ধর্ম সমালোচনাপ্রবন্ধ

ইসলামঃ একটি সংকলিত ধর্ম

বর্তমান পৃথিবীর সব ধর্মগুলোই তাদের পূর্ব ধর্মগুলো থেকে কিছু অংশ নিজেদের ধর্মে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেসব ধর্ম থেকে ধর্মীয় আচারগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার অনেকগুলোই আজ মৃত। কিন্তু ইসলামের মত এতবেশি সংকলন বোধ হয় অন্য কোন ধর্মই করেনি। জিহাদকে (তলোয়ারে মুখে ধর্মপ্রচার) বাদ দিলে ইসলামের নিজস্বতা বলে কিছুই নেই। কোরান নিজেই ইসলামে ইহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাবের কথা স্বীকার করে; এছাড়াও পৌত্তলিক, জরথ্রুষ্টবাদ, সাবিয়ান এবং ইসলামপূর্ব অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস ও শাস্ত্রীয় আচার ইসলাম ধর্মে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পুরো ধর্মটাই তৎকালীন আরবের এবং মোহাম্মদ যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ধর্মগুলোর একটি সংকলন। কোনটা একেবারেই অবিকৃতরূপে এবং কোনটা সামান্য পরিবর্তিত রূপে। ইসলামের কাবাঘর থেকে শুরু করে নামাজ, রোজা, যাকাত, হ্জ্ব ইত্যাদি সবগুলোই তখনকার আরবের বিভিন্ন ধর্ম থেকেই সংকলিত করা। এগুলো বর্তমান ইসলামের অনুসারীরা অনেকেই যেমন জানে না, তেমনি এগুলোকে অস্বীকার করার উপায়ও তাদের নেই। কারণ যেসব গোষ্ঠীদের নিকট হতে এগুলো গ্রহণ করা হয়েছে মোহাম্মদের নবুয়তীর প্রথম দিককার আয়াতগুলোয় তাদের প্রশংসাও করা হয়েছে, কোরানই এর সাক্ষী হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

ইহুদী প্রভাবঃ
ইসলামের পূর্বেও আরবে যে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো ছিল সেগুলো হল- ইহুদী, খ্রীষ্টান ও হানিফী সম্প্রদায়। ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মের প্রভাব ইসলামে সবচেয়ে বেশি। সম্ভবত এ দুটো ধর্মের প্রভাব মক্কার বহুঈশ্বরবাদীদের মাঝে একত্ববাদ প্রচারের লক্ষ্যে তাঁকে নিজস্ব নবুয়তীর মিশন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়া যাবার পথে প্যালেস্টাইনে ইহুদীদের সাথে তাঁর পরিচিত হওয়া স্বাভাবিক। মক্কাতে আবদাইস বিন সালোম নামের এক ইহুদী রাব্বির সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, যার কাছ থেকে মোহাম্মদ ইহুদি ধর্ম সম্পর্কে বেশ জ্ঞান লাভ করেন।উক্ত ইহুদী পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে সালাম নাম গ্রহণ করেন।

ইসলামের রোজা রাখা, সুন্নত দেয়া (মুসলমানি) এবং মদীনায় হিজরতের পর জেরুজালেম মুখী হয়ে নামাজ আদায় (পরবর্তীতে আবার কাবামুখী হয়) করাসহ অনেককিছুই ইহুদীদের অনুকরণের মাধ্যমে তাদেরকে সন্তুষ্ট করে ইসলামে দীক্ষিত করার প্রচেষ্টা বৈ কিছু নয়, যা ইসলামে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। কোরাণের বেশ কিছু আয়াতও রয়েছে ইহুদীদের সমর্থনে-
“এবং নিশ্চয়ই আমরা বনি ইসলাইলের সন্তানদেরকে (ইহুদিদেরকে) ধর্মগ্রন্থ (তাউরাত) এবং জ্ঞান ও দৈববানী প্রদান করেছি, তাদেরকে যা কিছু ভাল তা দিয়েছি এবং তাদেরকে সকল জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি” (কোরান ৪৫:১৬); “এতে (তাউরাত) ঈশ্বরের পথ নিদের্শ ও (জ্ঞানের) আলো রয়েছে” (কোরান ৫:৪৪); “এটা ঈশ্বরের আশির্বাদ ও সঠিকপন্থিদের পথ নির্দেশক” (কোরান ৬:১৫৩-১৫৪)

মোহাম্মদ ইহুদীদের দাতব্য প্রথা যাকাত নকল করেন এবং একে ইসলামের পাঁচস্তম্ভের একটির মর্যাদা দেন। ইহুদীদের অনুকরণে শুকরের মাংস হারাম করেন, প্রবর্তন করেন ওজু এবং ইহুদীদের সাবাথ পালনের অনুকরণে শনিবারকে (পরে শুক্রবারে পরিবর্তিত) সাপ্তাহিক নামাজের দিন ধার্য করেন। ইহুদী প্রথার অনুসরণে আশুরার উপবাস বা রোজা চালু করেন, যাকে পরবর্তীতে রমজান মাসের রোজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইহুদীদের অনুসরণে মুসলমানদের জন্য লিঙ্গের চামড়া কর্তন চালু করা হয়। এছাড়া পূর্বেই ইহুদীদের ব্যবহৃত নবি শব্দটি ব্যবহার করে নিজেকে নবি বলে আখ্যায়িত করেন।

ইহুদীদের ইসলামে আকৃষ্ট করতে নিজের ধর্মে এতকিছু প্রবর্তন করলেও ইহুদীরা তার ধর্মে আকৃষ্ট না হওয়ায় পরবর্তীতে নবি মোহাম্মদ ইহুদীদের প্রতি রুষ্ট হন এবং তাঁর আল্লাহ একের পর এক ইহুদী বিদ্বেষী আয়াত প্রদান করতে থাকে এবং নবি আরব থেকে ইহুদীদের সমূলে উৎপাটনের অঙ্গীকার করেন এবং তাঁর জীবদ্দশাতেই তাদের প্রায় সমূলে বিনাশ করেন। তলোয়ারের মুখে তাদের ইসলামগ্রহণে বাধ্য করা হয়, তুচ্ছ কারণে অথবা কোন কারণ ছাড়াই (ইসলাম গ্রহণে অনিচ্ছাকে যদি কোন কারণ ধরা না হয়) তাদের সকল পুরুষদের তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করা হয়, নারীদের যৌনদাসী বানানো হয়, নারী ও শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয় অথবা নিজেদের দাস হিসেবে রেখে দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে ‘ইসলামের ইতিহাস-জানা ও অজানার পার্থক্য” শিরোণামে লেখা হবে।

খ্রিষ্টান প্রভাবঃ
পূর্বের অনেক দার্শনিকই মনে করতেন যে- ‘ইসলাম খ্রিষ্টান ধর্মেরই একটি ভ্রান্ত রূপ’। রেনেসাঁর প্রথমার্ধে ইউরোপে ইসলামকে মনে করা হতো- ‘ইসলাম একটি ভ্রষ্ট ও অস্পষ্ট দানবীয় ধর্ম’। যাই হোক, আমরা দেখি মোহাম্মদের সাথে কিভাবে খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে পরিচয় হয়েছিল। চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়া গমনকালে মোহাম্মদের সাথে বাহিরা নামক একজন খ্রিষ্টানের সাক্ষাত হয়। বাহিরা মোহাম্মদকে খ্রিষ্টান ধর্ম, আচার ও প্রথা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন। ধর্মীয় আলোচনায় মোহাম্মদের অপূর্ব মনোসংযোগ দেখে বাহিরাই নাকি মোহাম্মদকে বলেছিলেন যে তাঁর মধ্যে নাকি নবীত্বের ছাপ দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া খাদিজার চাচাত ভাই ওয়ারকার সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওয়ারকা খ্রিষ্টান ছিলেন, বলা যায় খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কে তার বেশ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি বাইবেলের গসপেলের কিছু অংশ আরবীতে অনুবাদও করেছিলেন। এই ওয়ারকাই নবিকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে তিনি জিব্রাইলের মাধ্যমে ঐশিবাণী পেয়েছেন। তিনিই মোহাম্মদকে নবিত্বের মিশন শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করেন। খাদিজার এক দাস জায়েদ বিন হারিথা, মোহাম্মদ যাকে পালক পুত্র গ্রহণ করেছিলেন, তিনিও সিরিয়ার একজন খ্রিষ্টান ছিলেন।

এছাড়া নেস্টোরিয়ান মংক আদ্দাস, যিনি নবিদের কাছে ঐশিবাণী আনয়নে জিব্রাইলের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। জনৈক তামিম আল দারি কেয়ামতের দিন বিশ্ব ধ্বংস ও পূনরুজ্জীবন সম্পর্কে মোহাম্মদকে ধারণা দেন। তাছাড়া কাইস, জাবরা, আবু তাখিবা, আবু রোকাইয়া (পরে যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন), ইয়ামামার জনৈক রহমান (যাকে অনেকেই মুসাইলিমা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং মোহাম্মদের মৃত্যুর পর নবীত্ব দাবি করেন) সহ অনেক খ্রিষ্টানের সাথেই পরিচিত হন যাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা বা জীবিকার প্রয়োজনে মক্কা বাস করতেন।

যিশুকে উদ্দেশ করে কোরানে বলা হয়-‘তোমাকে যারা অনুসরণ করে তাদেরকে আমি শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের চেয়ে অধিকতর মর্যাদাবান করব” (কোরান ৩:৫৫)।“খ্রিষ্টানরা অহংকারমুক্ত ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত বন্ধু ভাবাপন্ন” (কোরান ৫:৮২)। এছাড়া ১৯:২১, ৫৭:২৭, ৯:১১১, ৫:৪৬, ৩:৩৭, ৬৬:১২, ৫:৫৭, ১৯:২১, ২১:৯১, ৫:৬৯ সহ অনেক আয়াতেই খ্রিষ্টান ধর্মের গসপেল, মাতা মেরি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশংসাবাক্য রয়েছে। কাবাঘর থেকে সকল মূর্তি ধবংস করলেও যিশুকোলে মেরির প্রতিচ্ছবিটির উপর নিজের হাত রেখে নবি তা রক্ষা করেন।

কোরানে বাইবেল সদৃশ পংক্তি: (বাইবেলের লাইনগুলো দেয়া হল না, শুধু মিলের কারণটা উদৃত হলো।)
১। ন্যায়বানরাই পৃথিবীর অধিকারী হবে। ২১:১০৫ (একেবারেই অবিকৃত)
২। স্বর্গের দুয়ার খুলবে না তাদের জন্য যারা আমাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দেয়; সূচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ তাদের স্বর্গ গমনের চেয়ে সহজতর হবে। ৭:৪০ (সূচের ছিদ্রপথের উপমা)
৩। সেদিন আমরা (আল্লাহ)আসমান জমিনকে সংকুচিত করব একটা কাগজের বেলুনাকারে। ২১:১০৪ (কাগজের বেলুনাকার উপমা)
৪। তিন ব্যক্তি গোপনে একত্রিত হতে পারে না, কারণ ঈশ্বর সেখানে হন চতুর্থ (ব্যক্তি)। ৫৮:৭ (ঈশ্বরের উপস্থিতি)
৫। সমুদ্রের সব পানিও যদি কালি হতো, তাও ঈশ্বরের বাণী লিপিবদ্ধ করতে অপর্যাপ্ত হতো। ১৮:১০৯ (বাইবেল:যিশু আরো অনেক কিছুই করে গেছেন, তার সবকিছু লিখা হলে আমার ধারণা সমগ্র পৃথিবীও সে বইটি ধারণ করতে পারবে না)

ইসলাম এবং মুসলিম শব্দটি সেমেটিক স্লম (slm -ঈশ্বরের কাছে নত হওয়া) শব্দ থেকে, কোরান শব্দটি সিরীয় শব্দ কেরানা (পবিত্র গ্রন্থ পাঠ) থেকে, সূরা শব্দটি খ্রিষ্টধর্মে ব্যবহৃত আরামাইক শব্দ সুতরা (ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষ)…….ইত্যাদি

খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে এতকিছু নেয়ার পরও, কোরানে খ্রিষ্টানদের এত প্রশংসার পরও পরবর্তীতে নবি তাদের প্রতি রুষ্ট হন এবং তার আল্লাহ পরবর্তীতে ইহুদিবিরোধী আয়াতের মতই খ্রিষ্টানবিরোধী আয়াত নাজিল করা শুরু করেন। মৃত্যু পূর্ববর্তী মোহাম্মদের খ্রিষ্টানবিদ্বেষ এতই চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে মৃত্যুশয্যায় কাতর মোহাম্মদ তাঁর দুই স্ত্রী উম্মে সালমা ও উম্মে হাবিবার (দুজনই একসময় সিরিয়ায় নির্বাসিত ছিলেন) মুখে আবিসিনিয়ার সুন্দর ক্যাথেড্রাল/গির্জা ও তার দেয়ালের বিস্ময়কর ছবির কথা শুনে ক্রোধোম্মত্ত চিৎকার দেন- “হে প্রভু! ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধ্বংস করো। প্রভুর ক্রোধ তাদের উপর প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠুক। সমগ্র আরব ভূখণ্ডে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম না থাকুক।“ নবির এ অন্তিম ইচ্ছা তাঁর উত্তরাধিকারীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন আরব ভূখণ্ড থেকে সকল খ্রিষ্টান ও ইহুদির বিতাড়নের মাধ্যমে।

খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীদের প্রভাবঃ
খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীদের দ্বারা মোহাম্মদ বেশ আকৃষ্ট হয়েছিলেন, বিশেষ করে সিরিয়া যাবার পথে তাঁদের আপ্যায়নে মোহাম্মদ খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। বাহিরার পরিচয় আগেই দিয়েছি। কোরানে তিনি তাঁদের জীবনধারার স্বীকৃতি দেন এভাবে:
“ভাল কাজে অর্থ ব্যয় করো; তোমাদের পিতামাতার, পরিবারের, এতিম শিশুদের, পথচারীদের ও অভাবীদের সাহায্যার্থে” (২:১৫ আরও ৪:৩৬)

যৌনতা বর্জনকারী খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীরা দিনে বেশ কয়েকবার প্রার্থনা করতেন। তাদের প্রার্থনার ভঙ্গি ছিল: দুই হাতএকত্র করে দাঁড়ানো, আনত হওয়া, হাঁটুতে ভর দিয়ে নত হওয়া ও গোড়ালির উপর বসা। খ্রিষ্টান ভিক্ষুরা শেষ রাত্রির দিকে প্রার্থনায় রত হতেন এ বিশ্বাসে যে, ‘ঘুমের চেয়ে প্রার্থনা ভাল।‘ এদেরকে প্রশংসাসূচক কোরাণের আয়াত-“ধর্মগ্রন্থের অনুসারীদের মধ্যে (খ্রিষ্টান) একটা সাধু বা ন্যায়পরায়ন দল রয়েছে; তারা রাত্রিকালে আল্লাহর বাণী আবৃত্তি করে ও (ঈশ্বরকে) ভক্তি করে, ভাল কাজে নিযুক্ত ও খারাপ কাজে থেকে বিরত হয়; তারা ভাল কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পরস্পরের সাথে হাত মেলায়; তারা ভালদের মধ্যে” (কোরান ৩:১১৩-১১৪)। পরে অবশ্য তাদের নিন্দা করেন- “সন্ন্যাসবাদ ঈশ্বর নিদের্শিত নয়, খ্রিষ্টানদের উদ্ভাবন মাত্র (কোরান ৫৭:২৭)।

পৌত্তলিকদের প্রভাবঃ
বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন দেবতার মূর্তি থাকলেও কাবাঘরটি মূলত পৌত্তলিকদের নিয়ন্ত্রাধীন উপাসনাঘর ছিল, নবুয়ত প্রাপ্তির পরপরই যেটিকে মোহাম্মদ তাঁর আল্লাহর ঘর হিসেবে দাবি করেন এবং মক্কা বিজয়ের পর এটিকেই তার উপাসনালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মক্কায় বহুঈশ্বরবাদীদের মধ্যে বড় হওয়া মোহাম্মদকে পৌত্তলিকদের অনেক আচারই প্রভাবিত করেছিল। হ্জ্ব, ওমরাহ ছিল পৌত্তলিক বহুঈশ্বরবাদী তীর্থযাত্রিদের ধর্মীয় আচার যা তিনি সামান্য পরিবর্তন করে ইসলামে অঙ্গীভূত করেন। হজ্বের ক্ষেত্রে মোহাম্মদ শুধু এটুকু পরিবর্তন করেছেন যে, এখন কোরবানী দেয়া হয় অদৃশ্য আল্লাহর উদ্দেশে যা পৌত্তলিকরা উৎসর্গ করতো মূর্তিদেবদেবীর উদ্দেশে। ইসলামের ‘আল্লাহ’ শব্দটিও কাবার প্রধান দেবী আল-লাত থেকেই নেয়া হয়েছে। আমরা সবাই জানি যে মোহাম্মদ পৌত্তলিকতাবিরোধী ছিলেন। কিন্তু কাবার প্রধান তিন দেবী আল-লাত, আল-উজ্জা ও আল-মানাতকে পূজার যোগ্য বলে কোরানের আয়াত নাজিল হয় ৬১৬ সালে যা পরবর্তীতে Satanic Verses/শয়তানের আয়াত (জিব্রাইল নয়, শয়তান আয়াত দিয়েছিল)বলে বাতিল করা হয় এবং তা বাতিলের জন্য নতুন আয়াত নাজিল হয়।

জরথ্রুষ্টবাদের প্রভাবঃ
সালমান নামক একজন জরথ্রুষ্টবাদীর (যিনি প্রথমে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরে ইসলাম গ্রহণ করেন) কাছ থেকে মোহাম্মদ জরথ্রুষ্টবাদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। খন্দকের যুদ্ধে সালমান ফার্সিই পরিখা/খন্দক খোড়ার পরিকল্পনা বাতলে দিয়ে কুরাইশদের আক্রমণ থেকে মোহাম্মদ ও তার অনুসারীদেরকে রক্ষায় সাহায্য করেন। জরথ্রুষ্টবাদের বেহেশত ও দোজখের ধারণা, শয়তানের ধারণা, পুলসিরাতের ধারণা ও মেরাজের কাহিনী ইসলামে সংযোজন করা হয়।

মনিবাদের প্রভাবঃ
পারস্যে প্রচলিত খ্রিষ্ট, জরথ্রুষ্টবাদ ও বৌদ্ধ ধারণার সংমিশ্রণে সৃষ্ট একটি ধর্ম হল মনিবাদ যা মেসোপটেমিয়ায় প্রসার লাভ করে। মনি দাবি করতেন তিনিই শেষ নবি এবং যিশু ক্রুশবিদ্ধ হননি, তার পরিবর্তে অন্য একজন ক্রুশবিদ্ধ হয়। মোহাম্মদের প্রচারিত ইসলামেও এ ধারণাগুলো ভিত্তি লাভ করে।

নেস্টোরিয়ান প্রভাবঃ
নেস্টোরিয়ানরা ছিল যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ছবি প্রদর্শনের বিরোধী। ইসলামেও নবির ছবি তথা জীবন্ত প্রাণির ছবি অংকন নিষিদ্ধ।

অন্যান্য ধর্মের প্রভাবঃ
এছাড়া হানিফী সম্প্রদায়ের একেশ্বরবাদী ধারণা মোহাম্মদকে প্রভাবিত করে। তিনি জায়েদ ইবনে আমর সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি জান্নাতগামীদের একজন। আমি তাকে সেখানে দেখেছি।“

========================= ==========

বিদ্রঃ কোরানের আয়াত ভিন্ন এখানে অন্য কোন রেফারেন্স দেয়া হয়নি। লেখাটি এম এ খান রচিত ব-দ্বীপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গবেষণাধর্মী বই- “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার” বইটির ৩য় অধ্যায় (নবি মোহাম্মদের জীবন ও জিহাদের জন্ম)-এর কিছু অংশের সংক্ষিপ্ত রূপ। এই লেখায় উল্লেখিত প্রায় সব লাইনগুলোর রেফারেন্স পাবেন মূল বইটিতে।

4 Comments

  1. নাহিদ
    • mizan hasan hasan
    • নূরুল ইসলাম

Leave a Comment