ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ট্রিনার সহকর্মী তুহান ইনোভ্যাশন নিয়ে পালাচ্ছে।

তুহান বা ইনোভ্যাশন কোনোটারই সন্ধান পাওয়া যায়নি আর। নতুন ইনোভ্যাশন বানানো কোনো বিষয় না, কিন্তু যেটা চুরি গিয়েছে, সেটা যদি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়! বিশ্ব মিডিয়া আবারও তোলপাড়। কী দেখতে যাচ্ছে পৃথিবী? ইন্টারপোল সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইনোভ্যাশন অনুসন্ধানে নেমেছে। তবুও সন্ধান মিলছে না কিছুতেই।

***

প্রায় এক বছর পরের কথা। ইনোভ্যাশন চুরির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছে মানুষে। এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের এক দ্বীপে গড়ে উঠেছে বিশাল এক গবেষণাগার।

বিষুব-রেখার দেশ কিরিবাস। এর অন্তর্গত ফিনিক্স দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ দ্বীপেই মানুষের বসবাস নেই। শিল্পপতি ও মাফিয়া নেতা জ্যাকব ফিনিক্সের অ্যাটল দ্বীপ কিনে সেখানে অবকাশ যাপনের জন্য একটা রিসোর্ট বানিয়েছে। পুরোটা নীল কাঁচ দিয়ে ঘেরা দোতলা রিসোর্টটির আরেকটি রূপ রয়েছে। মাদকের অন্যতম ট্রানজিট হল এই দ্বীপ, যা জ্যাকব এখানে বসে নিয়ন্ত্রণ করে। রিসোর্টটির পাশেই একটা নীল লেগুন এবং তার নিচেই গড়ে উঠেছে বিশাল গবেষণাগারটি।

গবেষণাগারের দায়িত্বে রয়েছে বিজ্ঞানী তুহান। হ্যাঁ, সেই তুহান, যাকে ট্রিনার আবিষ্কৃত ইনোভ্যাশন চুরি করতে দেখা গিয়েছিল সিসিক্যামেরার ফুটেজে। তার হাতেই গড়ে উঠেছে গবেষণাগারটি। তবে তুহান এখানে শুধুই পুতুল, মূল কলকাঠি নাড়ছে জ্যাকব। কিন্তু কী হচ্ছে এখানে? বিজ্ঞানী ট্রিনার ধারণার বাইরে গিয়ে এখানে গবেষণা চালানো হচ্ছে কী করে জিন পরিবর্তন করে মানুষকে অতিমানবে রূপান্তরিত করা যায়। ভবিষ্যতে তাদেরকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য কুকর্মে নিয়োগ করা হবে। সেইসঙ্গে রয়েছে অমরত্ব প্রকল্প।

ভূগর্ভে নির্মিত সাত তলা এই গবেষণাগারটিতে বর্তমানে ১৪৩ জন শিশুকে বন্দী রেখে চলছে গবেষণা। বেশ কিছু অনুন্নত দেশ থেকে সমুদ্রপথে নিয়ে আসা হয়েছে তাদেরকে। শুরুতে ৩০০ জনকে নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে এদের মধ্যে বেঁচে আছে মাত্র ১৪৩ জন।

বিজ্ঞানী তুহানের নেতৃত্বে এখানে কাজ করছে ছয়জন বিজ্ঞানীর একটা টিম। তুহান ছাড়া বাকিরা হলেন নোরা, তরমুদ, সিন্দ্রা, নাতালি ও নিনা। নোরা, সিন্দ্রা ও নাতালির কাজ মাইক্রোজীববিজ্ঞান ও ডিএনএ নিয়ে। তরমুদ ও নিনার দায়িত্ব কম্পিউটার ও সফটওয়্যার বিভাগ। তুহান মেশিনের মূল কাঠামো দেখে। এই ছয় বিজ্ঞানী ছাড়াও এখানে কর্মরত আছে আরো পঁচিশজন। তাদের মূল কাজ বিজ্ঞানীদের সহায়তা করা। তুহান তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে সবাইকে জুটিয়েছিল। তার পিছনে ছিল বড় অঙ্কের অর্থলোভ।

মূলত ইনোভ্যাশন চুরি হবার আগে থেকেই এই গবেষণাগারে তৈরি ছিল তরুণ এই বিজ্ঞানীরা। জ্যাকব এই রিসোর্টটি বানিয়েছিল তার নিষিদ্ধ মাদক দ্রবের ব্যবসার রুট, গুদাম এবং পক্রিয়াজাত করার উদ্দেশে। তবে এটা ছাড়াও জ্যাকবের আরও কিছু মাদক রুট রয়েছে। বর্তমানে এটাকে সে শুধুই গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করছে।

বিজ্ঞানী বা অন্য যারাই এখানে কাজ করছে তাদের দ্বীপের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। কিছু স্বয়ংক্রিয় রোবট এবং জ্যাকবের নিজস্ব মাফিয়া বাহিনী দিয়ে এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে সে।

এখানে আসা প্রায় প্রতিটা বিজ্ঞানীই শুরুতে যতটা আগ্রহ নিয়ে এসেছিল, এখন তাতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নোরা এখন পালাতে পারলেই বাঁচে। এখানে সে এসেছিল এই ভেবে যে বিজ্ঞানের নতুন দ্বারোন্মোচনে সে-ও যুক্ত থাকতে পারবে। কিন্তু ইয়াবুক ও তুহানের অসুস্থ গবেষণা সে আর নিতে পারছে না। একই অবস্থা অন্য বিজ্ঞানীদেরও। কিন্তু কেউই ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। কিছু বলা মানেই স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া! তাই নীরবে কাজ করে যাচ্ছে সবাই।

***

প্রথম দফার গবেষণায় মারা গিয়েছিল একশ তিনটি ছেলে এবং চুয়ান্নটি মেয়েশিশু। তাদের জিন পরিবর্তন করে নিউরন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে কিছু শিশুকে অতিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষে রূপান্তর করা যায়। একটি মেয়েশিশু ছাড়া সবাই মাথার খুলি ফেটে মারা গিয়েছে! অস্বাভাবিকভাবে মাথা বড় হয়েও বেঁচে আছে শিউলি নামের বাংলাদেশ থেকে আনা শিশুটি। কোনো এক অজানা কারণে এখনও তার মাথার খুলি না ভেঙে নমনীয় হয়ে নিউরন বৃদ্ধিতে সহয়তা করছে। সে এখন অনেক উচ্চ তরঙ্গ আদান-প্রদান করতে পারে, যদিও এই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কোনো ধারণা নেই। শিউলি এখনও কাউকে জানায়নি।

এক দল শিশুকে উদ্ভিদের রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেঁচে আছে মাত্র তিনজন। তাদের শরীরের চামড়ায় ক্লোরোফিল, ক্যারোটিন ও জ্যান্থফিলের মিশ্রণে একটি আবরণ তৈরি হয়েছে। আলো থেকে শক্তি নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে তারা। তবে সম্পূর্ণ গ্লুকোজ তৈরি হচ্ছে না এখনও।

গবেষণাগারের সবচেয়ে সফল গবেষণা হল উড়ন্ত মানুষ। ছয়টি শিশুকে নিয়ে করা এই পরীক্ষায় সবগুলো শিশুই সুস্থ আছে। তাদের পিঠে পাখির মতো পাখা গজিয়েছে। জিন পরিবর্তনের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর অপারেশনের মাধম্যে চামড়ার নিচে থাকা পাখাকে অবমুক্ত করা হয়। আস্তে আস্তে সে-পাখাকে নিজেদের আয়ত্তে এনেছে তারা। মঙ্গোলিয়া থেকে আনা ইয়ানিয়া নামের ছেলেটি এরই মধ্যে উড়তে শিখেছে। তার পাখার বয়স আট মাস। উড়ন্ত মানুষ তৈরির প্রথম পরীক্ষাটি করা হয়েছিল তার ওপর।

***

বিজ্ঞানী নোরা তার নিজের বন্দীজীবন এবং বাচ্চাদের কষ্ট দেখে আর সহ্য করতে পারছে না। মনে মনে সে এখান থেকে বের হওয়ার ও সবকিছু জানিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে। কিন্তু চারদিকে সিসিক্যামেরা এবং রোবটের নজরদারি থাকায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না। প্রতিটা মুহূর্তে সে ফাঁক খুঁজে বেড়ায়, যদিও সে জানে এই গবেষণাগারে তেমনটা হবার জো নেই। টয়লেটগুলো পর্যন্ত সিসিক্যামেরার আওতায়। কোথাও এমন একটু জায়গা নেই যেখানে সে তার চিন্তাকে অন্য কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে।

এসব ভাবতে ভাবতেই নোরা রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা তৈরি হওয়া দামিদ নামের শিশুটির ডিএনএ’র কোড রিড করছিল। হঠাৎ টের পেল তার মাথার মধ্যে একটা অস্পষ্ট শব্দ হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেল নোরা। সে বুঝতে পারল, সারাদিন এই বন্দীজীবন থেকে মুক্তির চিন্তা এবং এতগুলো শিশুর মৃত্যু তাকে অসুস্থ করে তুলেছে। শুরুর দিকে হলে সে হয়তো তার অসুস্থতা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করত। এখন প্রাণ হারানোর ভয় রয়েছে। ভয়ঙ্কর এই মুত্যুপুরীতে দিন দিন সবাই রোবট হয়ে যাচ্ছে।

আবার অস্পষ্ট শব্দ। এবার তার নাম। কেউ একজন তার মাথায় ‘নোরা’ ‘নোরা’ বলছে। মনে মনে সে বলল, “কে?”
এবার আবার মাথায় শব্দ হল – “আমি।”
“না, ডিপ্রেশন আমাকে পুরাপুরি পাগল করে দিবে। আমাকে সম্ভবত আত্মহত্যা করতে হবে, এ ছাড়া মুক্তি নেই,” ভাবল সে। এবং ভাবনার মাঝে সে শুনতে পেল, “তুমি ভুল না।”

মাথার ভিতরে যে কথাগুলো নোরা শুনতে পেল, সেটা ইংরেজিতে এবং ভুল ব্যাকরণে। এটা বুঝতেই শিউরে উঠল সে। তাহলে কি অলৌকিক কিছু? হাস্যকর চিন্তা এসে ভর করল তার মনে – এই এক বছরে গবেষণাগারে যে শিশুগুলো মারা গিয়েছে, তারা কি তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছে? তা কীভাবে সম্ভব? এই যুগে বাস করেও আমি আদিম ধর্মান্ধ মানুষের মতো উদ্ভট চিন্তা করছি!

আবার মাথার ভিতরে শব্দ! শব্দটা বলছে, “আমি শিউলি।” বিস্ময়ে নোরার হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গেল ডিএনএ কোড রেকর্ডারটা। এটা কীভাবে সম্ভব! তাদের তথ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষের বিশগুণ নিউরন রয়েছে শিউলির। ফলে তার অনেকগুলো ইন্দ্রিয় কাজ করার কথা। কিন্তু তাই বলে অন্যের সাথে যোগাযোগ! কল্পকাহিনির মতো মনে হল তার কাছে।
“আমি নিজেও জানি না, কিন্তু আমি সবার মনের কথা বুঝতে পারি।” নোরার মাথার ভিতরে বলল শিউলি।
– তুমি কি আমাকে ছাড়া আর অন্য কারোর সাথে যোগাযোগ করেছ?
– না আমি শুধু তোমার সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তবে সবার মনের কথা বুঝার চেষ্টা করছি অনেকদিন ধরে। সবাইকে অবশ্য বুঝতে পারি না। কেউ কেউ অন্য ভাষায় চিন্তা করে। তুমিসহ অল্প কিছু মানুষ ইংরেজিতে ভাবো। আমি অল্প ইংরেজি বুঝতে ও বলতে পারি।

নোরা বুঝতে পারছে না তার কী হচ্ছে। সে নিজেকে প্রশ্ন করল – আমি কি হ্যালোসিনেশনে ভুগছি? তারপরও পুরো ব্যাপারটা বুঝার জন্য মনে মনে কথা চালিয়ে গেল সে। “হ্যাঁ, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি খুবই দুঃখিত। তোমাদের এই অবস্থার জন্য আমি নিজেও দায়ী। নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।”
– আমি জানি। ঠিক সেজন্যই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করেছি।
– তোমার সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে আমি কোনো বড় মানুষের সাথে কথা বলছি!
– আমার নিজের কাছেও মনে হয় আমার বয়স হুট করে অনেক বেড়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে একজন বয়স্ক মানুষের চেয়েও বেশি পরিণত চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে আমার।
– আচ্ছা শিউলি, তুমি কি অনেক দূরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে? পুলিশ বা অন্য কারো সাথে?
– আমি চেষ্টা করেছি, কাছাকাছি দু-তিনটা দ্বীপের মানুষের সাথে। কিন্তু তাদের ভাষা আমি বুঝি না। তারাও আমার ভাষা বুঝতে পারে না। আমি কেবল দুটো ভাষাই জানি। ইংরেজি ও বাংলা। তবে…
– তবে কী, শিউলি?
– গতকাল আমাকে যখন ড্রেসিং করার জন্য ওপরের তলায় নিয়েছিলে তখন আমি আরো দূরের কিছু মানুষদের পেয়েছিলাম। ভাষার সমস্যার জন্য যোগাযোগ করতে পারিনি। তাদেরকে আমার কোনো আদিবাসি গোষ্ঠী বলে মনে হয়েছে।
– শিউলি, তুমি কি বুঝতে পারো কার সাথে যোগাযোগ করছ?
– হ্যাঁ, বুঝতে পারি। যাকে আমি ভাবি তার অনেক কল্পনা আমার মাঝে চলে আসে। তার চেহারা আমি অনুভব করতে পারি।
– তাহলে আমরা পারব। হ্যাঁ, আমরা পারবই। এবং সেটা তোমার দ্বারা। তুমিই পারবে এই মুত্যুপুরী থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে।
– আমি এর মধ্যেই প্রায় সবার চিন্তা বুঝার চেষ্টা করেছি। তরমুদ, সিন্দ্রা ও নাতালির সাথেও যোগাযোগ করব। ওরাও তোমার মতো ভাবে। তবে বেশিরভাগই অন্য ভাষায়। আমি সব কিছু বুঝতে পারি না।

নোরা বিস্মিত হল। ওরাও তাহলে আমার মতো পালানোর পথ খুঁজছে! সে মনের ভাষায় শিউলিকে বলল, “তুমি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করো। আমরা ঠিকই এই নরকপুরী থেকে মুক্ত হতে পারব। আর মনে রেখো, এখানে প্রতিটা শব্দ রেকর্ড হচ্ছে। কোনোভাবে ফাঁস হয়ে গেলে আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে। তোমাদের মুক্তি ও ভালো চায় না এমন কারো সাথে ভুলেও যোগাযোগ করবে না।”
– হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি। অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে তোমাকে জানাব।
নোরা ও শিউলি যখন কল্পনায় একে অপরের সাথে কথা বলে যাচ্ছে, তখন  আরেক ঘরে কথা বলছে জ্যাকব ও ক্ষমতালোভে তার পুতুল হয়ে থাকা তুহান। শুরুতে তুহান নিজে থেকে কোনোকিছু আগ বাড়িয়ে না করলেও এখন সে প্রকল্প নিয়ে জ্যাকবের চেয়েও দ্রুত আগাতে চাচ্ছে।
“আমাদের বেশ কিছু অপারেশন সফলতার মুখ দেখেছে। প্রথম ধাপের কাজ আমাদের শেষ প্রায়। এখন আমাদের দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার পালা,” বলল তুহান। একটু থেমে যোগ করল, “সামনের মাসে দ্বিতীয় ধাপে যাই, কী বলুন?”
জ্যাকব বলল, “তুমি বিজ্ঞানী। তুমিই ভালো বুঝবে। কখন কোনটা করতে হবে? আমার তো শুধু রেজাল্ট দেখা।”

তুহান এবার শিশুগুলোকে কুকুরের জিনের কাছাকাছি কোডের একটা জিন দিতে যাচ্ছে। তার ধারণা এতে সফল হলে বাচ্চাগুলো ভবিষ্যতে তাদের বাইরে গিয়ে নিজে থেকে কিছু করতে পারবে না, প্রভুভক্ত কুকুরে পরিণত হবে। প্রভুর শরীরের ঘ্রাণ আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারবে তারা এবং এই ঘ্রাণ তাদের মস্তিষ্ককে প্রভুর নির্দেশনায় কাজ করতে বাধ্য করবে, এমনকি তাদের আঘাত করার পরও!
“তুমি কি মনে কর এটা সম্ভব?” জানতে চাইল জ্যাকব।
“গবেষণা শেষ না হবার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে আমার ধারণা এটা অবশ্যই সম্ভব। আমাদের গবেষণা যদি সফল হয়, তাহলে আপনি কোনো শিশুকে গুলি করলেও যেটুকু সময় সে বেঁচে থাকবে সেটুকু সময় আপনার জন্য কাজ করে যাবে।”
“বাহ! তারপর?”
“এরপর এদের আরও কিছু শক্তিশালী ক্ষমতা এবং অমরত্বের জিন প্রয়োগ করা হবে। বার্ধক্য হবার জন্য দায়ী কোনো জিন থাকবে না। আবার যেন দ্রুত শরীরে মাংসপেশি প্রতিস্থাপন হয়, এমন জিনও দেয়া হবে। এছাড়া যাতে গুলি লাগলেও রক্তক্ষরণে মারা না যায়, নিজে থেকে গুলি বের হয়ে আসে, উচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রায় সহ্য করার ক্ষমতা-সম্পন্ন কোষ তৈরি হয় … এইসব।”
জ্যাকবের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। “সারা পৃথিবী তো আমাদের হতে যাচ্ছে,” বলল সে।
“এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস, আমরা সফল হতে যাচ্ছি।”
জ্যাকব জানতে চাইল আর নতুন কোনো বাচ্চা মারা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। তুহান বলল, “উদ্ভিদ বাচ্চাদের মাঝে একটি বাচ্চার অবস্থা খারাপের দিকে। ওকে তরল নাইট্রোজেন পুশ করা হয়েছিল। নিতে পারছে না। তবে আমি আশাবাদী।”
“কাজ চালিয়ে যাও। দরকার হলে আরও বাচ্চা আনা যাবে,” বলল জ্যাকব।

***

কুড়ি দিন পরের কথা। এই কুড়ি দিনে অনেক কাজই গুছিয়ে এনেছে শিউলি ও নোরা। এখন নোরার সাথে চোখে চোখে কথা হয় সিন্দ্রা, নাতালি ও তরমুদের। এরা সবাই মুক্তি চায়। তাদের মিথ্যা মোহ কেটে গিয়েছে। অনেক অন্যায় কাজ তারা করেছে। আর নয়। কিন্তু কেউ কারো সাথে সরাসরি কথা বলতে পারছে না। তাদের সব কথা হয় শিউলির মাধ্যমে। এখানকার প্রতিটা শব্দ নজরদারিতে থাকলেও মনোজাগতিক কথা রেকর্ড বা নজরদারি করার ক্ষমতা কারোর নাই। এদিকে দামিথ ও ইয়ানিয়া অনেক বেশি সুস্থ এবং ক্ষমতা আয়ত্তে এনেছে। ইয়ানিয়া কিছুটা উড়তে পারে এবং দামিথ তার গায়ের রংকে জেলিফিশের মতো স্বচ্ছ করে ফেলতে পারে। খুব ভালভাবে না তাকালে তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না তখন। শিউলি এদের সবার সাথেই যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নোরা ও শিউলির মধ্যে কল্পনায় কথা হচ্ছে। নোরা বলল, “তুমি কি জানো আমাদের হাতে আর সময় নেই।”
– হ্যাঁ, জানি। আর তিনদিন পরই আমাদের আবার জিন পরিবর্তন করা হবে।
– আমরা যা করতে যাচ্ছি, তা খুবই ভয়ানক। এই কারণে তোমাদের মৃত্যু হতে পারে, এটা জানো তো?
– আমাদের হাতে এছাড়া আর কোনো পথ নেই, নোরা। আমি হয়তো মারা যাব কিন্তু বেঁচে যাবে পৃথিবী। বেঁচে যাবে এখানকার অন্যান্য শিশুগুলো।
– তাহলে আগামীকালই, কী বলো?
– হ্যাঁ, আমি তৈরি।
– কাল তোমাকে যখন ড্রেসিংয়ের জন্য ওপরে নেয়া হবে তখন। ইয়ানিয়া কি তৈরি?
– আমি ইয়ানিয়ার সাথে কথা বলেছি। সে বলেছে, সে পৃথিবীর ভালোর জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত।
– আর দামিথ? জানতে চাইল নোরা।
– হ্যাঁ, সেও রেডি। মূল লাইট চেঞ্জের দায়িত্বে আছে নাতালি। সিসিক্যামেরা হ্যাং করবে তরমুদ। সিন্দ্রা অন্যদের ব্যস্ত রাখার কাজ করবে।
– খুব ভালো। তরমুদকে নিয়ে টেনশন নাই। সফটওয়্যার নিয়েই কাজ ওর। ভয়টা নাতালি ও সিন্দ্রাকে নিয়ে। আমার কাজ আমি যেভাবেই হোক করব।
– এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই, নোরা। তোমাদের শেখানো তেত্রিশ ভাষার বার্তাটি আমার কাছে আছে।

***

শনিবার সকাল নয়টা। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নোরা। অস্ত্র হাতে এক রোবট এবং একজন সেবাকর্মী শিউলিকে ওপরের তলায় নিয়ে যাচ্ছে ডেসিংয়ের জন্য। জ্যাকব এবং তুহানের কাছে বিশেষ সমস্যার কথা জানাতে গিয়েছে সিন্দ্রা। হঠাৎ ঘরের আলোগুলো নীলচে রং ধারণ করতেই দামিথ তার গায়ের রং বর্ণহীন করে ফেলল। গায়ের সব কাপড় খুলে আগেই নিজেকে তৈরি করে রেখেছিল সে। দ্রুততার সাথে দামিথের রুমের দরজা এবং ইয়ানিয়ার দরজার লক খুলে দেয় নোরা। সে বুঝতে পারছে না, যা ঘটছে সেটা কি সত্যি নাকি সবই তার কল্পনা। না, এ কিছুতেই কল্পনা হতে পারে না। যদি তাই হত, তাহলে সিন্দ্রা কীভাবে হুট করে আজই তিহান ও জ্যাকবের সাথে মিটিং ডেকে বসল? আর তরমুদেরই বা হঠাৎ করে কী কাজ পড়ল মেইন সার্ভারে?

রংহীন দামিথ দরজা খুলতেই রোবটের চোখ ফাঁকি দিয়ে গবেষণাগারের মেইন দরজার লকের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ইয়ানিয়া বের হয়েই উড়তে উড়তে শক্ত হাতে শিউলিকে নিয়ে মেইন গেইটের দিকে ধাবিত হয়। সেখান থেকে একটা সুরঙ্গ মিলিত হয়েছে রিসোর্টের সাথে। ইয়ানিয়াকে দরজা খুলে দেয় দামিথ এবং পাহারাদার রোবটকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

সবদিকে লালবাতি জ্বলে ওঠে। রোবটের গুলি লাগে দামিথের শরীরে এবং শিউলির পায়ে। তবুও থামে না দামিথ; শিউলি ও ইয়ানিয়াকে বের হতে সাহায্য করে। তারা রিসর্টের জানালা দিয়ে বের হয়ে মুক্ত আকাশে চলে যায়। বাইরে পাহারারত কিছু নিরাপত্তাকর্মী ওদের দিকে গুলি ছোড়ে। গুলিতে আহত ইয়ানিয়া তবুও উড়তে থাকে। শিউলি তাকে বলতে থাকে – আরও ওপরে, আরও। নোরা, তরমুদ, নাতালি ও সিন্দ্রার শিখানো তেত্রিশ ভাষায় সে যতদূর পারে সবাইকে বার্তা পাঠাতে থাকে, কিরিবাসের প্রতিটি জায়গায়। প্রথমে যে যার মতো নিজের কল্পনা মনে করলেও কিরিবাসের মানুষ বুঝে ফেলে কেউ একজন সত্যিই বিপদের কথা বলে তাদের বার্তা দিচ্ছে; তাদেরকে জ্যাকবের দ্বীপের ভয়ঙ্কর গবেষণার কথা বলছে।

আরো কিছু সময় পরে আকাশ থেকে দ্বীপে পড়ে দুটি শিশুর মৃত্যুদেহ – ইয়ানিয়া ও শিউলি। প্রধান ফটকের কাছেই মারা যায় দামিথ। তরমুদ, সিন্ধা, নাতালি ও নোরাকে মেরে ফেলে নিরাপত্তারক্ষী রোবট।

জ্যাকব ও তুহান সিসিক্যামেরার রেকর্ড দেখে বুঝে ফেলে পরিকল্পনার কথা। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে এরই মধ্যে সফল হয়ে গিয়েছে মারা যাওয়া বিজ্ঞানী ও শিশুরা। দ্বীপে পড়ে থাকা ইয়ানিয়া ও শিউলির মৃতদেহ দেখে প্রথমে আশ্বস্ত হয়েছিল তারা, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চূর্ণ হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। আশপাশের বেশ কিছু দেশ থেকে আকাশ ও নৌপথে চলে আসে পুলিশ ও নৌবাহিনী।

আইন করে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ইনোভ্যাশন, আর তাতে প্রথম স্বাক্ষরদাতা হিসেবে স্বাক্ষর করেন নোবেল পুরস্কার-প্রাপ্ত বিজ্ঞানী ট্রিনা।

……….
পরিবেশনাঃ খাপছাড়া আড্ডা

3 Comments

Leave a Comment